ইব্রাহিম খান : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী মাওলানা এ.টি.এম মাসুম বলেছেন, দেশকে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাখতে চাই এবং আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই, তাহলে সব শ্রেণি, পেশা ও ধর্মের লোকদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
এখানে বিভাজনের রাজনীতি জনগণ ও দেশের জন্য কল্যাণ কর নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে যারা এর আগে এই দেশকে শাসন করেছিলেন, আজকে আমরা ৫৩ বছর পার করছি স্বাধীনতার পরে, কোন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের লোকেরা, আমাদের সমাজের যারা বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা রাজনৈতিক নেতা আছেন, কবি ও সাহিত্যিক আছেন, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এই দেশকে মর্যাদার সাথে পরিচালনার জন্য তারা উদ্যোগ নেননি।
বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে চাঁদপুর শহরের হাজী মহসীন রোডস্থ রসুইঘর কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর জেলা শাখার আয়োজনে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিগত বছরের শাসনে আমালে যারা ছিলেন তারা দেশের লোকদের বিভক্ত করে দেশের শক্তিকে ধ্বংস করেদিয়েছেন। যে কারণে আমাদেরকে এবং দেশকে গভীর সংকটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। যারা এদেশকে স্বাধীন করেছেন বলে বড় বড় গলায় কথা বলেন তারাই এদেশকে হুমকির সম্মুখিন করেছেন। দেশের জনগণকে বিভক্ত করে দিয়েছেন। দেশে এমন এক রাজনীতি চালু করেছেন, যে রাজনীতির ফলাফল হচ্ছে দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া। তারা সব সময় দেশকে দাঙ্গা হাঙ্গামার মধ্যে রেখেছেন, এর কারণ হচ্ছে এমন পরিস্থিতি থাকলে যারা এদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় এবং দেশকে দখল করতে চায় তাদেরই লাভ হবে। এসব কারণেই রাজনৈতিক নেতা এবং সুশীল সমাজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কোন ভূমিকা রাখেননি।
এই নেতা বলেন, আজকে আপনারা দেশের যে কোন প্রান্তে যাবেন সেখানেই অগনিত শহীদের কবর দেখতে পাবেন। পুরো বাংলাদেশ মূলত শহীদের রক্তে রঞ্জিত। ৪৭ সালের পূর্বে ও পরে, ১৯৭১ সালের পূর্ব ও পরে, সর্বশেষ ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশকে রক্ষার জন্য, দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য, মানুষকে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় রাখার জন্য যারা ভূমিকা পালন করেছেন, তাদেরকে ওই অপশাক্তি শান্তিতে থাকতে দেয়নি। এই চিত্রই দেখতে পাই আমাদের অতীত ইতিহাস ঘাটলে।
এটিএম মাসুম বলেন, দেশকে টিকে থাকতে হলে দেশের প্রতিরক্ষা ও অধিকাংশ জনগণের আদের্শল লালন শাক্তিশালি হতে হয়। কিন্তু যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এই দুটোর ওপরই আঘাত হেনেছেন। বারে বারে আমাদের প্রতিরক্ষা শাক্তিকে দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে আমাদের রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো পা দিয়েছিলো।
আর যারাই ক্ষমতায় এসেছে, তারা ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কম-বেশী সকলেই এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে কেউ সরবে এবং কেই নিরবে জড়িত ছিলেন। যার কারণে বাংলাদেশ এখনো একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে তার আপন সত্ত্বা নিয়ে বিশ্বের বুকে মর্যাদার আসন তারা অর্জন করতে পারেনি।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা এটা দাবী করেন আমরাই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে এবং স্বাধীনতা এনেছি, আমরাই এদেশের জন্য সবকিছু করেছি। কিন্তু ইতিহাস বলছে, তারা যা বলেছে, তাদের অবস্থানছিলো সম্পূর্ণ বিপরীত।
বিগত সরকারের কর্মকান্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বৈরাচার হাসিনা যদি এখনো ক্ষমতায় থাকতো, তাহলে দেশের লাখ লাখ মানুষ এখনো খুন হতো। প্রতিটি গ্রামগঞ্জের পাড়া মহল্লায় অগণিত লাশ আর লাশ আমরা দেখতে পেতাম। আওয়ামী লীগের শাসন আমলগুলো দেখলে পরিষ্কার বুঝা যায়, তারা দেশকে ধ্বংস করেছেন, দেশের রাজনীতি, বিচার ব্যবস্থা, মানুষের মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন। আর চোরদেরকে ডাকাত বানিয়ে ডাকাতের খনি তৈরি করেছেন। বিগত ১৫ বছরে তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন।
চাঁদপুর জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রহিম পাটওয়ারীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট মাসুদুল ইসলাম বুলবুলের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা অঞ্চলের টিম সদস্যঅধ্যাপক মাওলানা লিয়াকত আলী ভূঁইয়া।
আরও বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চাঁদপুর জেলার নবনির্বাচিত আমির মাওলানা বিল্লাল হোসেন মিয়াজী, সহ-সেক্রেটারী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া, অধ্যাপক মো. আবুল হোসাইন, শহর জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট মো. শাহাজাহন খান, সদর উপজেলা জামায়াতের আমির মো. নাছির উদ্দিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি যুবাইর ইসলাম আসিফ, চাঁদপুর শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ফারুক হোসাইন ও জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি মো. মহররম আলী।
শহীদ পরিবারের পক্ষে বক্তব্য দেন শহীদ সামিউ নুরের বাবা আমানুল্লাহ চৌধুরী, শহীদ সিয়াম সরদারের ভাই শরীফ সরদার ও শহীদ আব্দুল্লার বোন আখি আক্তার।
মতবিনিময় শেষে ১১ শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে নগদ ২লাখ করে ২২ লাখ টাকা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা।