শামীম আহম্মেদ জয় : মতলব উত্তর উপজেলাধীন অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিঃ ছেংগারচর বাজার থেকে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙ্গে ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে লাপাত্তা ক্যাশিয়ার দীপংকর ঘোষ।
এ ঘটনায় অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিঃ ছেংগারচর বাজার শাখার ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে- ব্যাংকের ক্যশিয়ার দীপংকর ঘোষ। সে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামের বলাই ঘোষের পুত্র।
মামলার এজাহার সূত্রে জানাযায়, বিবাদী দীপংকর ঘোষ বিগত ১৮ জুলাই ২০২২ তারিখ হতে আমার শাখায় অফিসার (ক্যাশ) হিসেবে কর্মরত আছে আছে। ব্যাংকের ১টি চাবি তাহার কাছে রক্ষিত থাকে। গত ২১ আগস্ট ২০২৪ তারিখে আমাদের হেড অফিসের আভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিনিধি দল অত্রাফিস নিরীক্ষা করে ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী যথাযথ পান।
পরবর্তীতে যথারীতি অত্র ব্যাংকের ব্যাংকিং কার্যক্রম চলমান থাকে। গত ২৯ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখ সাপ্তাহিক কর্মদিবসে বর্ণিত বিবাদী অফিসে না আসলে তাহার সাথে মোবাইল নাম্বার ০১৭২০০৩২০৬১/০১৮৩২৯৯৯৯৭৭ এ কল দিলে তিনি জানান যে, তাহার পিতা অসুস্থ হওয়ার কারণে অফিসে আসতে দেরি হবে। কিন্তু দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অফিসে না আসলে পুনরায় বিবাদীর মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করিলে তাহার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
একপর্যায়ে বিবাদীর প্রকৃত অবস্থান জানার জন্য তাহার স্ত্রী আখি সাহা এর মোবাইল নম্বর ০১৬২২-৭৪৬০৭৪ এ কথা বলিলে তিনি জানান যে, বর্ণিত বিবাদী বেলা অনুমান ১২ ঘটিকার সময় অফিসের উদ্দেশ্যে ঢাকার বাসা ত্যাগ করেন। ইতিমধ্যে অফিসে নিরাপত্তা দায়িত্বে কর্মরত বিশেষ আনসার ৩ নং স্বাক্ষী জানান যে, বর্ণিত বিবাদী গত ২৮ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখ রাত আনুমান ১১টার সময় অফিসে প্রবেশ করেন এবং তাহার ডেক্সে কিছুক্ষণ কাজ করার পর, তাহার জিম্মায় থাকা ভল্টের চাবি নিয়ে অফিস ত্যাগ করেন।
বর্ণিত বিবাদী বিকাল হয়ে গেলেও অত্র অফিসে উপস্থিত না হওয়ায় ব্যাংকের ভল্ট খোলা সম্ভব হয় নাই। বর্ণিত বিবাদীর এহেন কার্যকলাপে সন্দেহজনক পরিলক্ষিত হওয়ায় আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপায়ে বিবাদীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করিয়াও ব্যর্থ হওয়ার পর ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং ব্যাংকের ভল্টের থাকায় নগদ টাকা পরিমাণ যথাযথ আছে কিনা তাহা যাচাইয়ের নিমিত্তে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অফিসার ইনচার্জ মোতাবেক মতলব উত্তর থানার সাধারন ডায়েরী নং- ১০৫৮, তাং- ৩০/০৮/২০২৪ ইং তারিখ দায়ের করি।
অদ্য ৩১/০৯/২০২৪ ইং তারিখ উক্ত জিডির প্রেক্ষিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং থানা পুলিশের উপস্থিতিতে মিস্ত্রি দ্বারা ভল্টের ড্রিল গেট কেটে এবং চাঁদপুরস্থ প্রধান শাখায় রক্ষিত ডুব্লিকেট চাবি দিয়ে ভল্ট খোলা হয়। পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং থানা পুলিশের উপস্থিতিতে গননা করে ভল্টে ২৭,৭৯,০৬৮.৭১/-(সাতাশ লক্ষ উনাশি হাজার আটষট্টি টাকা একাত্তর পয়সা) সরেজমিনে পাওয়া যায়। অত্র ব্যাংকের ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী গত ২৮ আগস্ট ২০২৪ ইং তারিখ ক্যাশ পজিশন ১,০২,৯৯,০৬৮.৭১/-(এক কোটি দুই লক্ষ নিরানব্বই হাজার আটষট্টি টাকা একাত্তর পয়সা) ছিল।
অর্থ্যাৎ ক্যাশ পজিশন অনুযায়ী গননাকালে ৭৫,২০,০০০/- (পচাত্তর লক্ষ বিশ হাজার) টাকা কম পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে অফিসের সকল স্টাফদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, বর্ণিত বিবাদী বিগত কিছুদিন যাবত থেকে বহন করা জন্য কাঁধের ব্যাগ নিয়ে আসতো এবং উক্ত ব্যাগ নিয়ে অফিস ত্যাগ করত। বর্ণিত বিবাদী অত্র ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকায় ব্যাংকের ভল্টের একটি চাবি তাহার নিকট রক্ষিত থাকতো।
আমার ধারণা, উক্ত চাবিসহ বিভিন্ন কূটকৌশল অবলম্বন করে সে নিজে বা অজ্ঞাতনামা বিবাদীগণ একই উদ্দেশ্যে বর্ণিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে প্রতারনামূলক ভাবে ৭৫,২০,০০০/-(পঁচাত্তর লক্ষ বিশ হাজার) টাকা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করতঃ আত্মসাত করিয়া পলাতক রহিয়াছে।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি লিমিটেড ছেংগারচর বাজার শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইউসুফ মিয়া জানান, আমি বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি মামলা করেছি। ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে অডিট করে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে মতলব উত্তর থানার ওসি (তদন্ত) মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, এ ব্যপারে মতলব উত্তর থানায় ৪০৯/৪২০/৩৪ পেনাল কোডে মামলা রুজু করা হয়েছে।