লক্ষ্মীপুরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়নে সচেতনতা সভা

স্টাফ রিপোর্টার : চাঁদপুর সদরে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩ (১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) বাস্তবায়নে সচেতনতামূলক সভা সম্পন্ন হয়েছে।

গতকাল ৬ অক্টোবর বিকেল ৩টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তরের আয়োজনে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান।

চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকতের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর নৌ অঞ্চলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, চাঁদপুর কোষ্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার সফিকুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান ও ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ইলিশ জাতীয় সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা করতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না, আমরা চাই না কোনো জেলে নদীতে মাছ শিকার করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে জেলে খাটুক, তার পরিবার কষ্টে থাকুক।

তিনি জেলেদেরকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, অভিযানের ২২ দিন আপনারা আপনাদের পরিবারকে সময় দিন, জাল এবং নৌকা মেরামত করুন। কেউ অসুস্থ থাকলে তাকে চিকিৎসা দিন, সামাজিক কাজ করুন। ২২ দিন এমনিতেই কেটে যাবে। অভিযানে নদীতে মাছ শিকার না করার জন্য সরকার আপনাদেরকে প্রায় সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করছে। মা ইলিশ ডিম ছাড়লে এতে আপনারাই লাভবান হবেন।

একটা ইলিশ ১৫ থেকে ২৩ লাখ ডিম ছাড়ে, ইলিশ সারাবছর ডিম ছাড়ে না, তবে এ সময়টাতে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বঙ্গোপসাগর থেকে এসে দেশের প্রায় ৩৪টি জেলায় ডিম ছাড়ে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদ্মা ও মেঘনায় মা ইলিশের বিচরণ বেশি লক্ষ্য করা যায়। ইলিশের জন্য দেশে এবং বিদেশে চাঁদপুরের সুনাম রয়েছে। মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই।

জেলা প্রশাসক আরো বলেন, অভিযান চলাকালীন সময়ে আইন অমান্যকারীকে কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এ ২২ দিন সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এ অপরাধের সাথে জড়িত এবং সহযোগিতাকারী কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌ-পুলিশ সুপার বলেন, অভিযানের সময় নিজেরা মাছ শিকার থেকে বিরত থাকবেন এবং অন্যদেরকে বিরত রাখবেন। মা ইলিশ জাতীয় সম্পদ, এ সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে এ অভিযান, ইলিশ সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আপনারাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কেউ যদি অভিযান অমান্য করে নদীতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সাথে সাথে ফোনে জানাবেন, আপনাদের নাম ঠিকানা গোপন রাখা হবে।

তিনি স্থানীয় জন প্রতিনিধিদেরকে বলেন, অভিযান শুরু হলে নৌকা থেকে ইঞ্জিন আলাদা করে রাখতে পারলে অভিযানের সুফল পাওয়া যাবে। কোনো নৌকায় ইঞ্জিন পাওয়া গেলে সেটি জব্দ করা হবে। মা ইলিশ ও জাটকা রক্ষায় সরকার আপনাদেরকে সারাবছর বিভিন্ন সহযোগিতা করে আসছে। আপনারা এ দু’টি অভিযান সফল করতে সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। তিনি বলেন, এবারের অভিযান অত্যন্ত কঠোরভাবে পরিচালনা করা হবে।

সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানজিরুল ইসলাম, পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর রাজিব শর্মা, হরিণা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম, স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান টিটু।

স্থানীয় মৎস্যজীবীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন সোলেমান মাঝি, হাজী খোকন রাঢ়ী নজরুল ইসলাম ও বিল্লাল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সকল ইউপি সদস্য এবং নিবন্ধিত বিপুল সংখ্যক জেলেসহ সাধারণ মানুষজন।

সম্পর্কিত খবর