চাঁদপুর সদর হাসপাতালে দায়িত্ব অবহেলায় শিশুর মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর সরকারি জেনারেল সরকারি হাসপাতালগুলোতে নার্স ও ডাক্তারদের অবহেলার কারণে রোগীদের মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে।

২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় সাফওয়ান নামের ২ মাসের শিশুর করুন মৃত্যু হয়েছে।

শিশু মৃত্যুর ঘটনায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে তৃতীয় তলায় শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ডাক্তার মাহবুব আলী, ডাক্তার আজিজ, অভিযুক্ত ডাক্তার তাওফিন আহমেদ, নার্স ইনচার্জ ফেরদৌসী আক্তার ও সিনিয়র নার্স শাহিনুর আক্তারকে অবরুদ্ধ করে রাখে রোগীর স্বজনরা।

খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার তদন্ত ওসি আব্দুর রাজ্জাক সেকেন্ড অফিসার হুমায়ুন কবির হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

ডাক্তার ও নার্সের অবহেলায় দুই মাসের শিশুর করুন মৃত্যুর ঘটনায় হাবিব খান বাদী হয়ে অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার তাওহীম আহমেদ, সিনিয়র নার্স রেপতি ঘোষ, শাহিনুর আক্তার ও তৃতীয় তালার শিশু ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ ফেরদৌসী আক্তার কে বিবাদী করে চাঁদপুর মডেল থানা একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
পরবর্তীতে সোমবার শিশুটির বাবা মোঃ হাবিব অভিযুক্ত চারজনের বিরুদ্ধে সিভিল সার্জেন্ট ও হাসপাতালে তত্ত্বাবধকের বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

গত রোববার দুপুরে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মৃত্যু বরণ করেন।

শিশুটি শহরের গুয়াখোলা এলাকার বাসিন্দা ও মীর শপিং সেন্টারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের ছেলে। প্রথম সন্তানকে হারিয়ে শোকাহত পরিবারটি।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঠান্ডাজনিত সমস্যা নিয়ে শিশু সাফওয়ানকে শনিবার রাত সাড়ে ১১ টায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রোববার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।

শিশুটির পিতা হাবিবুর রহমান জানান, শনিবার শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আজিজ কে শিশু সাফওয়ানকে দেখানো হয়। তার নির্দেশে হাসপাতালে সাফওয়ানকে ভর্তি করানো হয়। তবে রোববার দুপুরে শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার তাওহীম আহমেদ শিশুটিকে না দেখে মুখস্ত ঔষধ লিখে দেয়।

পরে সিনিয়র নার্স রেপতি ঘোষ, শাহিনুর আক্তার ও তৃতীয় তালার শিশু ওয়ার্ডের নার্স ইনচার্জ ফেরদৌসী আক্তারকে ঔষধ ও ইনজেকশন এনে দিলেও অবহেলা করেন। সময়মত ইনজেকশন পুশ করেননি। শিশুটিকে অবহেলা করে কেনলা না পরিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফ্রিরিজ ঢুকিয়ে ক্ষত করে শিশু সাফওয়ান কে ইনজেকশন দেওয়ায় সে নিল বর্ণ হয়ে মৃত্যু বরণ করে।

সুস্থ একটি শিশু মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলায় প্রাণ হারালো। এই ঘটনায় অভিযুক্ত চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে আমরা আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করার দাবি জানান।
এভাবেই দিনের পর দিন চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে অনেক রোগী চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেছে।

ঘটনার পরপর চাঁদপুর সদর মডেল থানার তদন্ত ওসি আব্দুর রাজ্জাক ও সেকেন্ড অফিসার মোঃ হুমায়ুন কবির ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরে তিনি ভূক্তোভোগীদের আইনী সহায়তা দেয়ার আশ্বস্ত করেন।

এদিকে হাসপাতালের দায়িত্বরত ডাক্তার মাহবুব আলী আজিজ, মেডিসিন ডাক্তার পীযূষ সাহা ও নার্স ইনচার্জ ফেরদৌসীর বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা ও টেস্ট করানোর জন্য তাদের পছন্দমত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠায়। শুধুমাত্র কমিশন বাণিজ্যের জন্যই এই অভিযুক্ত ডাক্তার ও নার্সরা চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে দিনের পর দিন দুর্নীতি করে যাচ্ছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ওষুধ কোম্পানির কমিশনের টাকা ডাক্তার এবং নার্স ইনচার্জ ভাগাভাগি করে নিচ্ছে।

যে সকল রোগীরা ডাক্তারদের পছন্দমতো ডায়গনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করায় না তাদের চিকিৎসা পত্র ছিড়ে ফেলছে ও হাসপাতাল থেকে সিট কেটে দিচ্ছে।

সম্প্রতি হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় মেডিসিন ডাক্তার পীযুষ সাহা ও তৃতীয় তালার শিশু ডাক্তার মাহবুব আলীর কথামতো টেস্ট না করানোর কারণে অনেক রোগীর সাথে দুর্ব্যবহার ও চিকিৎসা পত্র ছিড়ে ফেলেছে। তার বিরুদ্ধে এরকম ভুরিভুরি অভিযোগ রয়েছে। এ সকল অভিযুক্ত ডাক্তারদের বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর