হাজীগঞ্জে সম্পত্তি নিয়ে দুই ব্যবসায়ীর দ্বন্দ্ব চরমে

স্টাফ  রির্পোটার:চাঁদপুরের  হাজীগঞ্জে সম্পত্তি নিয়ে দুই ব্যবসাযীর দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এ বিরোধের জেরে রাতের আঁধারে স্টোর রুম, গোডাউন ভাংচুর ও লুটপাট করে সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ করেন ভাড়াটিয়া পক্ষ।
মালিক পক্ষ বলছে আমি আমার সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছি। তবে ভাংচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন মালিক পক্ষ।
ভাংচুর লুটপাটের ঘটনাটি বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ রোডস্থ জিয়ানগর এলাকায় মেসার্স সেলিম ব্রিকস্-এর অভ্যন্তরের।
রাতেই খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দখলকারীদের প্রতিরোধ এবং উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে থানায় উপস্থিত হওয়ার বলে দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মোহাম্মদ হাসিবুল হাসান জানান, তিনি হাজীগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব সেলিমের কাছ থেকে মেসার্স সেলিম ব্রিকস্ ভাড়া নিয়ে গত ৫ বছর যাবৎ ব্যবসা করে আসছেন। বৃহস্পতিবার রাতে হাজীগঞ্জ বাজারের অপর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এনামুল হক তালাল ও তার ছেলেসহ ২৫/৩০ জন যুবক হঠাৎ করে তার ব্রিক ফিল্ডে উপস্থিত হয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করেন। এতে তার ভাড়াটিয়ার কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয় হয় বলে দাবি করেন।
তিনি আরো বলেন, খবর পেয়ে আমি হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে ফোন দেই এবং ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হই। পরে পুলিশের দুজন কর্মকর্তাসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দখলকারীদের প্রতিরোধ করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাতের আঁধারে দখল কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্টদেরকে থানায় আসার কথা বলেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
এ ব্যবসায়ী বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, তালাল ভাই একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। অথচ তিনি রাতের আঁধারে নিজে উপস্থিত থেকে অন্য ব্যবসায়ীর প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও লুটপাটের মাধ্যমে জোরপূর্বক দখল করতে আসেন কিভাবে? তাঁর কোনো কথা থাকলে আমাকে বলতে পারতেন। অথচ তিনি তা না করে রাতে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে আমার ক্ষতি করলেন। এ ঘটনায় আমি আইনের আশ্রয় নিবো। এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী পুলিশ। আমি আপনাদের (সংবাদকর্মী) মাধ্যমে প্রশাসন ও আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ন্যায়-বিচার প্রার্থনা করছি।
এ বিষয়ে মেসার্স সেলিম ব্রিকস্-এর জমির মালিক আলহাজ্ব মো. সেলিম বলেন, ব্রিকস্ ফিল্ডের সামনে রাস্তার পাশে আমার ক্রয়কৃত সাড়ে ২৩ শতাংশ ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে শুনেছি, এনামুল হক তালাল ৮ শতাংশ ভূমি ক্রয় করেছেন এবং এই ভূমি আমার দখলীয় সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। বিষয়টি জানার পর আমি যাদের কাছ থেকে সম্পত্তি কিনেছি তাদেরকে জানালে, তারাসহ ওই এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বিষয়টি মীমাংসার লক্ষ্যে বর্ষার পানি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। কারণ মাপঝোক (পরিমাপ) করতে হলে পানি শুকানোর বিকল্প নেই।
এনামুল হক তালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আলহাজ্ব সেলিম বলেন, তিনি ভূমির পূর্বের মালিক ও এলাকার গণ্যমান্যদের উপেক্ষা করে আদালতে অভিযোগ দিয়েছেন, ভালো কথা। এখন তিনিই আদালত অবমাননা করে রাতের আঁধারে ভাংচুর ও লুটপাট করে জোরপূর্বক সম্পত্তি দখল করতে গেলেন। এতে আমার ভাড়াটিয়ার কয়েক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তার প্রতি আমার অনুরোধ, তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, তার সম্মান আছে। বিষয়টি স্থানীয়ভাবে বৈঠক অথবা আইন-আদালত, তিনি যেভাবে চাইবেন, সেভাবেই সমাধান হবে। তারপরও জোরপূর্বক তিনি যেনো কিছু না করেন।
এ বিষয়ে এনামুল হক তালালের সাথে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি সম্পত্তি (ভূমি) ক্রয় করে পরে আবার তা বিক্রি করে দিয়েছি। যাদের কাছে বিক্রি করেছি, তারা ওই সময়ে (রাতে) গিয়েছেন। তখন আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।
হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মিন্টু কুমার দত্ত মিঠু জানান, বৃহস্পতিবার রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে জোরপূর্বক কিংবা বলপ্রয়োগ করে সম্পত্তি দখলের সুযোগ নেই। ভূমি সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে আদালতের দ্বার হতে পারেন। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা অবনতির আশঙ্কা দেখা দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত খবর