মাঠ প্রশাসনের ডিসি পদে আসতে আলোচনায় যারা

স্টাফ রিপোর্টার : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিতে ফিটলিস্ট তৈরির কাজ করছে সরকার। মাঠ প্রশাসনে নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ চলতি সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এরই মধ্যে ২৫ জেলা থেকে ডিসি প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে পদগুলো এখনো শূন্য। কিন্তু বিগত সরকারের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নানা কৌশলে মাঠ প্রশাসনের ডিসি পদ ভাগানোর জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। বঞ্চিতরা যাতে সামনে গুরুত্বপূর্ণ পদে না আসতে পারে এজন্য নানা ফন্দিও করছেন প্রশাসনের বিগত ১৫ বছরের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় একমাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে বিগত সরকারের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। সূত্র মতে, সচিব ও সচিব পদমর্যাদার ৭২ জন কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র ছয় জন কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে এবং বাকি সবাই আগের অবস্থানে থেকেই কাজ করছেন। তাদের অনেকেই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২০শে আগস্ট ২৫টি জেলার জেলা প্রশাসক বদলি করা হলেও মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। বিসিএস ২৪তম, ২৫তম ও ২৭তম ব্যাচের বঞ্চিত কর্মকর্তারা এ পদে যেতে আগ্রহী হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের চুক্তিতে নিয়োগকৃত মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাক্ষাৎকার গ্রহণের নামে সময়ক্ষেপণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়সী কোনো কর্মকর্তাকে ডিসি পদে পদায়িত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও ডিসি পদে নিয়োগ দিতে বিসিএস ২৪ ও ২৫তম ব্যাচের ৫০ বছরের ঊর্ধ্বে অনেক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে বিধায় প্রশাসনে কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ফলে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা তদবিরের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পদায়নের চেষ্টা করছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে। ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে পদায়ন পেয়ে যেতে পারেন বলেও বঞ্চিত কর্মকর্তারা মনে করছেন।

জানা যায়, মন্ত্রিপরিষদের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার খুব কাছের ব্যক্তি হওয়ায় ঢাকার সাবেক এডিসি (এলএ) মো. তানভীর আহমেদ (১৫৭১১)কে ঢাকা জেলার ডিসি করার জন্য চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, ২৪তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্য মো. তানভীর আহমেদ (১৫৭১১) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে মোনাজাত করা সেই বিতর্কিত চট্টগ্রাম ও ঢাকার ডিসি মোমিনুর রশিদের ভাগ্নে। ঢাকা জেলার এডিসি হওয়ার পূর্বে তানভীর আহমেদ প্রখ্যাত আইন সচিব জহিরুল ইসলামের পিএস হিসেবে কাজ করেছেন।

তিনি ২০১৫ সালের তৎকালীন জনপ্রশাসন মন্ত্রীর এপিএস সাজ্জাদুল ইসলাম শাহীনের আত্মীয় এবং বর্তমানে কেবিনেট ডিভিশনে কর্মরত। এ বিষয়ে তানভির আহমেদ বলেন, আমি কোনো বিশেষ সুবিধাভোগী ব্যক্তি নই। আমার জানামতে গত সরকারের ডিসি ফিট লিস্টের পরীক্ষায় আমি সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হই। তথাপি আমাকে পদায়ন করা হয়নি। আমি নিজস্ব বিষয়ে তদবিরে অভ্যস্ত নই। ব্যাচের নেতৃত্বও আমার আকাংখিত নয়। কিন্তু আমরা চাইনা আগে যেমন ব্যাচের কয়েকজনের হাতে সবকিছুর কবজা-নিয়ন্ত্রণ ছিল এখনো তার পুনরাবৃত্তি হোক।

তিনি বলেন, আমি কখনোই সচিব জহিরুল ইসলামের পিএস ছিলাম না। শাহীন আমার কোন আত্মীয় না। ২২ ব্যাচের ফার্স্ট মমিনুর রহমান সম্পর্কে আমার মামা হন। তার বাবা আমার নানুর চাচাতো ভাই।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, জনগণের আস্থাহীনতার কারণে ২০শে আগস্ট ২৫টি জেলা থেকে জেলা প্রশাসক প্রত্যাহার করা হলেও এখনো নতুন ডিসি পদায়ন করা সম্ভব হয়নি।

বিগত সরকারের আমলে তৈরি করা ডিসির ফিটলিস্ট বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবির মুখে বাতিল করা হয়। ডিসি নিয়োগের লক্ষ্যে ৬১৭ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতিমধ্যে ৫০০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। ডিসি পদে নিয়োগ পেতে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা বেশ তৎপর। বিশেষ করে সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবরা (পিএস) ডিসি হওয়ার জন্য নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর পিএস মোহাম্মদ আল আমিন,

পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামের পিএস মো. আদুল হামিদ মিয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের পিএস রেয়াজুল হক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর পিএস রোকন-উল হাসান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর পিএস নুর আলম,

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের পিএস সাব্বীর আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নওফেল চৌধুরীর পিএস মো. নাহিদ ইসলাম, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরার পিএস মো. হাবিবুর রহমান, বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর পিএস আব্দুল জলিল, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর পিএস মোহাম্মদ মিকাইল প্রমুখ।

 

সম্পর্কিত খবর