মতলব দক্ষিনে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় চাচাকে কুপিয়েছে দুষ্কৃতকারীরা

গোলাম সারওয়ার সেলিম ঃমতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী দক্ষিণ ইউনিয়নের ঘোড়াধারী গ্রামে ভাতিজিকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মোশাররফ হোসেন সবুজ বকাউল (৩৫) কে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করেছে রবিউলের নেতৃত্বে এলাকার কতিপয় দুষ্কৃতকারী যুবক।

আহত মোশাররফ হোসেন সবুজ বকাউল ওই ইউনিয়নের পূর্ব ঘোড়াধারী গ্রামের বশির উল্লাহ বকাউলের ছেলে। গত ৬মাস পূর্বে সে বাহরাইন থেকে দেশে ফিরে আসেন।বর্তমানে সে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন।এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে গত ২৭ জুন একই গ্রামের পুরান বাড়ী নামে পরিচিত আব্দুল হাইয়ের ছেলে রবিউলকে প্রধান আসামী করে মতলব দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

হাসপাতাল ও এলাকাসী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব ঘোড়াধারী গ্রামের রবিউলসহ তার সহযোগী ১০ থেকে ১৫ জন যুবক দীর্ঘদিন যাবৎ এলাকায় অপরাধমুলক কর্মকান্ড করে আসছে। বিশেষ করে এলাকার স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েদের আসা-যাওয়ার সময় উত্যক্ত করে আসছে।অসংখ্য অভিযোগের কারনে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার শালিসি বৈঠক হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

গত রমজান ঈদের আগে অত্র এলাকার ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলে যাওয়ার পথে মোবাইলে ছবি ধারন করে ওই ছবি দিয়ে টিকটক তৈরী করে যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছেড়ে দেয় রবিউলসহ তার সহযোগীরা।

এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় শালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকে রবিউলসহ তাদের সহযোগীরা দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাদেরকে শাস্তি দেয়া হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য শতর্ক করে দেয়া হয়।সে ঘটনার জের ধরে রবিউল দীর্ঘদিন যাবৎ ওৎ পেতে থাকার পর গত ২৩ জুন সন্ধ্যায় প্রবাসী মোশাররফ হোসেন সবুজ বকাউলকে ধাওয়া করে তার বসত ঘরে ডুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।

আহত মোশাররফ হোসেন সবুজ বলেন,গত ঈদ উল ফিতরের কয়েকদিন আগে তার ভাতিজীকে প্রায়ই উত্যক্ত করতো এবং অগোচরে মোবাইলে ছবি তোলে একই গ্রামের পুরান বাড়ীর রবিউলসহ তার সহযোগীরা।বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের জানানো হলে ইউপি সদস্যর মাধ্যমে শালিসি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে রবিউলসহ তার সহযোগীরা দোষী প্রমাণিত হলে তাদেরকে পঞ্চায়েত কমিটি শাস্তি প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন করা না হয় সে ব্যপারে শতর্ক করে দেয়া হয়।

শালিস ডাকার পর থেকে তারা আমাকে ক্ষতি করার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ সুযোগ খুজছিল।গত শনিবার ( ২৩ জুন) বিকালে এলাকায় দোকানের কাছ থেকে বাড়ী ফেরার পথে রবিউল সালাম রাকিব,শরীফ, নাজু,খালেক,আবুল খায়ের,হৃদয়সহ ১০/১২ জন তার পথ গতিরোধ করে। তাকে আক্রমণ করবে এমনটি বুঝতে পেরে হাতে থাকা মোবাইলে তাদের ছবি ধারন করার চেষ্টা করলে তাকে ধাওয়া করে।পরে সে দৌড়ে বাড়ী চলে গেলে তারাও পেছনে পেছনে দৌড়ে তাদের ঘরে ডুকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে। এতে তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত জখম হয়।এসময় ঘরে থাকা তার স্ত্রী ও তার মা এগিয়ে আসলে তাদের উপরও হামলা করে।

এসময় হামলাকারীরা তার স্ত্রীর গলায় থাকা ১ টি স্বর্ণের চেইন ও নগদ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।তাদের আর্তচিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে সবাই পালিয়ে যায়।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক মোঃ নুরে আলম বলেন,পূর্ব ঘোড়াধারী গ্রামের পুরান বাড়ী নামে পরিচিত একটি বাড়ী রয়েছে। এই বাড়ীতে বসবাসকারী অধিকাংশই লেখাপড়া না-জানা লোক।ওই বাড়ীর ১৫ থেকে ২০ জনের বেশী যুবক রয়েছে তারা এলাকায় বেপরোয়া চলাফেরা করে আসছে।স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া মেয়েদের আসা-যাওয়ার সময় বিভিন মোড়ে ও দোকানের নিকট বসে থেকে উত্যক্ত করে।তাদের ছবি মোবাইলে ধারন করে টিকটক তৈরী করে যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছেড়ে দেয়।প্রতিবাদ করলে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি দেয়। ইজ্জত সম্মানের চিন্তা করে অনেকেই নিরবে সহ্য করে থাকে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন,পুরান বাড়ীর রবিউলসহ অধিকাংশ যুবকের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগ।অসংখ্য শালিসি বৈঠকও হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা বেপরোয়া হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহস পায় না।প্রবাসী মোশাররফ হোসেন সবুজের উপর অন্যায়ভাবে তারা হামলাটি করেছে।সে থানায় অভিযোগ করেছে। এলাকাবাসী এবার সোচ্চার রয়েছে।
রবিউলদের বাড়ীতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।তার মোবাইল নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মতলব দক্ষিণ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক ( এসআই) ফিরোজ আহম্মেদ মোল্লা বলেন,থানায় অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত খবর