মৈশাদী গ্রামে বসতবাড়ির বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর সদর উপজেলার উত্তর মৈশাদী গ্রামে বসতবাড়ির বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এই ঘটনায় উভয় পক্ষের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

যেকোনো সময় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উত্তর মৈশাদী গ্রামের তপাদার বাড়ির সামনের কাঁচা রাস্তার উত্তর পাশে ফারুক তপাদার নামে এক ব্যক্তি একটি বাড়ি ক্রয় করে বসবাস করছেন। কয়েকদিন আগে তিনি বাড়ির সামনে রাস্তা ঘেঁষে একটি স্থায়ী বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেন।

এতে দক্ষিণ পাশের তপাদার বাড়ি এবং আশপাশের এলাকাবাসী বাধা দেন। তাদের দাবি, এই রাস্তাটি দক্ষিণ পাশের তপাদার বাড়ির জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে। রাস্তার উত্তর পাশেও তাদের কয়েক হাত জমি রয়ে গেছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর দাবি ফারুক তপাদার যেন বাউন্ডারি দেয়ালটি রাস্তার সীমানা খুঁটি থেকে কিছুটা ভিতরে নির্মাণ করেন। কারণ ভবিষ্যতে এই রাস্তা বড় করার প্রয়োজন দেখা দিলে তখন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

তাছাড়া রাস্তা যেহেতু এলাকার সবাই ব্যবহার করবে, তাই সীমানা খুটি থেকে দুই-এক ফুট জায়গা ছেড়ে দেয়াল নির্মাণ করার অনুরোধ জানান এলাকাবাসী। কিন্তু ফারুক তপাদার এবং তার পরিবারের লোকেরা এলাকাবাসীর বাধা এবং অনুরোধকে তোয়াক্কা না করে স্থায়ী বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে ফেলেন। এলাকাবাসী বিষয়টি থানা পুলিশকে অবগত করলে, তাতেও কোন কাজ হয়নি।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে এলাকাবাসী এক হয়ে ফারুক তপাদারের বাউন্ডারির সামনে একটি অস্থায়ী বাঁশের বেড়া দেন। এ বিষয়ে উত্তর মৈশাদী গ্রামের বয়োজ্যেষ্ঠ দেলোয়ার তপাদার, নাসির শেখ, খোরশেদ তপাদার, মোস্তফা তালুকদারসহ বেশ কয়েকজন জানান, কাতার প্রবাসী ফারুক তপাদারের পরিবারের কাছে আমরা পুরো গ্রামের মানুষ জিম্মি হয়ে আছি। তারা এলাকার শান্তি, সম্প্রীতি কিংবা সামাজিকতাকে তোয়াক্কা করছে না। ফারুক তপাদার কয়েক বছর আগে বিল্ডিংসহ এই বাড়িটি স্ত্রীর নামে ক্রয় করে বসবাস করছেন। বাড়ির সামনে আগের একটি অসম্পূর্ণ বাউন্ডারি দেয়াল ছিল।

কিছুদিন আগে সেই বাউন্ডারি দেয়াল ভেঙে রাস্তা ঘেঁষে নতুন করে স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ শুরু করেন। এই রাস্তাটি দক্ষিণ পাশে তপাদার বাড়ির সদস্যদের জমির উপর নির্মিত। রাস্তার উত্তর পাশেও তাদের কিছু জমি রয়ে গেছে। তপাদার বাড়ির লোকজন এবং এলাকার সকল মানুষ ফারুক তপাদারকে অনুরোধ করেছিল, তিনি যেন রাস্তা থেকে দুই এক ফুট দূরে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেন। উল্লেখিত এলাকাবাসী আরো জানান, বিষয়টি আমরা চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করি।

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দেয়াল নির্মাণ বন্ধ রাখতে বলেন। এরপর ফারুক তপাদার নিজে চাঁদপুর থেকে সাইফুদ্দিন নামে একজন আমিন এনে জায়গা মাপ দেন। তাদের আমিনও সীমানা খুটি থেকে কিছুটা দূরে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করতে বলেন। নিয়ম-নীতি এবং এলাকাবাসীর দাবি অনুরোধকে তোয়াক্কা না করে প্রবাসী ফারুক তপাদার পেশী-শক্তি ব্যবহার করে সীমানা খুঁটি ঘেঁষে স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করেন। অথচ ফারুক তপাদার এরপরেও এলাকাবাসীর বাধা, অনুরোধ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশকে তক্তা না করে দেয়াল নির্মাণ করে ফেলেন।

নিয়ম-নীতি এবং এলাকাবাসীর দাবি অনুরোধকে তোয়াক্কা না করে প্রবাসী ফারুক তপাদার পেশী-শক্তি ব্যবহার করে সীমানা খুঁটি ঘেঁষে স্থায়ী দেয়াল নির্মাণ করেন। এলাকার মানুষ বাধা দেয়ায় তিনি এলাকাবাসীর নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ফেসবুকে অপপ্রচার করেন। এ বিষয়ে প্রবাসী ফারুক তপাদার জানান, ১১ শতক জমির উপর আমার এই বাড়িটি। আমি দীর্ঘদিন যাবত এখানে বসবাস করছেন।

রাস্তা থেকে তিন ফুট জায়গা ছেড়ে দিয়ে আমি দেয়াল নির্মাণ করেছিলেন। আমার বিষয়ে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে হব মিথ্যা। তাছাড়া এলাকার মানুষ যে খুঁটি দেখাচ্ছে সেটি পশ্চিম পাশের জমির সীমানা খুঁটি। এই খুঁটির সাথে দক্ষিণ পাশের জমির মালিকদের কোন সম্পর্ক নেই। তবে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে তার কাছে কোন চাঁদা চাওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার এস আই মিজানুর রহমান বলেন, মৈশাদী ইউনিয়নে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে একটি অভিযোগ আসে। তাৎক্ষণিক সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ইতোমধ্যে বিষয়টি সমাধান হওয়ার কথা। যদি সমাধান না হয়ে থাকে তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সরকারি গ্রামীণ রাস্তার পাশে বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দুই পক্ষের মাঝে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বড় ধরনের সংঘর্ষ বা সহিংসতা এড়াতে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছেন এলাকাবাসী।