স্টাফ রিপোর্টার : মুজিব আদর্শ বা আওয়ামী লীগ বলয়ের পরিচিত জনতা ব্যাংক গণতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়ন চাঁদপুর জেলা শাখার দীঘ ১৫ বছরের সভাপতি মোঃ শরিফ উল্লা ২৪ ঘন্টা না যেতেই মুজিব আদর্শ বা আওয়ামী লীগকে ভুলে গিয়ে তিনি এখন হয়ে গেছেন বিএনপি নেতা।
জনতা ব্যাংক গনতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়ন রেজিঃবি-২০৮ (সিবিএ) সভাপতি বাদ দিয়ে অঘোষিত ভাবে নিজেই হতে চাচ্ছেন জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি। এজন্য তিনি তাঁর পূর্বের সংগঠনের কার্যালয় থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে টানিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি। আর প্রচার করছেন তাকে এখন কেন্দ্রীয় নেতারা এ দায়িত্ব দিয়েছেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে শরীফ উল্লার বিরুদ্ধে।
এনিয়ে জনতা ব্যাংক চাঁদপুর এরিয়ার সকল শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা গুঞ্জন। অপরদিকে দীর্ঘদিন জাতীয়তাবাদী আর্দশ কে লালন করা কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কোনো ভাবেই শরীফ উল্লাহর এ কর্মকাণ্ড মেনে নিতে পারছে না। ফলে এ ঘটনা নিয়ে এ ব্যাংকের কর্মচারীরা মুখোমুখি অবস্থায় রয়েছে।
জানাযায়, জনতা ব্যাংকের একজন পিয়ন হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন শরীফ উল্লাহ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর হঠাৎ করেই মুজিব আদর্শ বা আওয়ামী পন্থী হিসেবে সুকৌশলে আওয়ামী পন্হী জনতা ব্যাংক কর্মচারী ইউনিয়ন যার পুরো নাম জনতা ব্যাংক গনতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়ন, রেজিঃবি -২০৮ (সিবিএ) চাঁদপুর এরিয়ার সভাপতি হন। এর কিছু দিন পর হন
বঙ্গবন্ধু পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ( যা তিনি দু’বার এ দায়িত্ব পালন করেন)
এ দুটি পদের পর আর তাঁকে পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্ষমতার বাণিজ্যে তিনি হয়ে যান সর্বেসেরা।
পুরো নিয়ন্ত্রণে নেমে পড়েন
জনতা ব্যাংক চাঁদপুর অঞ্চলের সকল শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তাঁর কথামতো চলার হুমকি ধমকী চলে সার্বক্ষণিক। কোন শাখায় কে ব্যবস্থাপক হবেন, কোন কোন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকবে সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন তিনি। এক কথায় জনতা ব্যাংক চাঁদপুর এরিয়ার অঘোষিত মাফিয়া ডন বনে যান।
কর্মকর্তা কর্মচারীদের বদলী, পছন্দের স্হানে চাকুরী করা সব কিছু করতে হয়েছে শরীফ উল্লাহ কে ম্যানেজ করে। তাকে ম্যানেজ ছাড়া কোনো বদলী বা কর্মকর্তা কর্মচারীদের পছন্দের স্হানে চাকুরী করতে হলে উপটোকন দিতে হয়েছে তাঁকে, এক কথায় বদলী সহ সকল বানিজ্য চলে তাঁর কথায়। শুধু তাই নয়, জনতা ব্যাংক চাঁদপুর এরিয়ার কোনো শাখার বড় লোন পাস করতে হলে তাঁকে ম্যানেজ করতে হতো, এমন অভিযোগ ও রয়েছে। এছাড়া ভিন্ন মতাদর্শের কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং যারা তার কথা শুনতো না তাদের পোহাতে হতো নানা যন্ত্রণা। চলতো দমন নিপিড়ন, পরে টাকায় তাঁকে ম্যানেজ করতে হতো।
চাঁদপুরের সকল শাখার সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ছিলো শরীফ উল্লাহ।
এক পর্যায়ে আদিপত্য বিস্তার আরো বেশি ভাবে প্রবাহিত করার জন্য জনতা ব্যাংক চাঁদপুর এরিয়ার শাখার ডিজিএম অফিসে বা এরিয়া অফিসের তিনভাগের একভাগ দখল করে তিনি সেখানে গড়ে তোলেন সিবিএ কার্যালয় যা ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত কাজ।
সিবিএ কার্যালয় করার কাজে বাধা দেয়ায় তৎকালীন ডিজিএমকে নানা প্রতিকূলতা পার করতে হয়। একপর্যায়ে তিনি চাঁদপুর ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময়ে জনতা ব্যাংক চাঁদপুর এরিয়া অফিস বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন শ্রমিক লীগের অঘোষিত অফিস হিসেবে চলতো।
বিভিন্ন পর্যায়ের শ্রমিক লীগের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা গভীর রাত পর্যন্ত এখানে মিটিং করতেন এটিকে অনেকে বলতেন জাতীয় শ্রমিক লীগের কার্যালয়।
