ফরিদগঞ্জে ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রি দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ব্যবসায়ী শাহ আলম

শওকত আলী : চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌর বাসিন্দা পেশাদার ব্যবসায়ী শাহ আলম। তিনি এ পবিত্র রমজান মাসে মানুষ জাতে কমদামে পণ্য ক্রয় করে রোজা রাখতে পারেন সেই লক্ষে, ব্যবসায়ী শাহ আলম ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রির বিশেষ আয়োজন করে এক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করলেন। এ রমজান মাসে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার চরকুমিরা তালতলা মার্কেটে ব্যবসায়ী শাহ আলম রোজাদারদের পাশে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।

তিনি নিজ এলাকায় বছরজুড়ে শাহ আলম স্টোরে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী বিক্রি করে থাকেন। কিন্তু রমজান মাস এলেই ভিন্ন লক্ষে তিনি ১ থেকে দেড় মাস বিক্রি করেন রোজাদারের প্রয়োজনীয় ইফতারসহ নানান খাদ্যসামগ্রী।

এসময়টাতে বিক্রিতেও তিনি ব্যতিক্রম। ক্রয় মূল্য থেকে অতিরিক্ত ১ টাকা লাভে বিক্রি করে থাকেন প্রতিকেজি বিভিন্ন পণ্য। রমজান উপলক্ষে দরিদ্রসহ সব মানুষের জন্য এটি তার বিশেষ আয়োজন। তিনি দেশের প্রত্যেক পাড়া মহল্লার ব্যবসায়ীদের রমজানে অতিরিক্ত মুনাফা না করে পণ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য বিশেষ ভাবে আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার (৫মার্চ) সরোজমিনে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার চরকুমিরা তালতলা মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে, ব্যবসায়ী শাহ আলমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শাহ আলম স্টোর । সকাল থেকেই তিনি দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে পরিচালনা করেন। রমজান উপলক্ষে বিশেষ আয়োজনে নিজে এবং একজন কর্মচারী নিয়ে কাজে ব্যস্ত তিনি। ইতোমধ্যে ওই দোকানে ইফতার আইটেমগুলো সাজিয়ে রাখেন।

এই ব্যবসায়ী মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ক্রয় মূল্যের চাইতে ১ টাকা লাভে প্রতিকেজি ছোলা বিক্রি করছেন ৯৯টাকা, খেসারি ১০৯ টাকা, চিড়া ৫৬ টাকা, চিনি ১৩৯ টাকা, বেসন ৮১ টাকা, মুড়ি ৬৩ টাকা, খেজুর দুই ধরনের একটি প্রতিকেজি ২৫৮টাকা এবং অপরটি প্রতিকেজি ২৬০টাকা। ভোজ্য তেল (সয়াবিন) প্রতি লিটার বিক্রি করেন ১৪০ টাকা।

এই গ্রামের বাসিন্দা ও পণ্য ক্রয় করতে আসা আহসান উল্লাহ খান জানান, ২০২৩ সালে রমজানের আগ থেকে শাহ আলম এই ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। তার উদ্যোগকে আমরা সবাই স্বাগত জানিয়েছি। এখন রমজানের সব পণ্য সামগ্রী তার কাছ থেকে সবাই ক্রয় করে। কারণ বাজারে দাম বেশি এবং আসা-যাওয়ায় সময় ব্যয় করতে হয়।

এই এলাকার আব্বাস ও রহিম বেপারী বলেন, শাহ আলম ১ টাকা লাভে বিক্রির বিষয়টি সবদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গরিব লোকজন তার দোকানে চলে আসে। আমরা সবাই এখন উপকৃত হচ্ছি।

শাহ আলমের পাশের ঔষধ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, শাহ আলম ভাই যে উদ্যোগ নিয়েছেন এটি বিরল দৃষ্টান্ত। শুধুমাত্র কয়েকটি আরব দেশের কথা শুনেছি মুনাফা ছাড়া রমজানে পণ্য বিক্রি করে। আমার মনে হয় তার এই ধরনের উদ্যোগ দেশের সব মানুষের কাছে উদাহরণ। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাগবে মুনাফা কমিয়ে বড় ব্যবসায়ীদের এ সময় এগিয়ে আসা উচিত হবে।

ভাটিয়ালপুর এলাকার অটোরিকশা চালক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ১ টাকা লাভে পণ্য বিক্রির বিষয়টি খুবই ব্যতিক্রম। অনেক দূর থেকে এসে রমজানের খাদ্য সমাগ্রী ক্রয় করেন লোকজন। গরিব লোকদের জন্য খুবই ভালো হয়েছে। আমরা চাই অন্য ব্যবসায়ীরা যেন এভাবে এগিয়ে আসেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা এলাকার বাসিন্দা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, যেখানে সব খাদ্য দ্রব্যের মূল্য ঊর্ধ্বগতি, সেখানে শাহ আলমের মতো ব্যবসায়ীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তিনি একজন ভালো মনের মানুষ হওয়ার কারণে এই উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি মনে করি রহমতের মাস হিসেবে সব ব্যবসায়ীদের সংযমী হওয়া একান্ত কাম্য।

ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, আমি অনেক বছর ধরে ব্যবসা করি। গত বছর চিন্তা করলাম এলাকার মেহনতি মানুষের জন্য কিছু করি। তাই উদ্যোগ নিলাম রমজান উপলক্ষে আমি ১ টাকা লাভে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করবো। এটি করতে গিয়ে গত বছর অনেক বিক্রি হয়েছে এবং এই বছরও মানুষ পণ্য সামগ্রী ক্রয় করে উপকৃত হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস।

তিনি আরও বলেন, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আশাকরি যারা শহর ও গ্রামে বড় ব্যবসায়ী আছেন, তারাও যেন রমজান উপলক্ষে ১ টাকা বা ২ টাকা লাভে পণ্য বিক্রি করতে উদ্যোগ নিতে পারেন। তাহলে গরিব মেহনতী মানুষসহ সকল শ্রেনী ওেপশার মানুষ এই রমজানে তৃপ্তিমতো তাদের প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারবে।

সম্পর্কিত খবর