সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী: নানা কারণে কিশোরদের অপরাধে যুক্ত হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। শিথিল পারিবারিক বন্ধন, মা-বাবার সন্তানকে সময় না দেয়া, সামাজিক অবক্ষয়, স্বল্প বয়সে স্মার্টফোনসহ উন্নত প্রযুক্তি উপকরণের নাগাল পাওয়া, সঙ্গদোষ ইত্যাদি এর জন্য দায়ী। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে কিশোর অপরাধের খবর আমরা পাচ্ছি।
রাস্তাঘাটে ছিনতাই, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা, বাধা দিলে রক্তারক্তি পর্যন্ত করছে কিশোর অপরাধীরা। প্রশাসনের নানা পদক্ষেপের পরও তাদের অপতৎপরতার লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। তবে প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্মতি চাঁদপুর শহরে পৃথক ঘটনায় দুই কিশোরকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয় এবং দুজনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে পুলিশ। গত কয়েকদিন কিশোর গ্যাংয়ের অস্ত্রের মহড়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন শহরের বাসিন্দারা।
এ বিষয়ে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম বলেন, এই কিশোররা আগামীর ভবিষ্যৎ। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিশোর সন্ত্রাস নতুন একটি সামাজিক ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিশোররা যেন অপরাধে জড়াতে না পারে এবং কেউ তাদের অসৎ কাজে ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে নজর দিতে হবে। কিশোর অপরাধ নির্মূলে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব পরিবারের। কারণ পরিবারই একটি শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান। পরিবার যদি তার সন্তানদের ব্যবহার ও আচরণ গঠনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সন্তানের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কী কী দরকার সে অনুযায়ী তাদের লালনপালন করে তাহলে সেগুলো একটি সুস্থ ও সুন্দর জীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পুলিশ সুপার বলেন, একটি পরিবারের প্রবীণদের উচিত অপ্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা, নৈতিকতা শেখানো এবং তাদের ক্রিয়াকলাপের ওপর নজর রাখা। স্কুল কারিকুলামের বাইরে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে আকৃষ্ট করা এবং যুক্ত করার সুযোগ বাড়াতে হবে। কিশোর অপরাধ রুখতে ছিন্নমূল শিশু-কিশোরদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ইতোমধ্যে অপরাধ চক্রে জড়িয়ে গেছে, তাদের সুপথে নিয়ে আসতে উপযুক্ত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, মা-বাবা যদি তার সন্তান সারাদিন কোথায় ছিল, কার কার সঙ্গে ছিল, কার সঙ্গে মেলামেশা করে এগুলো যদি মা-বাবারা সবসময় খেয়াল রাখেন তাহলে পরিবারের সন্তান বিপদে যেতে পারে না, কোনো সন্তান অপরাধ করতে পারে না। পরিবারের সন্তান ভালো ভূমিকায় অবতীর্ণ হলে শুধু পরিবারে শান্তি বিরাজ করে না, এলাকায়ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। তখন তারা দেশের সম্পদে পরিণত হয়। তাই এলাকায় কিশোর অপরাধ মুক্ত করতে পরিবার ও সমাজের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যেখানে অপরাধ হওয়ার আশংকা থাকে, সে বিষয়গুলো সাথে সাথে প্রশাসনকে জানলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিশোর অপরাধী বা কিশোর গ্যাং এর সদস্যদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশ সুপার চাঁদপুর জেলা পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করেছেন।