বিয়ের দুই বছরের মাথায় চাঁদপুরে গৃহবধূর রহস্যজনক আত্মহত্যা

মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর সদরে সোনিয়া আক্তার (২০) নামে এক গৃহবধূ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। শনিবার (২৯ জুন) দিবাগত রাত ১২ টার দিকে উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড লোধেরগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সোনিয়া আক্তার একই এলাকার

ওহিদ মল্লিকের ছেলে মো. মাহবুব মল্লিক এর স্ত্রী। হত্যা নাকি আত্মহত্যা, এ নিয়ে রয়েছে দুই পরিবারের পাল্টা অভিযোগ।

নিহত সোনিয়া আক্তারের শাশুড়ী সালেহা বেগম জানান, তার ছেলে মাহবুব মল্লিক (২০) ও তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তার শনিবার সন্ধ্যায় তারা তাদের ঘরে একত্রে নাস্তা করেন। পরে মাহবুব তার কর্মস্থল বাড়ির পাশেই একটি মুরগীর ফার্মের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যান। কিছুক্ষণ পর রাতে বাড়িতে এসে খাবার খাওয়া শেষ হলে ১১টার দিকে ফার্মের মালিক কল দিলে আবারও চলে যায় ফার্মে। মাহবুবকে না যেতে অনুরোধ করেন তার স্ত্রী। কিন্তু ফার্ম থেকে মুরগী নামাতে হবে বিধায় চলে যেতে হয় তাকে।

রাত ১২টার দিকে বাড়ি এসে দেখেন ঘরের দরজা ভিতর থেকে আটকানো। অনেক ডাকাডাকির পর লাথি দিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে দেখে সোনিয়া ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। তখন ডাক চিৎকার করে তাকে নামিয়ে দেখেন সোনিয়া আর নেই। পরে ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে এদিন রাতেই পুলিশ এসে লাশ থানায় নিয়ে যান। কি কারনে এ ঘটনা ঘটতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে সালেহা বেগম বলেন, সোনিয়ার বাবার বাড়ির লোকজন গত কয়েকমাস তার সাথে যোগাযোগ রাখেনি। এমনকি তার একটি ভাই গত কিছুদিন আগে বিদেশে গিয়েছে, সেটি তার বোনকেও জানায়নি। তবে কি কারনে সে আত্মহত্যা করেছে তা কোনভাবেই বুঝতে পারিনি। কারন সন্ধ্যা ও রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে খুবই হাসাহাসির শব্দ শুনেছি।

এদিকে সোনিয়া আক্তারের নানি ও মামানিরা সাংবাদিকদের বলেন, তারা দুজনেই গত ২ বছর পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে পারিবারিকভাবে মেনে নিয়ে অনুষ্ঠান করে তাদের মেয়েকে তুলে দেন। এরপর থেকেই সোনিয়ার উপর শশুরবাড়ির অত্যাচার হতে থাকে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে ঝগরা হতো। একসময় আমরা তাকে কয়েক মাস যেতে দেইনি শশুর বাড়িতে। দীর্ঘদিন সোনিয়া তার বাবার বাড়িতে থাকার পর মাহবুব এসে নিয়ে যায়। কিন্তু গতকাল শনিবার রাতে আমাদের মেয়েটির মৃত্যুর খবর পর্যন্ত আমরা পাইনি। পরে পুলিশ ও ইউপি মেম্বার এসে আমাদের জানালে আমরা ঐ বাড়িতে যাই। গিয়ে দেখি ঘরের আড়া ও খাটের দূরত্ব খুব কাছাকাছি। এটি আত্মহত্যা হওয়ার কথা না। রবিবার সকালে দুই পক্ষ থানায় গিয়েছে। এদিকে নিহত সোনিয়ার স্বামী ও মা দুজনেই থানায় থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হত্যা নাকি আত্মহত্যা, বিষয়টির তদন্ত করতে রবিবার (৩০ জুন) সকালে ঘটনাস্থলে আসেন চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোঃ মহসিন আলম। তিনি বলেন, নিহত সোনিয়া ও তার স্বামীর বাড়ি একই এলাকায় কাছাকাছি। নিহতের স্বামী মাহবুব মল্লিকের বিরুদ্ধে ভরনপোষণের একটি মামলা রয়েছে। তিনি বলেন, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে নিহতের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এবং তদন্ত কার্যক্রম শেষে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত খবর