স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী দুঃশাসনের ১৭ বছরের ইতিহাসে বর্বরোচিত হত্যা, ক্রসফায়ার, গুলি, গুম ও খুনে স্বজন হারানোদের বিলাপ এখনো থামেনি। চাঁদপুরে স্বজন হারানোর ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন ২৯ বিএনপি নেতা-কর্মীর পরিবার।
অনেকেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে বেদনায় আজও কাতর। বিয়োগান্ত পরিবারগুলো অপেক্ষায় ছিল কবে এই স্বৈরাচারী শাসনের পতন হবে। তারা উচ্চস্বরে বিলাপ করে বুকের ব্যথা হালকা করতে পারে। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সূত্র জানায়, আওয়ামী দুঃশাসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ বিএনপির ২৯ নেতাকর্মীকে হত্যা করে পুলিশসহ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
২০১২ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ চার বছরে শুধুমাত্র বিএনপি করার অপরাধে ২৮জন নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ার, গুলি এবং পিটিয়ে হত্যা করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো সংশ্লিষ্ট থানায় প্রতিকার চেয়ে মামলা করার সুযোগ পায়নি। উপরোন্ত হয়রানীর ভয়ে কেটেছে তাদের দিবানিশি। অভিভাবকহীন ক্ষতিগ্রস্ত বিএনপি পরিবারগুলো জীবন সংগ্রামে অনেকটাই হারিয়ে যেতে বসেছে।
পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিকে হারিয়ে বিপাকে পড়েন তারা। নিত্যদিনের আহার, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেই তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা বিএনপি তাদের পাশে কিছু সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসলেও নানান কারণে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ফলে অমানিশার অন্ধকারেই কাটছে তাদের দিনাতিপাত। বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে গুম, খুন ও কারাগারে মৃত্যুবরণকারী নেতাকর্মীদের একটি তালিকা তৈরি করেছে চাঁদপুর জেলা বিএনপি। তাদের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়; চাঁদপুরে পুলিশের গুলিতে প্রথমেই প্রাণ হারায় স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লিমন ছৈয়াল, আরজু ও বিএনপির কর্মী আবুল ছৈয়াল।
২০১২ সালে ২৯ জানুয়ারি গণ মিছিলে অংশ নেয়ায় পুলিশ তাদের গুলি করে হত্যা করে। নিহত ৩ নেতার বাড়ি চাঁদপুর শহরে।২০১২ সালে ৯ এপ্রিল যৌথ বাহিনীর ক্রসফায়ারে মারা যায় চাঁদপুর শহরের ছাত্রদল কর্মী বিল্লাল দেওয়ান। এছাড়া ২০১৩ সালের ২৫ আগস্ট ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলায় ফরিদগঞ্জে নিহত হয় ৩ জন। তারা হলেন ফরিদগঞ্জ ইউনিয়ন যুবদল সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, তাঁতি দল সভাপতি আরিফ হোসেন ও ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি বাবুল ভুঁইয়া।
২০১২ সালের ২৩ অক্টোবর র্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় কচুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বড় জামাল, ২০১৩ সালের ১ মার্চ যৌথ বাহিনীর ক্রসফায়ারে মারা যায় কচুয়ার বিএনপি নেতা ছোট জামাল। একই বছরের ১ মার্চ ্যাবের ক্রসফায়ারে মারা যায় কচুয়ার ছাত্রদল কর্মী শাহ পরান। ৩ ডিসেম্বর পুলিশের গুলিতে মারা যায় চাঁদপুর সদরের ছাত্রদল কর্মী তাজুল ইসলাম রতন।
১৭ অক্টোবর পুলিশের গুলিতে মারা যায় কচুয়া উপজেলার ছাত্রদল নেতা দেলোয়ার হোসেন দুলাল। ২৯ ডিসেম্বর পুলিশের গুলিতে মারা যায় চাঁদপুর সদর উপজেলা ছাত্রদল নেতা হাফেজ মনসুর রহমান। ২৬ মার্চ র্যাবের গুলিতে মারা যায় কচুয়ার বিএনপি নেতা মনি গাউস। ৫ জানুয়ারি পুলিশ ও র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয় শাহারাস্তি উপজেলার বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মজুমদার(তার লাশ হ্যান্ডকাফ লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায়)। ১৫ জানুয়ারি পুলিশের নির্যাতনে কাশিমপুর কারাগারে মারা যান শাহরাস্তি উপজেলার যুবদল কর্মী ওমর ফারুক। ২০১৪ সালের ৫ অক্টোবর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় মারা যায় ফরিদগঞ্জের ছাত্রদল নেতা হাফেজ হাসান শাহাদাত রুবেল।
একই বছরের ১ জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর ক্রসফায়ারে মারা যায় চাঁদপুর সদরের বিএনপি কর্মী ফারুক পাটোয়ারী। ৫ জানুয়ারি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় মৃত্যু হয় কচুয়া উপজেলা বিএনপি কর্মী বিল্লাল হোসেনের। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহতাবস্থায় পুলিশ আটক করে মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এহসানুল হক ফটিক কে। কারাগারে বিনা চিকিৎসায় গুরুতর অসুস্থ হলে জামিনে বের হয়ে আসার পর তার মৃত্যু হয়।
এছাড়া মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না থাকলেও চাঁদপুর জেলা বিএনপির পরিসংখ্যানে আরো উল্লেখ করা হয়; পুলিশের গুলিতে চাঁদপুর সদরের বিএনপি কর্মী মাহফুজ খান, ফরিদগঞ্জের বিএনপি কর্মী গফুর কারি, আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিএনপি কর্মী গোলাম মাওলা বিপুল, চাঁদপুর সদরের বিএনপি নেতা মনোয়ার জাহিদ সিয়াম, কচুয়া উপজেলার ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনির হোসেন, মতলব দক্ষিণ উপজেলার ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব প্রধান, হাজীগঞ্জ উপজেলার বিএনপি কর্মী শহীদ ইউসুফ গাজী ও হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি নেতার শেখ সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী লতিফা বেগম মারা যান।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সলিমুল্লাহ সেলিম বলেন, যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল রাজপথ, বিএনপি তাদের কখনো ভুলবে না। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঈদসহ বিভিন্ন উৎসবে তাদের পরিবারে উপহার দিয়ে থাকেন। এছাড়া স্থানীয় বিএনপি তাদের পূর্ণবাসনে সব সময় পাশে আছে।