কচুয়ায় বিএনপির পাল্টাপাল্টি হামলা, মানুষ মধ্যে আতঙ্ক

স্টাফ রির্পোটার : ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরেই কচুয়ায় বিএনপি দুই গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে মাঠ দখলের হিড়িক পড়ে গেছে। বিএনপি’র দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ড. আ.ন.ম এহসানুল হক মিলন ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেনের সমর্থক নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা,ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার ছিড়েঁ ফেলার অভিযোগ উঠেছে।

ছিড়ে ফেলার ব্যানার ফেস্টুন গুলোতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্বলিত ছবি রয়েছে।

স্থানীয় বিএনপি’র একাধিক নেতাকর্মী জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কচুয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে জনসভা, সমাবেশ ও মিছিলে তুচ্ছ ঘটনা কেন্দ্র করে দলীয় নেতাকারীদের মধ্যে হট্টগুল সৃষ্টি হয়ে হামলা,বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও দলীয় ব্যানার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দলীয় সমর্থিত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তারা আরো জানান,গত ১২ আগস্ট উপজেলা সাচার বাজারে মোশাররফ হোসেনের দুই গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের রেনোঁসা হসপিটালে হামলা ও ভাংচুর করা হয়, ২১ শে সেপ্টেম্বর উপজেলা পশ্চিম সহদেবপুর ইউনিয়নের মালচোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে মোশারফ সমর্থকের জনসভাকে কেন্দ্র করে দারাশাহী তুলপাই বাজারে বিএনপির মিলন ও মোশারফ গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি সৃষ্টি হয়। এঘটনায় মোশারফ সমর্থিত কচুয়া পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.ইব্রাহিম খাঁন, যুবদল কর্মী মহিন খান আহত হয়।

২০ সেপ্টেম্বর উপজেলা গোহট উত্তর ইউনিয়নের তালতুলী গ্রামে মিলন ও মোশারফ গ্রুপের যুব দলের সমর্থকদের মাঝে মারামারি সৃষ্টি হয় ,এতে মোশারফ গ্রুপের যুবদল নেতা বাহারুল আহত হয়।

২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে আকানিয়া বিশ্বরোড ও আশপাশ এলাকায় সাঁটানো মিলন সমর্থকদের ব্যানার-ফেস্টুন কে বা কাহারা ছিঁড়ে ফেলে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কচুয়া উপজেলার ৭নং সদর (দক্ষিণ) ইউনিয়নের আকানিয়া গ্রামে বিএনপির দুই গ্রুপের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

এই ঘটনায় প্রবাসী কচুয়া জাতীয়তাবাদী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক ও কচুয়া উপজেলা শাখা যুবদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল সাত্তার পাঠান জানান,রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিহিংসা নয়। যে বা যাহারা এসকল বিশৃঙ্খলা করেছে তাদের দলীয় পরিচয় থাকতে পারে না। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। পাশাপাশি ব্যানার ও ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার সাথে জড়িতদের খুঁজে বের করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাই।

গত ৭ আগষ্ট উপজেলা বিতারা ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর বাজারের সাধারন বেশ কিছু ব্যবসায়ী ও বিএনপি সমর্থিত নেতাকর্মীর উপর হামলা ও মারধর করা ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ২৩ আগস্ট শুক্রবার বিকেলে স্থানীয় ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড বাসীর আয়োজনে উত্তর শিবপুর মোড়ে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু ও সাধারন ব্যবসায়ীদের উপর হামলা, দোকানপাটে ভাংচুর, চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ঘটনায় প্রতিবাদ সভা ও বিশাল মানববন্ধন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে কচুয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও কচুয়া বিবি কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা মো. মোজাম্মেল হক লিটন সাংবাদিকদের উপস্থিতি বক্তব্য বলেন, দেশবাসীর দোয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ১৭ বছর পর ওই দলের কতিপয় নেতাকর্মীদের অত্যাচার থেকে এলাকার মানুষ মুক্তি পেয়েছে। আমরা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সবসময় শান্তি ও উন্নয়নে বিশ্বাসী। আমাদের প্রিয় নেতা সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন ভাইয়ের কঠোর নির্দেশ এলাকায় কোন ভাবে বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। সকলে মিলে মিশে এলাকায় বসবাস করবো।

যারা বিগত দিনে এলাকায় মানুষের সম্পদ জোড় করে দখল করেছেন, মানুষের টাকা পয়সা নিয়েছেন গোপনে তাদের লেনদেন পরিশোধ করুন। বিশেষ করে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে যারা এলাকায় সাধারন মানুষের উপর জুলুম নির্যাতন করতে চান, এবং মাদক ও জুয়া কারবারির সাথে জড়িত তারা হুশিয়ার হয়ে যান। ৭ তারিখ যারা বিশৃঙ্খলা করেছেন সাধারন ব্যবসায়ী ও সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার করেছেন পুনরায় সাধারন মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার চেষ্টা করছেন দ্রুত মামলা প্রত্যাহার করে সাধারন মানুষের কাতারে এসে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করুন।

কচুয়া উপজেলার বিএনপির প্রবীণ নেতারা জানান, কচুয়া উপজেলার বিএনপির দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ড. আ.ন.ম এহসানুল হক মিলন ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোশারফ হোসেনের সমর্থন নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা ঘটনা প্রায় সময় ঘটছে। এ হামলার ঘটনায় আওয়ামী লীগের সমর্থিত কিছু কর্মীরা অনুপ্রবেশে করে বিএনপির দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও দলীয় নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করেছে। এমনকি বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করার অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।

তারা আরো জানান, গত ৫ আগস্টের আগে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় কচুয়া কোন বিক্ষোভ মিছিল মিটিং এবং সমাবেশ বা প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার পদত্যাগ করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরে কচুয়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল মিটিং এর হিড়িক পড়েছে।

সম্পর্কিত খবর