প্রবাসীর ইমো হ্যাক করে সাধারণ মানুষ থেকে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা

সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : বিদেশ থেকে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে এখন আর কোনও প্রবাসী সরাসরি ফোন কল করেন না। ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীরা কথা বলেন, মেসেজ আদান প্রদান করেন।

এসব মোবাইল অ্যাপলিকেশনের মধ্যে ‘ইমো’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। আর ইমো ব্যবহারকারী প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রবাসী ও তাদের স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারক চক্র।

ইমো’ সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন প্রবাসী ও তাদের পরিবার। তাই প্রতারক চক্রের টার্গেটও তারা। প্রবাসীরা তাদের পরিবার থেকে দূরে থাকেন, তাই পরিবার নিয়ে তাদের আবেগ অনুভূতিও বেশি। সে কারণে পরিবার কেন্দ্রিক যে কোনও ঘটনায় তারা যাচাই ছাড়াই সাড়া দেন। বিশ্বের এক প্রান্তে প্রবাসী আরেক প্রান্তে তার পরিবার। ফলে কোনও ঘটনা যাচাই-বাছাই করার আগেই প্রতারক চক্র তাদের প্রতারণা সেরে নিতে পারে।

রমিজ উদ্দিনের কাতার থাকেন। হঠাৎ একদিন আজিজুলের ইমো নম্বর থেকে রমিজ উদ্দিনের কাছে মেসেজ আসলো। আজিজুল লিখেছেন, তার একটু সাহায্য দরকার। ১২ হাজার টাকা ধার চাইলেন আজিজুল, দ্রুত ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে একটি বিকাশ নম্বর দিলেন। বিপদের কথা শুনে রমিজ উদ্দিন দ্রুত সেই নম্বরে ১২ হাজার টাকা পাঠালেন।

চাঁদপুর শহরের জামাল মিয়ার ইমো’তে মেসেজ আসলো। সেখানে কবির লিখেছেন, মা অসুস্থ, হাসপাতালে নিতে হবে, দ্রুত টাকা দরকার। একটা বিকাশ নম্বর দিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাইলেন কবির। জামাল মিয়া দ্রুত ৩০ হাজার টাকা বিকাশ করলেন। এভাবে আরও কয়েকজন আত্মীয়ের ইমো’তে টাকা চেয়ে মেসেজ গিয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই টাকা দিয়েছেন।

এছাড়াও প্রবাসীদের টার্গেট করে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে ইমো প্রতারক চক্র। একটা সময় মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা এ চক্রের টার্গেট হলেও এখন ইউরোপ প্রবাসীদেরও টার্গেট করে প্রতারণা বাড়িয়েছে চক্রটি। প্রবাসীদের ব্যক্তিগত ইমো অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে এবং আড়িপেতে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের অর্থ। অন্যদিকে প্রবাসের কষ্টার্জিত অর্থ খোয়াচ্ছে প্রবাসীরা। দেশের সাধারণ মানুষের অ্যাকাউন্টও হ্যাক করে প্রতিনিয়তই ঘটছে প্রতারণার ঘটনা।

একাধিক প্রবাসী জানান, প্রবাসীরা সাধারণত দেশের কারো কাছে টাকা চাইলে কেউ না করে না। এই সুযোগে প্রতারকরা ইমোতে বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বার্তা পাঠিয়ে বিকাশ নাম্বার দিয়ে আর্থিক প্রতারণা করেই যাচ্ছে। তবে কোনো ভুক্তভোগী যদি অভিযোগ করেন তাহলেই কেবল এ চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ। অন্যথায় পুলিশ প্রশাসনের এসব তথ্য জানার সুযোগও থাকে না।

সাইবার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা ইন্টারেনেটের মাধ্যমে দেশে থাকা প্রবাসীর পরিবার ও প্রবাসীদের নম্বর সংগ্রহ করে একটি বিশেষ কোড বা পাসওয়ার্ড পাঠিয়ে প্রতারণার কৌশল নেয়। এরপর সেই ইমো আইডি হ্যাক করে। প্রতারকরা বেশিরভাগ সময়ই দূতাবাসের কর্মকর্তা পরিচয়ে কল দেয় প্রবাসীদের কাছে এবং দেশে পরিবারের কাছের বন্ধু সেজে মেসেজ পাঠায়। ইমো অ্যাকাউন্টটি তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলেই সাধারণত ওই অ্যাকাউন্টধারীর আত্মীয়-স্বজনের কাছে কল করে বা ম্যাসেজ পাঠিয়ে বিপদে থাকার কথা বলে টাকা ধার চায়।

কিন্তু একটু সচেতন হলেই এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সন্দেহ হলেই বিদেশে থাকা প্রকৃত ব্যক্তির সঙ্গে ইমো ছাড়া অন্য কোনো উপায়ে যোগাযোগ করতে হবে। দেশের কোনো ইমোর মাধ্যমেও যদি এমন মেসেজ আসে তাহলেও অন্য কোনো উপায়ে প্রকৃত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাহলেই সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে এবং প্রতারণা থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। এছাড়া কেউ কল দিলে বা মেসেজের মাধ্যমে কোনো লিংক পাঠালে লিংকে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরাও। এদিকে দেশে মাঝে মধ্যে দু-একজনকে গ্রেপ্তার করা গেলেও বিদেশের প্রতারকরা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সম্পর্কিত খবর