বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বিপনিবাগ পৌর সুপার মার্কেট দীর্ঘদিন যাবত মারাত্মক সমস্যায় জর্জরিত।
সেইসাথে জেলার সবচে’ বড় মাছ বাজারটির নোংরা-আবর্জনাময় মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ অসংখ্য ক্রেতা সাধারণের আগ্রহকে দিন দিনই ম্লান করে দিচ্ছে। সবচে’ জঘন্য ও খারাপ অবস্থা হচ্ছে, সাবেক ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় ঠিকাদার কর্তৃক অত্র মাছ বাজারটি নির্মাণ ও সংস্কার করায় দীর্ঘদিন যাবত চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে।
বিপনিবাগ মাছ বাজারে জেলার দূরদূরান্ত থেকে অনেক ক্রেতা সাধারণ বাজার করতে আসেন। সেই সাথে এখানে অনেক নারী ক্রেতাও বাজার করে থাকেন। প্রায়ই সময় তাদের সাথে পুরুষদের গায়ে গায়ে ঠেলা-ধাক্কা হয়। যা অত্যন্ত অশালীন এবং দৃষ্টিকটু। অনেক সময় এ নিয়ে বাজারের ভিতরে নানা ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এছাড়া মাছ বাজারের ভিতরে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ময়লা- দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সয়লাব থাকে। এতে বাজারে আসা সর্বস্তরের ক্রেতা সাধারণ নারী-পুরুষের কাপড়-চোপড় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিদঘুটে পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
সবচেয়ে অসুবিধার মধ্যে পড়েন নিকটবর্তী নাজির পাড়া অর্থাৎ চাঁদপুর সরকারি কলেজ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে যাওয়া ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। প্রায়ই সময় উক্ত দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে তাদের কাপড়চোপড় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি নামাজের অজু ভেঙ্গে যায়।
এতে মুসল্লিদের বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। মাছ বাজারের এই দুরাবস্থার জন্য বিপনী বাগ বাজারের ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীবৃন্দ, সর্বস্তরের ক্রেতা সাধারণ মাছ বাজার নির্মাণ ও সংস্কার অত্যন্ত নিম্নমানের, ত্রুটিপূর্ণ এবং অপরিকল্পিত বলে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন। তাই তারা এজন্য বিশেষভাবে দায়ী করেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় একজন প্রভাবশালী নেতা যিনি ঠিকাদারও বটে ; তার দ্বারা বিপনিবাগ মাছ বাজার নির্মাণ ও সংস্কার হওয়ায় তারই অতি মুনাফা লাভের কারণে দীর্ঘদিন যাবত মাছ বাজারের অভ্যন্তরে চরম দুরাবস্থা বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করে জানা যায়, বিপনিবাগ পৌর সুপার মার্কেটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীবৃন্দ চাঁদপুর পৌর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে বিধি মোতাবেক নির্ধারিত ও ধার্যকৃত অংকের টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে লিজ প্রাপ্ত হয়ে বহু টাকা বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু মার্কেটের অভ্যন্তরে ও আশপাশে বিদ্যমান নিম্নলিখিত মারাত্মক সমস্যা গুলোর কারণে ক্রেতা সাধারণ এই মার্কেটে আসতে চায় না। এরফলে বিপনিবাগ পৌর সুপার মার্কেটের সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদেরকে মাসের পর মাস বহু টাকা লোকসান গুনতে হয়। যা খুবই দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত।
এছাড়া বিপনিবাগ পৌর সুপার মার্কেটের অভ্যন্তরে এবং পুরো আশপাশ এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত অন্যান্য বিরাজমান মারাত্মক সমস্যাগুলো এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। মার্কেটের ৩ টি প্রবেশদ্বারের মধ্যে একটিতে মাছের দোকান ও মাছ কাটার দোকান দিয়ে প্রবেশদ্বার বন্ধ রাখা হয় এবং প্রতিনিয়ত মারাত্মক রোগ-জীবাণু ও দুর্গন্ধ ছড়ায়। প্রধান প্রবেশদ্বারে মক্কা পরিবহনের ট্রাক ও মালামাল দিয়ে বিপনিবাগ পৌর সুপার মার্কেটের প্রধান প্রবেশদ্বার দীর্ঘদিন যাবত বন্ধ রাখা হচ্ছে। অপর প্রবেশদ্বারের প্রবেশপথে ডাস্টবিন স্থাপন করায় সেটিও ব্যবহার করা যায় না।
বিপনিবাগ মার্কেটের পাশের খোলা জায়গায় বিভিন্ন টং দোকান থাকায় পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি ক্রেতা সাধারণ মার্কেটের ভিতরে ঢুকতে পারেন না। মার্কেটের ভিতরে একটি ভাঙ্গারি দোকান থাকায় পুরো মার্কেটের ভিতরের পরিবেশ মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে।
মার্কেটের ভিতরে দুই/একটি চা দোকান রয়েছে যেখানে প্রতিনিয়ত বখাটেদের মারাত্মক আড্ডা জমে এবং স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীগণ ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মার্কেটের নিচ তলায় এবং দোতলায় মারাত্মক আড্ডা জমায়। মার্কেটের সামনে যত্রতত্র গাড়ি ও ভ্যান পার্কিং করে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা সাধারণের চলাচলের পথে মারাত্মক বাঁধা-বিঘ্ন ঘটায়। মার্কেটের পয়:নিষ্কাশনসহ কিছু সংস্কার কাজ করে দিয়ে চারপাশের পরিবেশ সুন্দর করে দিয়ে রং করে দিলে ব্যবসায়ীদের ব্যবসা পরিচালনার পথ বিশেষভাবে সুগম হবে এবং সেই সাথে ক্রেতা সাধারনের মনোযোগ আকর্ষণ বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে অভিজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
এছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ক্লাস ফাঁকি দেয়া উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র-ছাত্রীদের আড্ডা এবং বখাটে ও সন্ত্রাসীদের অবস্থান এবং আনাগোনা প্রতিহত করতে অবশ্যই এখানে মাঝেমাঝে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান একান্ত প্রয়োজন বলে অভিজ্ঞ ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।
এ ব্যাপারে তাঁরা চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার এবং চাঁদপুর পৌর প্রশাসক মহোদয়ের আশু সুদৃষ্টি আকর্ষণপূর্বক ত্বরিত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।