
ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি : ফরিদগঞ্জে প্রাথমিক সরকারি বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনের টেন্ডার নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে। টেন্ডার ভাগাভাগি নিয়ে নির্বাহী অফিসের সামনে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কক্ষে তার ওপর চড়াও হন সরকারি দলের নেতাকর্মীরা।
টেন্ডার নিয়ে তিনটি গ্রুপে দ্বন্দ্বের জের ধরে এক কার্যিদবসে টেন্ডার ঘোষণা ও পরের কার্যিদবসে বাতিল করা হয়েছে। যদিও ১৭টি ভবনের মূল্য নির্ধারণ হয়েছে পানির দরে। ১২ই সেপ্টেম্বর বিকালে খবর পাওয়া গেছে, একটি বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেকের ওপরে ভেঙে ফেলা ও ইট বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। সূত্র মোতাবেক ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। ওই তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে বৃহস্পতি ও রোববার। অভিজ্ঞরা বলেছেন, ভবনের দর পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন। না হলে, এ দামেই পরবর্তীতে টেন্ডার দেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কয়েক মাস আগে নির্বাহী অফিসার তাছলিমুন নেছা বরাবর চিঠি প্রেরণ করে ১৭টি বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবন ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠন করলে সেগুলো ঝুঁকিপুর্ণ মর্মে প্রতিবেদনে জানানো হয়। প্রকৌশল অফিস মূল্য নির্ধারণ করে। এরপর, ভবনগুলো নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের অন্তত তিন গ্রুপ দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়। তারা নির্বাহী ও শিক্ষা অফিসে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তিন গ্রুপ সমঝোতায় পৌঁছে নির্বাহী অফিসারকে জানালে তিনি ৭ই সেপ্টেম্বর টেন্ডার নোটিশ প্রকাশ করেন। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তছলিম উদ্দিন একা পাঁচটি বিদ্যালয় ও অন্যরাও ভাগ বসালে পুনরায় দ্বন্দ্ব বাধে।
এতে রোববার টেন্ডার স্থগিত করেন নির্বাহী অফিসার। কিন্তু, রহস্যজনকভাবে পাইকপাড়া (দক্ষিণ) ইউপির দক্ষিণ শাশিয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরাতন ভবনটির দেয়াল ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভবন ভাঙার তথ্য গতকাল বুধবার স্বীকার করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাছলিমা আক্তার। তিনি বলেছেন, শিক্ষা অফিসার ফোনে অনুমতি দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার টাকা দরে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, ২০ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে জানার জন্য শিক্ষা অফিসারকে অফিসে পাওয়া যায়নি। অফিস সহকারী ওয়াজি উল্লাহ বলেছেন, এসব কাগজপত্র স্যারের কাছে। জানতে চাইল শিক্ষা অফিসার জহিরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান জেলা সদরে রয়েছেন। তালিকা চাইলে ও প্রতিটি ভবনের মূল্য কীভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইউএনও অফিসের আমিনের কাছে যান। আমিন জানিয়েছেন, আমাদের কাছে কিছু নেই। সবই শিক্ষা অফিসে।
শাশিয়ালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে জানা গেছে, ভবন ভাঙার কাজ করেছেন জনৈক মোস্তফা (৪০)। তিনি বলেন, আমি ভাঙার কাজ করেছি। মূল্যের বিষয়ে কিছু জানি না। কে ভাঙতে বলেছে প্রশ্নের উত্তরে বলেন, শিক্ষা অফিসের ওয়ার্ক অর্ডার আছে। দেয়াল ভাঙার পর, সেখান থেকে চার হাজার ইট বিক্রি করা হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। জানতে চাইলে মোস্তফা ইট বিক্রির তথ্য স্বীকার করেছেন। মাঠে ইটের আরও স্তূপ দেখা গেছে।
এদিকে, উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহম্মেদের অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। অফিস সহকারী আমেনা বেগম বলেছেন, আমাদের অফিস থেকে স্টিমেইট করে সব কাগজপত্র শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি।
বিশ্বস্ত সূত্রে টেন্ডারে উল্লিখিত বিদ্যালয়গুলোর নাম জানা গেছে। সেগুলো উত্তর আলোনীয়া, চান্দ্রা বাজার, পূর্ব গাব্দেরগাঁও, বাসারা, লোহাগড়, নলগোড়া, পূর্ব বদরপুর, পূর্ব কাওনিয়া, শোশাইরচর, পূর্ব বদরপুর (২), সাইসাঙ্গা, দক্ষিণ শাশিয়ালি, পূর্ব দেইচর, দেইচর, ফরিদগঞ্জ বালিকা (দক্ষিণ), ফরিদগঞ্জ মডেল ও কালিরবাজার জিপিএস।
সূত্র দাবী করেছে, টেন্ডার ঘোষণার পূর্বেই প্রতিটি ভবন আড়াই লাখ টাকা দরে বিক্রি করা হয়ে গেছে। এ কারণে টেন্ডার স্থগিত করলেও রাতারাতি তিনটি ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।
অভিজ্ঞ কয়েকজন ঠিকাদার ও প্রকৌশলী দাবি করেছেন প্রতিটি পুরাতন ভবনের দর পুনরায় নির্ধারণ করা প্রয়োজন। না হলে, এ দামেই পরবর্তীতে টেন্ডার দেয়া হবে।