চাঁদপুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা

মহসিন হোসাইন: চাঁদপুরে গরীব ও মধ্যবিত্তের জন্য কাঁচা তরিতরকারির দাম এখন আকাশছোঁয়া । ডিম থেকে শুরু করে সকল ধরনের কাঁচা সবজি এখন গরীব ও মধ্যবিত্তের ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে চলে গেছে।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও জাতয়িভোক্তা অধিকারঅধিদপ্তরের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন ক্রেতাসাধারণ । ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান জোরালো করার দাবী তুলেছেন ।প্রতিটি হাটবাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান দেওয়ারও দাবী উঠেছে |

গত এক সপ্তাহ ধরে শহরের বাবুরহাট,ওয়্যারলেস বাজার,বিপনীবাগ ,পাল বাজারসহ বাজার মনিটরিং করে দেখা যায় যে, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষ সবজি ক্রয় করতে গিয়ে বেশ হিমসিম খাচ্ছে। সবজির বাজার যেন রীতিমত ভয়ানক অবস্থায় রুপ নিয়েছে।

বাজার ঘুরে জানা গেছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। অনেকেই বাজারে এসেও কাঁচা বাজার না নিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বাধ্য হয়ে বেশি দামেই কিনছেন।

টমেটো কেজি প্রতি-২শ ৮০টাকা, মরিচ কেজি প্রতি-৪শ টাকা,ধনিয়া পাতা-৫শ ৫০টাকা, গাজর- ১৯০টাকা,ডিমের হালি-৬০টাকা,লাউ- ১০০টাকা(প্রতি পিস),বেগুন-১৪০টাকা, কচুর লতি-১০০টাকা, মুলা-১০০টাকা, পটল-৬০টাকা,ঢেঁড়স-৮০টাকা, শ্বশা- ৭০টাকা, সিম-২৫০টাকা,মিষ্টি কুমড়া- ৫০টাকা, করোল্লা-১২০টাকা, পেঁপে- ৪০টাকা।

এছাড়াও কাঁচা সবজির কথা যদি বলি তাহলে, যে কোনো শাকের মূল্য কেজি প্রতি ১শ থেকে ১২০টাকা। যেখানে গত ১মাস পূর্বেও শাকের মূল্য কেজি প্রতি মূল্য ছিল মাত্র সর্বনিম্ন ৪০থেকে সর্বোচ্চ ৬০টাকার মধ্যে। কুমড়া কেজি প্রতি ছিল ৩০থেকে ৪০টাকা। কিন্তু এখন কেজি প্রতি দাঁড়িয়েছে ৫০টাকা।

আলু কেজি প্রতি ৫৫থেকে ৬০টাকা, ছিম কেজি প্রতি ২শ টাকা, বড়বটি কেজি প্রতি ৬০টাকা, পেঁয়াজ কেজি প্রতি ১শ থেকে ১২০টাকা, রসুন কেজি প্রতি ২শ টাকা। এছাড়াও বয়লার মুরগি যেখানে গত ১মাস পূর্বে ছিল ১৫০থেকে ১৫৫টাকায় সেখানে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ১৯০থেকে ১৯৫টাকা।

তেলাপিয়া মাছ থেকে শুরু করে পাঙ্গাশ ও অন্যান্য মাছের জন্য কেজি প্রতি গুনতে হচ্ছে ১৬০থেকে ২৮০ ও ৩৫০টাকার মতো মাছের ক্যাটাগরি অনুযায়ী। বলতে গেলে সস্তার মধ্যে এখন আর কিছুই নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো যে ডিম আর ঢাল দিয়ে মানুষ দু বেলা দু মুঠো ভাত পেট ভরে খেতে পারতো সেই ডিমের দাম এখন সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

এক হালি ডিমের দাম বর্তমানে ৫৫থেকে ৬০টাকা। গরীব আর মধ্যবিত্তের জন্য বর্তমান ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলের বাজারে পিষ্ট হয়ে বাঁচার মতো অবস্থা আর নেই। এই বেহাল অবস্থা থেকে গরীব ও মধ্যবিত্তের পরিত্রাণের উপায় কি?

কাঁচা তরিতরকারি’র উর্ধ্ব-গতির বিষয়ে চাঁদপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোঃ মাসুদ রানা বলেন, দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ফসলাদি নষ্ট হয়ে গেছে। যার কারণে সবজির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে ইতোমধ্যে জেলায় পন্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে টাস্কফোর্স কমিটির একটি ইউনিট।

এছাড়াও পাইকারি ও খুচরা ব্যাবসায়ীরা জানান, একদিকে বন্যা অন্যদিকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় ব্যাবসায়ীরা মালামাল আমদানী করতে ভরসা পাচ্ছেন না। তারা বলেন, আমরা মালামাল আমদানির পর পর্যাপ্ত দামে বিক্রি করতে পারবোনা। ব্যাবসায় লাভবান হতে পারবোনা। আমাদের ব্যাবসায়ীদের ব্যাঙ্ক লোন থাকে, সময় মতো পরিশোধের একটা বিষয় রয়েছে। ব্যাবসায় সময় মতো যথাযথভাবে বিক্রয় বৃদ্ধি না হলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। তাই পন্য আমদানী সংকট থাকার কারণে এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে বিবেচিত বলে তারা জানান।

তবে সাধারণ ভোক্তারা অনেকেই বলেন, দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপের মূখে ক্রেতা সাধারন। তাঁরা বলেন, তরিতরকারি’র উর্ধ্ব-গতির কারণে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না অতি সাধারণ ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। দ্রুত কাঁচা তরিতরকারির দাম একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থায় নিয়ে আসার আহ্বান জানান এই ভোক্তা সাধারণ।

সম্পর্কিত খবর