নিজস্ব প্রতিনিধি ॥ কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সফিউর রহমান ভূইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছা চারিতার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দপ্তরের ৫০জন কর্মকর্তা কর্মচারী স্বাক্ষরিত চাঁদপুরের সিভিল সার্জনের মাধ্যম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, মহাখালী বরাবর এ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় ডা. সফিউর রহমান ভূইয়া চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন।
যোগদান করার পর তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদকের পরিচয় দেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে সখ্যতার কথা বলে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হয়ারানী, অসদাচারণ, গালমন্দ করে হেস্তনেস্ত শুরু করেন।
গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার পটপরিবর্তনের পর তিনি ভীত ও কিছুটা শান্ত থাকেন। সম্প্রীতি নতুন সিভিল সার্জন যোগদান করার পর তিনি নিজেকে সিভিল সার্জনের বন্ধু পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে বদলীর হুমকি, হয়রানী, গালমন্দ ও অসধাচারনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তিনি হাসপাতালের ভিতরে তার চেম্বারে ৪০০টাকা ভিজিটের বিনিময়ে রোগী দেখার জন্য রিপাত ও কাউছার নামে দুইজন দালাল নিয়োগ দেন। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কোন রোগী সেবা নিতে আসলে জরুরী বিভাগের সেকমো সেলিমের মাধ্যমে বড় ডাক্তার দেখানের কথা বলে তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যান। তার ব্যাক্তিগত চেম্বারে রোগী পাঠানের জন্য হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের সব সময় চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। রোগী দিতে না পারলে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানষিকভাবে হেনস্তা করেন।
ইতিপূর্বে রোগী দেখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত এক দালাল রাছেলকে দিয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল রানাকে লাঞ্চিত করেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীগন ওই সময় মানব বন্ধন করে এবং তৎকালীন সিভিল সার্জন মো. শাহাদাত হোসেনকে অবহিত করেন।
হাসপাতালের হিসাব রক্ষক জান্নাতুল তার অসুস্থ্য বৃদ্ধা মাকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে গেলে তার দালাল জান্নাতুলকে বাধা প্রদান করেন। এ বিষয়টি ডা. সফিউর রহমানকে অবহিত করলে তিনি হিসাব রক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগের এমটি ল্যাব ফাতেমা খাতুন দাপ্তরিক কাজে তার অফিস কক্ষে গেলে দীর্ঘক্ষন তাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। অসুস্থ্য আর্থাইটিস রোগে আক্রান্ত ফাতেমা একসময় বসে পড়লে অনুমতি ব্যতিত বসার অজুহাত দেখিয়ে গালমন্দ করে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন।
ডা. সফিউর রহমান সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সরকারি এম্বুলেন্স দাপ্তরিক কাজের বাহিরে ব্যাক্তিগত কাজে তার ঢাকার বাসা শাহজাহানপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে বহুবার ব্যবহার করেছেন। যার তৈল খারচ বাবদ ২৪ হাজার ৬শত টাকা ব্যায় হয়েছে বলে জানান এম্বুলেন্স ড্রাইভার। ওই টাকা তিনি পরিশোধ করেন নাই। নিজের ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে হাসপাতালের এম্বুলেন্স ব্যবহার করে আসছেন।
তাছাড়া ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের নিকট থেকে বনভোজনের কথা বলে ১০লক্ষ চাঁদা দাবী করেন। টাকা দিতে অপারগত প্রকাশ করায় ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সফিউর রহমানের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
জেলা সিভিল সার্জন নুর আলমগীর হোসেন বলেন, কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমার মাধ্যমে যে অভিযোগটি এসেছে সেটি আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর কোন বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।