চাঁদপুর খাদ্য গুদাম ও জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৫ বছর আ’লীগ সিন্ডিকেটের দখলে!

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর সিএসডি গোডাউন(জেলা খাদ্য গুদাম) ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বিগত ১৫ বছর পতিত আওয়ামী ঠিকাদার সিন্ডিকেটের দখলে ছিলো। মুষ্টিমেয় কয়েকজন ঠিকাদার ঘুরে ফিরে টিআর, কাবিখার ডিও ও আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল বসানো এবং ওয়াসব্লক নির্মান কাজ ভাগিয়ে নিতো।

খাদ্য গুদামের চাল কালোবাজার বিক্রি ও আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল বসানোর কাজে ব্যাপক অনিয়ম করে গত ১৫ বছরে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তারা। সিন্ডিকেটের মূলহোতা ছিলো চাঁদপুরের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের গুটি কয়েক নেতা। মাঠ পর্যায়ে দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার পক্ষ থেকে ব্যাপক অনুসন্ধানে এমন তথ্যই বের হয়ে এসেছে।

জানা গেছে,চাঁদপুর সিএসডি গোডাউন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর অফিসের অবস্থান পাশাপাশি। সিন্ডিকেটের বেশীরভাগ সদস্যরাই দুটি অফিস এক সাথে নিয়ন্ত্রন করতো। এ কারনে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল ও ওয়াসব্লক কাজ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে ছিলো।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কয়েকজন ঠিকাদার সিএসডি গোডাউনের টিআর, কাবিখার ডিও এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল ও ওয়াসব্লক কাজ থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় নিয়ন্ত্রন করতো।

জানা গেছে, দীপু মনি সমাজকল্যান মন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর চাঁদপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সব কাজ তাঁর চাঁদপুরের এপিএস দাবী করা জনৈক বিতর্কিত ব্যক্তি সাইফুদ্দিন বাবুকে নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব দেন। দীপু মনির ডিও লেটার ছাড়াই সাইফুদ্দিন বাবুর স্বাক্ষরে আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল বরাদ্দ করা হতো। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা এমন তথ্যই নিশ্চিত করেন।

এসব সিন্ডিকেটের বাইরে কেউ খাদ্য গুদামের ডিও নিতে পারতো না। ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে তারা ডিও নিয়ন্ত্রন করতো। সিন্ডিকেটের হোতারা এখন আত্মগোপনে থাকলেও ক্ষমতার পালাবদলে ভর করছে নতুন ও পুরান সিন্ডিকেট। সিএসডি গোডাউনের চাল কালোবাজার বিক্রি হয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। যদিও অসংখ্যবার চালানসহ চাল চাঁদপুর শহর কিংবা পাশ্ববর্তী হাজীগঞ্জ উপজেলায় আটক হলেও তদবিরের কারণে তদন্তে আলোর মুখ দেখেনি। এমন ঘটনাও ঘটেছে, চট্টগ্রাম থেকে চালের চালান চাঁদপুর সিএসডি গোডাউন গেলেও পুরো চালান কালোবাজার বিক্রি করে দিয়েছে ঐ চক্র।

করোনাকালীন সময়ে চাঁদপুর জেলা কারাগারের চালের একটি চালানও তারা কালোবাজারে বিক্রি করে দেয়। ঐ ঘটনার দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকায় ছাপা হলে হইচই পড়ে যায়।

অভিযোগ রয়েছে , চাঁদপুরের প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা জনৈক সিন্ডিকেটের অন্যতম ঠিকাদার ওমর পাটোয়ারী ও জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম ঠিকাদার তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটওয়ারী খাদ্য গুদামের চালের ডিও ও চালান নিয়ন্ত্রন করতো বলে মাঠ পযায়ে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছো। চাঁদপুর খাদ্য গুদামের সিন্ডিকেটের অন্যতম নেতা ছিলো আওয়ামলীগের এই দুজন নেতা । খাদ্য গুদামের যে কোন অনিয়মের নিউজ সাংবাদিকদের কাছে আসলে তারা ধাপাচাপা দিতে তৎপর হয়ে উঠেন এবং নিউজ না করতে বাধ্য করেন,চাপ সৃষ্টি করেন । তার ভাগ্নে সিএসডি গোডানের শ্রমিক নেতা ।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, চাঁদপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রতিটি কাজ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হাজীগঞ্জের রুহিদাস বণিক টেড্রার্স, মেসার্স শামীম ট্রেডার্স, মতলবের সোহেল, চাঁদপুরের মেসার্স ওমর পাটোয়ারী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রনে ছিলা। এসব সিন্ডিকেটের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যম আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল ও ওয়াসব্লক কাজ পেতো। এসব কাজ বাস্তবায়নে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযাগ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল বসানো ও ওয়াসব্লক নির্মাণে নিয়মনীতির তোয়াক্কা করতো না তারা। কাজে নানান অনিয়ম থাকলেও ঠিকাদারী সিন্ডিকেট অফিস ম্যানেজ করে বিল ঠিকই তুলে নিতো।

চাঁদপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জনৈক কর্মকর্তা জানান, কয়েকজন ঠিকাদার ঘুরে ফিরে আর্সেনিকমুক্ত ডিপ টিউবওয়েল বসানো ও ওয়াসব্লক নির্মান কাজ পেতো। কেউ এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পেতো না।
এদিকে দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার পক্ষ থেকে উক্ত দুটি অফিসের বিগত ১৫ বছরের দুনীতি ও অনিয়ম নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে ।

সম্পর্কিত খবর