এ সকল অনিয়মের কাজে বর্তমান ডিজিএম মনিরুল আলম মজিব বাধা প্রদান করলে ডিজিএম এর রেস্ট রুমে তালা মেরে দেন শরীফ উল্লাহ। পরে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সেটি মীমাংসা হয়। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের জন্য যিনি কথায় কথায় নিজের জীবন বির্সজন দেওয়ার কথা বলতেন, যিনি বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচীতে ছিলেন অগ্রভাগে, দিয়েছেন নেতৃত্ব। আওয়ামী লীগের সভা সমাবেশে ব্যাংক কর্মচারী সিবিএ ব্যানারে নিয়ে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে যেতেন। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে যিনি দলের ব্যানারে সক্রিয় ছিলেন এবং সরাসরি পৌর বাসস্ট্যান্ডে ছাত্রদের উপর আওয়ামী লীগের হামলার ঘটনায় যিনি সশরীরে উপস্থিত ছিলেন তিনি কিভাবে ২৪ ঘন্টা না যেতেই মুখোশ পরিবর্তন করলেন তা নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা।
মাএ ১ দিন পর সেই সিবিএ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি নামিয়ে সেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি লাগিয়ে নিজেকে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা পরিচয় দেওয়ায় কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে ক্ষোভের দেখা দিয়েছে।
এদিকে জাতীয়তাবাদী আর্দশে বিশ্বাসী যে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীরা বিগত ১৫ বছর নানা ভাবে হয়রানি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাঁরা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছেন শরীফ উল্লাহ এহেন কর্মকান্ড। এ ঘটনা নিয়ে জনতা ব্যাংক চাঁদপুর এরিয়ার সকল শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
শুধু তাই নয়, শরীফ উল্লাহর বিগত ১৫ বছর কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপর চালানো সকল অন্যায় অনিয়ম ও অত্যাচারের বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। এবং জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়ন চাঁদপুরের বিগত ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রাখতে এ ধরনের মুখোশ পরিবর্তনকারীদের হাত থেকে সংগঠন রক্ষার আহবান জানান।
এদিকে শরিফ উল্লাহর অনিয়ম দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে এবং হঠাৎ করে মুখোশ পাল্টানো বিষয়ে চাঁদপুর জনতা ব্যাংক ডি জি এম মনিরুল আলম মুজিবের সাথে কথা হলে তিনি বলেন আমরা সব কিছু জানি তিনি এত তাড়াতাড়ি মুখোশ পাল্টাবেন এটা আমি আর কখনোই ভাবতে পারি না।
সিবিএ অফিস বিষয় তিনি বলেন, এটি কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না, এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। আইন বিধিবহির্ভূত। এ বিষয় পূর্বের ডিজিএম বলতে পারবেন।
তার অফিস রুমে তালা মারার বিষয়ে তিনি বলেন, ভাই এসব বিষয়ে কথা বলতে রাজি নয় কারণ তিনি এতটাই ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন যে আমরা ডিজিএম হিসাবে তার কাছে অসহায় অবস্থায় রয়েছি। তিনি কিভাবে নতুন করে একটি সংগঠনের সভাপতি হয়ে নেতৃত্ব দিতে চান সেটি আমি আমার জানা নেই।
এ সকল অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয়ে শরীফ উল্লার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন আমি আগে বিএনপি করেছি এখন বিএনপিতে আছি এতে সমস্যা কি? আমি রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করতে পারবো না, এটা কোনো কথা হলো না, কী? আমি তো বিএনপির লোক বিএনপিতে আছি অনিয়ম অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন এসব বিষয়ে এখন কথা বলার সময় নেই পরে কথা বলবো, অফিসে আসেন।
ছবির ক্যাপশন – আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময়ে নিজের ছবি দিয়ে করা শরীফ উল্লাহর পোস্টার।
২/
জনতা ব্যাংক গনতান্ত্রিক কর্মচারী ইউনিয়ন সিবিএ সাবেক কার্যালয় যা বর্তমানে জনতা ব্যাংক জাতীয়তাবাদী কর্মচারী ইউনিয়ন কার্যালয়ে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি।