চাঁদপুর খবর রির্পোট: বিদায়লগ্নে চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম চাঁদপুরবাসীকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বুধবর (১৭সেপ্টেম্বর) চাঁদপুর জেলা পুলিশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জেলাবাসীকে বিদায়ী শুভেচ্ছা জানান বিদায়ী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বিপিএম, পিপিএম (বার)।
তিনি বলেন, গত ২৭ জুলাই ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন সূচকে দেশের অন্যতম জেলা চাঁদপুরে এসেছিলাম পুলিশ সুপার হিসেবে আপনাদের সেবা করতে। অধিকতর নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও বাসযোগ্য চাঁদপুর গড়া এবং পুলিশী কাজে হয়রানী কমিয়ে জনআস্থা বাড়ানো – এ ধরনের কিছু লক্ষ্য ঠিক করে কাজ শুরু করেছিলাম।
দায়িত্বপালনকালীন সময়ে আইন- শৃঙ্খলাজনিত নানাবিধ চ্যালেঞ্জ ছিল, কাজের ক্ষেত্রে ছিল নানা প্রতিকূলতা। তবে সহকর্মীদের সব সময়ই বলেছি সাধারন মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করতে, দ্রুত ও কার্যকর পুলিশী সেবা নিশ্চিত করতে এবং পুলিশের কাজে আস্থা ও সন্তুষ্টি বাড়াতে। এ সময়ে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল গঠন, অপরাধ প্রতিরোধ, দমন ও নিয়ন্ত্রণে গতিশীল পুলিশিং, মাদক, জঙ্গিবাদ ও জন হয়রানির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণসহ বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিং জোরদার করতে জনবান্ধব পুলিশিং বাস্তবায়ন, মামলা তদন্তে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ফৌজদারী বিচারে সাঁজার হার বাড়াতে সাধ্যমত প্রচেষ্টা চালিয়েছি। কতটুকু সফল হয়েছি সে বিচার আপনাদের।
তিনি আরো বলেন, আমার দায়িত্ব পালন কালে প্রজাতন্ত্র ও জনগণের কাছে জেলা পুলিশের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রামাণ্য দলিল হিসেবে নিয়মিতভাবে তুলে ধরার প্রয়াস থেকেই চাঁদপুর জেলা পুলিশের মাসিক পত্রিকা “অঙ্গীকার” প্রকাশ করা হয়। আপনাদের ভাবনা কিংবা মতামত সম্বলিত লিখনি এ প্রকাশনীকে সমৃদ্ধ করেছে, আর আমরা পেয়েছি আমাদের কাজের নতুন ধারণা এবং প্রেরণা। এছাড়া আপনাদের ভালোবাসা এবং আপনজন হিসেবে বরণ করে নেওয়ায় সাহস পেয়েছি, পেয়েছি কাজের শক্তি। আপনাদের সকলের প্রতি চির কৃতজ্ঞ।
দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন তথ্য ও কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্যদের স্মরণে ‘পুলিশ গ্যালারি’ ও পুলিশ মেমোরিয়ালস, পুলিশ সদস্যদের উজ্জীবিত করতে চাঁদপুর পুলিশ লাইন্সে আধুনিক ক্যান্টিন, সেলুন, বিনোদন কক্ষ, নারী ব্যারাক সড়ক সহ অবকাঠামোগত সংস্কার ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠনসহ পুলিশের কল্যাণমুখী কিছু কার্যক্রমের সূচনা করেছি। দেশপ্রেমের আদর্শে উজ্জীবিত থেকে জনতার সেবক হিসেবে সেবার সুমহান ব্রতে কাজ করতে সহকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি। অধিকতর নিরাপদ ও বাসযোগ্য চাঁদপুর গড়ে তোলার লক্ষ্যে সহকর্মীদের সহযোগীতা এবং নিরলস প্রচেষ্টায় তাদের কাছেও চির কৃতজ্ঞ।
সরকারি চাকরির সুবাদেই চাঁদপুরে আসা আবার স্বাভাবিক নিয়মের পরিক্রমায় বদলি সূত্রে বিদায়। তবে যাওয়ার সময় আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি চাঁদপুর আমার ভাণ্ডারকে হৃদ্য, সমৃদ্ধ করেছে, করেছে চির কৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ। বিদায় বেলায় চাঁদপুরের মৃত্তিকা, মানুষ, প্রকৃতি সবকিছুই যেন পিছু ডেকে বলছে আমায়- “হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা আজো তবে শুধু হেসে যাও,আজ বিদায়ের দিনে কেঁদো না”। চাঁদপুর আমাকে বিমোহিত করেছে, করেছে আলোকিত। চাঁদপুরের যেকোনো ইতিবাচক সংবাদে আমি আপনাদের সবার মতোই উচ্ছ্বসিত হবো, আর নেতিবাচক সংবাদে হবো সমব্যাথী। চাঁদপুর আমার স্মৃতিতে সতত ভাস্বর হয়ে থাকবে।
বদলী হওয়ার পর কিছুটা স্বার্থপর চিন্তা থেকেই তড়িগড়ি করে চলে আসা। অনেকের সাথে দেখা করার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয়ে উঠেনি। আমার সময়- সুযোগ থাকলে কালীবাড়ী, বাবুরহাট কিংবা জনাকীর্ণ বিভিন্ন মোড়ে দাড়িয়ে আপনাদের সবার সাথে হাত মিলিয়ে আসতাম। আপনারা ভাল থাকবেন, আমার জন্য দোআ করবেন এবং মনে রাখবেন আমাকে। আবার আসা হবে কিনা জানিনা তবে কাজের ফাঁকে, অবসরে কিংবা আজ থেকে বহু বছর পরেও হয়ত আনমনে আমার নিশ্চয়ই মনে পড়বে আপনাদের কথা।