কাজীর যোগসাজশে ২ লাখ টাকার কাবিন হয় ১০ লাখ!
স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর হাইমচর উপজেলায় এক ভয়ঙ্কর নারীর প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন তিন যুবক। প্রথমে প্রেম নানা রকম কু-কৌশল অবলম্বনে বিয়ে মোটা অংকের টাকায় কাবিন। ৫/৬ মাস পরেই ছাড়াছাড়ি। কাবিন নামক টাকার জন্য মামলা দিয়ে পাষানোর অভিযোগ রয়েছে তিন যুবককে।
মায়ের পরোচনায় এমন কুকর্ম করছেন সুন্দরী মিতু নামক নারী। তার প্রতারনায় ৩ যুবককে কোর্টের বারান্দায় দৌড়াতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এ নারীর ফাঁদে আটকা পড়েছেন, পুলিশ সদস্য, প্রবাসী ও ব্যবসায়ী। অভিযোগ উঠে যে কাজীর যোগসাজশে ২ লাখ টাকার দেনমোহর হয়ে যায় ১০ লাখ টাকা। এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য শাহাদাত হোসেন। ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য শাহাদাত জানান, কালাচকিদার মোড় এলাকার মৃত মুনচুর বেপারীর মেয়ে মিতু আক্তারের সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিচয় হয়। কথা বলার এক পর্যায় মিতু শাহাদাতকে তাদের বাসায় ডেকে নিয়ে যায়।
বাসায় যাওয়ার কিছুক্ষন পর তাদের প্ল্যান মত এলাকার কিছু লোক দিয়ে তাকে আটক করে বিয়ে করতে বাধ্য করে। ২ লাখ টাকা কাবিনে তাদের বিয়ে হয়। পরবর্তী সময়ে সে বিভিন্ন ছেলেদের সাথে মিলামেশা করতে থাকে। এ বিষয় নিয়ে তার সাথে বিরোধ সৃস্টি হয়।
এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত হয়। কাজী অফিস থেকে কাবিননামা উঠিয়ে দেখেন সেখানে ১০ লাখ টাকা কাবিন লেখা রয়েছে। এ বিষয়ে কাজী লিটনের কাছে শাহাদাত এত টাকা কাবিন হলো কি করে জানতে চাইলে তিনি এর কোন সঠিক উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান। তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি হুমায়ুন প্রধানীয়ার সাথে কথা বলতে বলেন।
মিতু তাকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মিতু চাঁদপুর পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দেন। এরপর নারীও শিশু নির্যাতন আদালাতে শাহাদাতের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। চাঁদপুর আদালতে মিতু আক্তারের দায়ের করা মামলায় তদন্ত করার জন্য উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিনকে দায়িত্ব দেয় আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে গত ১৭ মার্চ তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেন। রিপোর্টে তিনি মামলার অভিযোগ সত্যতা পাননি বলে আদালতকে জানান। শাহাদাতের সাথে প্রতারণা করে ২ লাখ টাকার কাবিন ১০ লাখ টাকা করায় কাজী আবুল কালাম আজাদ লিটনের প্রতারণার প্রতিকার চেয়ে জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন শাহাদাত হোসেন।
ঐ অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, মিতু ও তার মা ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ২ লাখ টাকার কাবিন ১০ লাখ টাকায় নিকাহ রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করেন। তিনি কাজী লিটনের সাথে এ বিষয়ে আলাপ করলে কাজী তাকে জানান, ১০ লাখ টাকা কাবিন ২ লাখ করা যাবে তবে টাকা বেশি দিতে হবে। শাহাদাতের অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারকে তদন্ত করার দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
শাহাদাত হোসেন আরও জানান, এ নারীর প্রতারণার শিকার গন্ডামারা গ্রামের ওমর ফারুক পলাশ নামের আরেক যুবক। মিতুর সাথে আসা যাওয়ার পথে পরিচয় হয় পলাশের। পরবর্তীতে তাকেও বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন মিতু। সে বিয়ে করতে রাজী না থাকায় তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠায় এ নারী । মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পলাশকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয় মিতু। মা এবং মেয়ে দুজন মিলে মানুষজনকে প্রেমের ফাঁদে পেলে টাকা আত্মসাৎ করায় লিপ্ত রয়েছে।
মোটা অংকের টাকা পেলে হয়রানী থেকে মুক্ত, টাকা না পেলেই মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। অভিযুক্ত নারী মিতুর এ লোভ লালসা ও প্রতারণা থেকে বাদ যায়নি তার প্রথম স্বামী তফিক। তার বিরুদ্ধেও করেছেন ২ টি মামলা। তিনি একজন কাতার প্রবাসী।
তিনি জানান, ২০১৩ সালে পারিবারিক ভাবে তার সাথে মিতু আক্তারের বিবাহ হয়। বিবাহের পর তার ঘরে একটি কন্যা সন্তান জম্ম নেয়। বিবাহের পর সে প্রবাসে চলে যায়। মিতু বিভিন্ন ছেলেদের সাথে আড্ডা দিত, সে সারাদিন বাহিরে থাকতো। যা আমার পরিবার মেনে নেয় নি। তার চরিত্রে সমস্যা ছিল। ২০২১ সালে আমি বাড়িতে আসলে আমার বাসা থেকে পাসপোর্ট, চেক বই, নিয়ে যায় মিতু। আমি তা জানতাম না। বিদেশ যাওয়ার জন্য আমি থানায় পাসপোর্ট হারিয়েছে জিডি করে পুনরায় আরেকটি পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে চলে আসি। আমি বিদেশে আসার আগে সে আমার কাছ থেকে ডিভোর্স চায়।
আমি তাকে কাবিনের টাকা বরণ পোষণের টাকা দিয়ে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কিন্তু আমি বিদেশ আসার পর সে আমার হারানো চেকবই দিয়ে আমার নামে ১০ লাখ ও ১২ লাখ টাকা পাবে অভিযোগ করে আদালতে দুটি মামলা করে। সে তার মায়ের পরোচনায় আমাকে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। তার হয়রানির শিকার একাধিক যুবক হয়েছে। এর একটা সুরাহা হওয়া উচিৎ।
মিতু আক্তারের দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার সার্জিয়া আফরিন জানান, চাঁদপুর আদালত থেকে আমাকে শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে মিতু আক্তারের দায়ের করা মামলায় তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। আমি তদন্তের স্বার্থে মিতুর সাথে যোগাযোগ করলে সে আমাকে হুমকি ধমকি দেয়। তার পরও আমি তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন দাখিল করেছি। আদালত পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবে।
দেনমোহর সম্পর্কে কাজী আবুল কালাম লিটন জানান, শহাদাত ও মিতু আক্তারের বিয়ের রেজিস্ট্রিতে ১০ লাখ টাকা কাবিন করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ বানোয়াট।
অভিযুক্ত মিতু আক্তার বলেন, আমি অভিযোগ করেছি বা না করেছি সেটা আদালত বুঝবে। আপনারা আমার কাছ থেকে জানার কে? তিনি মুখের ভাষা খারাপ করে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে ফোন কেটে দেন।