অবশেষে চাঁদপুর মডেল থানার বিতর্কিত ওসি শেখ মুহসীন আলমের বদলী

চাঁদপুর খবর রিপোর্ট : আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগকৃত বিতর্কিত ও আলোচিত বদলীকৃত চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুহসীন আলম গত ২৬ আগষ্ট গভীর রাতে কর্মস্থল ত্যাগ করেছেন । তিনি বদলীকৃত নতুন কর্মস্থলে একমাস পর টুরিস্ট পুলিশে যোগদান করেছেন ।

বিষয়টি খোদ বদলীকৃত ওসি শেখ মুহসীন আলম নিজে দৈনিক চাঁদপুর খবরকে হোয়াটসঅ্যাপ ফোন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ।

তিনি বলেন, পূর্বেই পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে আমাকে টুরিস্ট পুলিশে বদলীর আদেশ করা হয়েছে ।

(২৬ আগষ্ট দিবাগত রাত ১২টা ২০মিনিটে) ওসি তদন্ত মীর রাজ্জাকের কাছে দায়িত্বভার দিয়ে বিদায় নেন ।

তিনি বলেন, সবার নিকট দোয়া চাই । ভূলক্রটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন বলে জানান । টুরিস্ট পুলিশে আমাকে বদলী করেছে । গতকাল ২৭ আগষ্ট টুরিস্ট পুলিশে যোগদান করবেন বলে আশা করছেন ।

ঢাকা পুলিশ হেডকোয়ার্টার সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের হেডকোয়ার্টার থেকে গত বিগত ৩০ জুলাই২০২৪ইং চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুহসীন আলমকে টুরিস্ট পুলিশে বদলীর আদেশ জারি করেন ।

উক্ত আদেশের একমাস পরে পুলিশ হেড কোয়াটারের আদেশ অনুযায়ী বদলীকৃত স্থানে গেছেন তিনি । যদিও তৎকালীন ওই বদলী আদেশের পর নানাভাবে তদবির করেন বদলীর আদেশ বাতিল করতে । সেই সময় চাঁদপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকেও বদলীর আদেশের কথা স্বীকার যাননি কেউ । বিষয়টি এড়িয়ে যান উর্ধ্বতন পুলিশ অফিসাররা ।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাবেক সমাজকল্যানমন্ত্রী ডা: দীপু মনির বডিগার্ডের মাধ্যমে তদবির করে শেখ মুহসীন আলম চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি (অফিসার ইচার্জ) হিসেবে যোগদান করেন ।

পরবর্তীতে চাঁদপুর থানায় একবছরের বেশী সময় ধরে চাকুরীকালীন নানা বির্তকে জড়ান তিনি । চাঁদপুর মডেল থানায় মাদক মামলায় আটক আসামীকে প্রায় সুবিধা পেয়ে ৩৪ ধারায় চালান দিতেন, এটা বেশ আলোচিত । আসামী আটক হওয়ার পর ভোরে বিশেষ সুবিধা নিয়ে ছেড়ে দিতেন । প্রশ্ন করাই যেতো না তাকে । দোষ পলাতেন এসআই ও এএসআইদের উপর ।

মডেল থানার বেশীর ভাগ এসআই ও এএসআই তার কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে । ডা: দীপু মনির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তৎকালীন বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি এবং মিথ্যা মামলায় জড়াতেন । আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে এবং সর্বশেষ আবারও ৪ আগষ্ট আন্দোলন চলাকালে চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের বাসভবনে হামলায় সময়ও তিনি নিরব ভূমিকা পালন করেন বলেও প্রশ্ন উঠেছে । বরং ওই সময় জেলা আওয়ামীলীগ অফিসে হামলার অজুহাত দেখিয়ে বিএনপির ৩০০ অজ্ঞাত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা এবং আরেকটি নাশকতার মিথ্যা এজহারে নাম দিয়ে মামলা দায়ের করেন ছাত্রদের বিরুদ্ধে ।

ওই সময় অনেক ছাত্র , বিএনপি-যুবদল ছাত্রদল , জামাত শিবিরের নেতাকমীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ।

এমনকি এইচএসসি পরীক্ষাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে তখন । প্রতিটি অনৈতিক কাজ ওসি শেখ মুহসীন আলমের নির্দেশে হয়েছে বলে অভিযোগ আছে ।

অভিযোগ রয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বাসস্ট্যান্ডে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের হামলার সময় মডেল থানার ওসি শেখ মুহসীন আলম নিরব ভূমিকা ছিলো, ছাত্রদের পাশে দাঁড়াননি । তবে তৎকালীন ডা: দীপু মনির বাসা বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজে আহত পর্যন্ত হোন । সর্বশেষ ৫আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আত্নগোপনে চলে যান এবং পরে সাংবাদিকরা জিজ্ঞাসা করলে বলেন মডেল থানাতেই ছিলেন ।

অভিযোগ রয়েছে চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সাথে তিনি প্রায়ই খারাপ আচারন করছেন । থানায় গেলে বসতেও বলতেন না । কোন তথ্য চাইলে তিনি ক্ষেপে যেতেন সাংবাদিকদের উপর । তথ্য চাইলেও এড়িয়ে যেতেন । কোন নিউজ করলে তিনি সাংবাদিকদের কৈফিয়ত চাইতেন কেন নিউজ করলো ।

গত একবছরে মডেল থানার নিউজ করাই ছিলো দায় । তবে নিজের প্রচারের জন্য কোন সংবাদ থাকলে তা হোয়ারসপে পাঠিয়ে দিতেন নিজের স্বার্থে । অবশেষে সেই বির্তকত বহুল আলোচিত ওসি শেখ মুহসীন আলম নিরবে বদলী হলেন এবং টুরিস্ট পুলিশে যোগদান করলেন ।

 

সম্পর্কিত খবর