ফরিদগঞ্জ পৌরসভার চেক বই দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন মেয়র কন্যা নাজমুন্নাহার

স্টাফ রির্পোটার: ফরিদগঞ্জ পৌরসভা অফিসের চেকবই ছিনিয়ে নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো টাকা হাতিয়ে নিতেন মেয়র কন্যা নাজমুন্নাহার অনি।

মেয়র কন্যার জিম্মায় চেকবই থাকায় সময়মতো বেতন থেকে বঞ্চিত হতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। প্রতিবাদ করলে করা হতো মারধর ও চাকরিচ্যুত। প্রতিবাদ করে মেয়রের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন পৌরসভার অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী।

নাজমুনন্নাহার অনি তিনি একাধারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারীর কন্যা, ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত এএসপি রাহুল পাটওয়ারীর বোন ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী, আইনজীবী ও তথাকথিত সাংবাদিক। কখনো গাড়িতে সাংবাদিক, কখনো পুলিশ লেখা স্টিকার লাগিয়ে পুলিশের হর্ন বাজিয়ে যাতায়াত করতেন নিয়মিত।

১৪ মার্চ ২০২১ সালে নাজমুনন্নাহার অনির পিতা ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়রের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার গাড়ির মালিক বনে যান। পৌরসভার ৫জন কর্মচারী নিয়োগে হাতিয়ে নেন ২৮ লক্ষাধিক টাকা। বাজার ও বাসস্ট্যান্ড ইজারা বাবদ হাতিয়ে নিতেন প্রতি বছরে ১০ লাখ টাকা।

শুধু মাত্র ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ভুয়া কাগজপত্র ব্যবহার করে ফাতেহা এন্টারপ্রাইজের নাম ব্যবহার করে কোটিরও বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন পৌর ক্যাশিয়ার মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।

প্রকল্পের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে আজিজ ব্রাদার্সের কাছ থেকে নিয়েছেন ২৭ লাখ টাকা। প্রকল্পের একাংশের ১১ কোটি ৬৮ লাখ টাকার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসএস রহমান থেকে সিংহভাগ কাজ হাতিয়ে নেন মেয়র কন্যা নাজমুন্নাহার অনি।

মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী পৌর মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণের পরের বছর আগস্ট ২০২২ সালে অফিস থেকে সকল চেক বই ছিনিয়ে নিয়ে যান অঘোষিত মেয়র বলে খ্যাত মেয়র কন্যা নাজমুন্নাহার অনি। নিজের ইচ্ছামতো চেকের ব্যবহার করে হাতিয়ে নিয়েছেন পৌরসভার কোটি কোটি টাকা। সে সময় তার পরিবারের ক্ষমতার দাপটে কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পাননি। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখালে শারীরিকভা হেনস্তার শিকার হয়েছেন। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া ক’জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে বাকিদের দমিয়ে রেখেছেন।

পৌরসভার সকল কাউন্সিলরকে বাদ দিয়ে নিজের ইচ্ছামতো টিসিবির কার্ড বিতরণ করতেন তিনি। এ নিয়ে কয়েকবার কাউন্সিলররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। টিসিবির কার্ড তার কাছে থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাহত হয়েছে টিসিবির পণ্য বিতরণ কার্যক্রম।

গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটভূমি পরিবর্তন হলে একে এক মুখ খুলতে শুরু করে ভুক্তভোগী অনেকে। ফরিদগঞ্জ পৌর ক্যাশিয়ার গিয়াসউদ্দিন ৪৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ডের একটি অডিও বক্তব্যে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেছেন।

পৌর প্রশাসক শাহ সুফিয়ান মেয়র কন্যার চেক বই ছিনিয়ে নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সে সময় আমরা ভয়ে প্রতিবাদ তো দূরের কথা, কথা বলতে পারিনি। দীর্ঘদিন পৌরসভার চেক বই তার কাছে ছিল, ৫ আগস্টের পর পৌরসভার অফিস সহকারী দীনেশের মাধ্যমে চেক বই অফিসে প্রেরণ করেন।

চেকবই ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে নাজমুনন্নাহার অনির মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত খবর