চাঁদপুর খবর রির্পোট: একাত্তর বছর বয়সেও রাজউকে সরকারি চাকরি করছেন ভাতাপ্রাপ্ত এক মুক্তিযোদ্ধা। জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে চাকরি করার বিষয়ে ইতোপুর্বে দুদকে অভিযোগ দেওয়া হলেও এখনো তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
মো. আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী নামে ওই ব্যক্তির বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দায়চারা পাটওয়ারী বাড়ি। তিনি ওই বাড়ির মৃত জয়নাল আবেদিন পাটওয়ারী ছেলে। বয়স লুকিয়ে চাকরি করার কথা স্বীকার করে আহসান উল্ল্যা বলেন, সংসার চালাতে নিতান্ত বাধ্য হয়েই চাকরি করছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের দায়চারা পাটওয়ারী বাড়ির মৃত জয়নাল আবেদিন পাটওয়ারীর তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় আহসান উল্ল্যা পাওটয়ারী। তিনি ও তার বড় ভাই আতিকুল ইসলাম (মানিক পাটওয়ারী) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন। আহসান উল্ল্যা রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পে জরিপ সাথি হিসেবে কর্মরত এবং থাকেন পূর্ব বাড্ডা রাজউক স্টাফ কোয়ার্টারে।
এদিকে দায়চারা গ্রামের জনৈক নজরুল ইসলাম খান ২০১৭ সালে দুদক বরাবর আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার তথ্য গোপন করে এবং ২০ বছর বয়স কমিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে রাজউকে সরকারি চাকরি করার অভিযোগ করেন। যদিও অদ্যাবধি অভিযোগটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
ঘটনার সত্যতা জানতে দায়চারা পাটওয়ারী বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী ঢাকার বাড্ডায় বসবাস করেন। তিনি ও তার ভাই এখনো মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন নিয়মিত। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার সরোয়ার হোসেনও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বড় ভাই আতিকুল ইসলাম মানিক পাটওয়ারী জানান, তার ভাই ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। তিনিও স্বীকার করেন আহসান রাজউকে চাকরি করে। তার বাবা ১৯৭১ সালে মারা গিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আহসান উল্ল্যার বাবার মৃত্যু ১৯৭১ সালে হলেও একটি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে জন্মসাল ১৯৭৩। সেই পরিচয় পত্র অনুসারে জন্মতারিখ ১৯৭৩ সালের ৩ জুন। যদিও অনলাইনে সেটি এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। আবার মুক্তিযোদ্ধা সংসদে দাখিল করা কাগজপত্র অনুসারে তার জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩ জুন। তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মন্ত্রণালয়ের (মুক্তিবার্তা লাল বই) সনদ নং ১১৪২৬১। বেসামরিক গেজেট নং-৫৩৮। তার পরিচিতি নং- ০১২৬০০০০২১৯, লাল মুক্তিবার্তা নং-০২০৫০৫০৩৩৫।
তার জাতীয় পরিচয় পত্র অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে, তিনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদে দাখিল করা কাগজপত্র অনুসারে তার জন্ম ১৯৫৩ সালের ৩ জুন হলেও স্মার্ট আইডি কার্ডে তার জন্ম তারিখ দেখাচ্ছে ১ জানুয়ারি ১৯৫৩। অর্থাৎ এখানেই তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া ২০ বছর কমিয়ে তিনি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র করে রাজউকে চাকরি করছেন।
আহাসন উল্ল্যা পাটওয়ারীর চাচাতো ভাই সাবেক ইউপি সদস্য হাসান মাহমুদ কনা পাটওয়ারী (৬৬) জানান, আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী তার থেকে ৫-৬ বছরের বড়। তিনি ঢাকাতেই থাকেন, চাকরি করেন রাজউকে।
রাজউকে আহসান উল্লা পাটওয়ারীর সহকর্মী আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের মুঠোফোনে জানান, আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী তার সাথে রাজউকে জরিপ সাথি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
এদিকে আহসান উল্ল্যা পাটওয়ারী মুঠোফোনে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তি ও রাজউকে চাকরি করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি রাজউকে জরিপ সাথি হিসেবে কর্মরত।