স্টাফ রিপোর্টার: চাঁদপুর শহরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের বিতর্কিত এক খণ্ডকালীন প্রভাষকে বলপূর্বক পুনঃনিয়োগের অভিযোগ করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
কুমার গৌরব নামে আইসিটি বিভাগের খণ্ডকালীন এ শিক্ষক প্রায় দেড় বছর আগে বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগে স্বেচ্ছায় কলেজ থেকে পালিয়ে যায়। বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পতনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে তিনি পুনঃনিয়োগের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এমন অভিযোগ এনে বৈষম্যবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি (অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর লিখিত আবেদন জমা দিয়েছে। সেখানে বিতর্কিত এই শিক্ষকের পুনঃনিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে ৩ দিনের আল্টিমিটার দেওয়া হয়।
গভর্নিংবডির সভাপতি বরাবর দাখিল করা আবেদন পত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘কুমার গৌরব খণ্ডকালীন প্রভাষক থাকাকালীন প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট, ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং এবং প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এমন অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় গত বছর প্রতিষ্ঠান থেকে পালিয়ে চলে যান।
এদিকে গত ৫ই আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সুযোগে ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তির সহযোগিতায় অবৈধভাবে জোর-জবরদস্তি করে অধ্যক্ষ মহোদয়কে চাপ সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানে কোন পদ খালি না থাকা সত্ত্বেও ঐ বিতর্কিত শিক্ষককে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য করে।’
লিখিত অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বর্তমান সময়ে কোন শিক্ষককে জোর পূর্বক অপসারণ বা নিয়োগ দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে যে, উক্ত বিতর্কিত খণ্ডকালীন শিক্ষককে জোর পূর্বক নিয়োগ দেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনী। অনতিবিলম্বে উক্ত বিতর্কিত শিক্ষককে পুনঃনিয়োগ না দেয়ার অনুরোধ করছি। এই যৌক্তিক দাবী আগামী ৩ কর্ম দিবসের মধ্যে না মানলে কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য থাকবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক কুমার গৌরব জানান, ২০২৩ সালে একটি কারণে তিনি কলেজ থেকে চলে গিয়েছেন। স্থানীয় লোকজনের দাবির প্রেক্ষিতে পুনরায় কলেজে যোগদান করেছেন। শিক্ষার্থী কিংবা শিক্ষকরা না চাইলে তিনি এখান থেকে সরে যাবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক কুমার গৌরব কমার্সে ছাত্র হয়েও আইসিটির প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি যোগদানের পর কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রুপিং সৃষ্টি করেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ এবং সাবেক এক মন্ত্রীর ভাইয়ের আস্থাভাজন দাবি করে, কলেজে প্রভাব বিস্তার করতেন।
আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের জোর করে তার কাছে কোচিং পড়তে বাধ্য করতেন। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এছাড়াও তার অনার্সের সার্টিফিকেট নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। বর্তমানে তিনি সরকার পরিবর্তনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভুল বুঝিয়ে কলেজে পুনঃনিয়োগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও বর্তমানে উক্ত পদে সরকারিভাবে এমপিও ভুক্ত একজন শিক্ষক নিয়োগপ্রাপ্ত রয়েছেন।
এ বিষয়ে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে বাবুরহাট কলেজের আইসিটি বিভাগের খন্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান কুমার গৌরব। ২০২৩ সালে তার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠলে, তিনি স্বেচ্ছায় কলেজ থেকে চলে যান। ১ সেপ্টেম্বর স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে তাকে কলেজে নেয়া হয়েছে।
অপরদিকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তার পুনঃনিয়োগ বাতিলের দাবিতে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে সভাপতি মহোদয় এ বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি এবং চাঁদপুরে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বশির আহমেদ জানান, বাবুরহাট কলেজের সাবেক খন্ডকালীন প্রভাষক কুমার গৌরবের পুনঃনিয়োগ না দেয়ার জন্য বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি আবেদন পত্র পেয়েছি। এ বিষয়ে বিধি-নিতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলেজ অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে।