স্টাফ রিপোর্টার : দেশে অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারনে বাংলাদেশের ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, লক্ষিপুরের বাসিন্দারা যখন বিশুদ্ধ খাবার পানি, নিত্য খাবার, আর এক খন্ড নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য হাহাকার করছে, ঠিক তখনই চাঁদপুরের বাগাদী ইউনিয়নের নানীপুর এলাকার স্লুইস গেটের ভেতরের এবং তৎ সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীর উপরের দৃশ্য সম্পুর্ন ভিন্ন। স্লুইস গেটের ভেতরে এবং ডাকাতিয়া নদীতে পেশাদার ও সৌখিন মৎস্য শিকারীরা দেশীয় পদ্ধতিতে দেদারছে মৎস্য শিকার করে চলেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যে, এই মাছ ধরার জন্য স্লুইস গেট এলাকার পুলের দু পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে পথচলতি মানুষদেরকে বিড়ম্বনার স্বিকার হতে হচ্ছে। অত্র এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা কেউ নৌকার উপর কেউবা ভেলার উপর থেকে ঝাকি জাল ফেলে, কেউবা ষোল শিকের চার শিকের টেটা দিয়ে মৎস্য শিকার করছেন। যার অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি মানের রুই কাতলা মৃগেল মাছের পোনা।
খবর নিয়ে জানা যায়, অনেক মৎস্য শিকারি দু তিন মন মাছও একদিনে শিকার করছেন। স্হানীয় বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ আজিজ মিজির কাছে জানতে চাওয়া হয় এতো মাছ আসলো কোথা থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে উনি জানান যে, গত এক সপ্তাহের অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন পেশাদার মৎস্য চাষীদের পুকুরের সব মাছ জলে ভেসে ডোবা নালা খাল বিল নদীতে চলে এসেছে। সেই মাছ গুলোই মানুষ এখন মহানন্দে ধরছে। ডাকাতিয়ার দু পাড়েই হাজারও মানুষ এভাবে মৎস্য শিকার করে চলেছে। এমন দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এ যেনো মৎস্য শিকারীদের মিলন মেলা বসেছে।
কেউ কেউ এসব মাছ ধরবার পরেই রাস্তার উপর বসেই এসব মাছ পাইকারি ও খুচরা মুল্যে বিক্রি করতে দেখা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় বাজারে এখন দেশীয় ঝাকি জাল এবং টেটার ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে। টেটা বানাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চান্দ্রা বাজারের সুমন ও জয়নাল। বর্তমানে তারা একটি টেটা ছয়শ টাকা হতে বারোশ টাকায় বিক্রি করছেন। যা গত পনেরদিন আগেও তিনশ হতে পাঁচশ টাকা ছিলো। সরেজমিনে আরও দেখা যায় যে এসব মৎস্য শিকারীরা শুধু নদীতেই মাছ ধরছে না, তারা বাগাদী স্লুইস গেট পাম্প হাউজের ভিতরে ঢুকেও জাল ফেলে এবং টেটা দিয়ে মাছ শিকার করছেন। যা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার জন্য অনেকটাই ঝুঁকিপুর্ন।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হয় চর বাগাদী পাম্প হাউজের সাবস্টেন্ড ইঞ্জিনিয়ার (এস. ও) শরীফ মাহমুদের সাথে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে, এভাবে স্থানীয় মৎস্য শিকারীরা যে আপনাদের পাম্প এরিয়ায় ঢুকে মাছ শিকার করছে তাতে করে আপনাদের স্হাপনার কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা? কিংবা এ বিষয়ে আপনি কোন পদক্ষেপ নিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে উনি জানান যে বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি, জেলা পুলিশের সহযোগিতা নিয়েছি।
ওনারে এসে তাদেরকে পাম্প এরিয়ায় ঢুকতে নিষেধ করে গেছেন। এবং আমি নিজে এসব মৎস্য শিকারীদের বারবার অনুরোধ করেছি তারা যেনো আমাদের পাম্প এরিয়ায় ঢুকে মাছ শিকার না করে এবং আমাদের নিয়মিত কাজের ব্যঘাত যাতে না ঘটায়। এবং আমি তাদের এটাও বলেছি যে, এখানে ঢুকে মাছ ধরতে গেলে আপনারাও যে কোন দূর্ঘটনার শিকার হতে পারেন। তার পরেও স্হানীয় বাসিন্দারা মাছ শিকার করে চলেছেন যা অনাকাঙ্খিত।