মহসিন হোসাইন: চাঁদপুরে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৮নভেম্বর (সোমবার) চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয় সম্মেলন কক্ষে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনার প্রধান অতিথি চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন- আপনাদেরকে এখনানে ডেকে নিয়ে আসার মূল কারণ হলো বর্তমানে এইচ আইভি রোগের যে একটা বিষয় সে বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আপনাদের জন্য কি করতে পারি সে বিষয়েও জানতে চাওয়া, আপনাদের জন্য যথাযথ ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায় কিভাবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা।
এসময় তিনি বলেন, আপনাদের সাথে লোকজন ছবি উঠাতে চায়, রাস্তাঘাটে হেনস্তা করাসহ, বিভিন্ন ভাবে সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে আপনারা অসহায় অবস্থায় আছেন। এই বিষয়ে সহায়তা করতে পারি কিভাবে সেটা জানতে চান তিনি।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমি চেষ্টা করবো আপনাদের জন্য ভালো কিছু করে দেওয়ার জন্য। আপনাদের জীবনটা অনেক কষ্টের। আবার আপনারা যাকে গুরু মানেন তিনিও আপনাদের উপর অনেক অত্যাচার করেন। সেটাও আমি জানি।
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আপনাদের জন্য কিছু করে দিবো। আপনারা বসেন, মোট সদস্য কতোজন ভালোভাবে জেনেশুনে একটা সমাধান দিবো।আপনারাও মান সম্মান নিয়ে কাজ করেন এটা আমি চাই। আমি আপনাদেরকে নিয়ে কাজ করবো যদি আপনাদের আগ্রহ থাকে।
আমি চাই আপনাদেরকে একটা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে দিতে, খাদ্য সহায়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দিতে চাই। তবে আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং আমাকে সহযোগিতা করতে হবে। আমি চাই যাদের আগ্রহ আছে, তারা আসেন, আর যাদের আগ্রহ নেই তারা তাদের মতো থাকুক। আমিও চাইনা আপনার রাস্তাঘাটে মানুষের কাছে হাত পাতেন। স্বাভাবিক জীবন যাপন করার জন্য আপনাদের একটা কর্মের ব্যাবস্থা করে দিতে চাই আমি।
এসময় থার্ড জেন্ডার তামান্না তাদের পারিবারিক, সামাজিক বিভিন্ন মামলা মোকদ্দমা ও সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে কিভাবে উত্তীর্ণ হওয়া যায় সে বিষয়ে তারা জেলা প্রশাসকের নিকট তুলে ধরেন। এছাড়াও বিভিন্নভাবে তারা তাদের গুরুদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে চান না বলে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। তারা অনেকেই আছেন যারা কিনা শিক্ষিত। তাই তারা তাদের শিক্ষাটাকে কাজে লাগাতে চান বলে জেলা প্রশাসক কে অবহিত করেন।
এসময় তারা বলেন, তাদের গুরু মৌসুমীর কাছে যদি একক দায়িত্ব দেওয়া হয় সকলের বিষয়ে তাহলে তারা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। তারা কারো দায়বদ্ধতায় থাকতে চান না। তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে সমাজে আরো ভালো ভুমিকা রাখার আহ্বান জানান।
কিন্তু তারা তেমন ভালো কিছু করতে পারছেন না। যেহেতু তারা লেখাপড়া জানেন, সেহেতু তাদের দাবি হলো তারাও চায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল এবং মাদ্রাসা সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি বা কাজের ব্যাবস্থা করে দিলে তারা আর ভিক্ষা করতে হবেনা।তারা এই ভিক্ষা থেকে মুক্তি চায়। তারা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাছে এই বিষয়গুলো নিয়ে দাবি করেন।
তারা আরো জানান, চাঁদপুরে পূর্বে ১২০জনের মতো হিজড়া থাকলেও এখন বর্তমানে মোট ৫১জন তৃতীয় লিঙ্গ সনাক্ত করা হয়েছে। যেকোনো সময় যেকোনো ট্রেনিং বা যেকোনো দরকারে ডাক দিলে তাদেরকে পাওয়া যাবে।
বন্ধু সোস্যাল ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ও বাঁধন হিজড়া সংঘ কনসোডিয়াম এর উদ্যোগে এসময় উপস্থিত ছিলেন-ঢাকার প্রতিনিধি-ডেপুটি ম্যানেজার মনিটরিং এন্ড ইভেলুয়েশন মোঃ আলমগীর কবির, ডি.আই.সি ম্যানেজার আব্দুল মোতালেব ভূঁইয়া, বি.এইচ.আর.বি এমদাদুল হক মিলন, মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট আব্দুল আল মামুন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- চাঁদপুর হিজড়া দলের ফারিয়া, সাগরিকা, শিমলা , পুতুলী, ফারাহ সহ অন্যান্যরা।