চাঁদপুরে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতু’র দ্বার খোলা হবে আগামী মাসে

স্টাফ রিপোর্টার : বহুল আকাঙ্খিত ও জনগুরুত্বপূর্ন ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতু উদ্ভোধনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছে। দ্রুত এগিয়ে চলছে সেতুর কাজ। চাঁদপুরের মহামায়া-বাকিলা জিসি সড়ক থেকে ছোট সুন্দর ও ফরিদগঞ্জের ইসলামপুরের সাথে সংযোগ সেতু। যা চাদপুর- ফরিদগঞ্জের মধ্যে ডাকাতিয়া নদীর উপর নির্মিত সরচেয়ে বড় দৃষ্টিনন্দন সেতু।

লাখো মানুষের স্বপ্ন এ সেতু উদ্ভোধন হলে উল্লেখিত দুই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমে যাবে। যাতায়তের সুবিধাসহ ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটবে বলে জনসাধারনের ধারনা। ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রি বর্তমান শিক্ষামন্ত্রি ড. দিপু মনি এমপি ও চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি ড. শামছুল হক ভূইয়া যৌথভাবে ব্রিজের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। সে অনুযায়ী দ্রুত কাজ শুরু হলেও এখনও সমাপ্ত করতে পারেনি।

বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু অনেক আগে সমাপ্ত এবং চালু হলেও দির্ঘ ২৭৪.২০মিটারের ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুটির কাজ প্রায় ৭ বছরেও সমাপ্ত হয়নি।

প্রথমে নবারুন কনষ্ট্রাশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে এবং খুব দ্রুত গতিতে কাজের প্রায় ৬০%শতাংশ শেষ করে, হঠাৎ মহামারী করোনার থাবায় কাজ বন্ধ হয়ে প্রায় দুই বৎসর যাবৎ কোন কাজই হয়নি। পূনঃরায় ঠিকাদার পরিবর্তন হলে বর্তমানে রিজভী কনষ্ট্রাকশন লিঃ ও মোঃ ইউনুছ আল মামুন লিঃ নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে পুনঃরায় কাজ শুরু করে।

সম্প্রতি সরেজমিনে ব্রীজের কাজের অগ্রগতি বিষয়ে দেখতে গিয়ে কথা হয় স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল বিভাগের চাঁদপুর জেলা নির্বাহী অফিসের সহকারী প্রকৌশলী আইয়ুব খান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ইঞ্জিনিয়ার বিল্পব ঘোষ, প্রজেক্ট ম্যানেজার পারভেজ মোশারফ সহ আরো অনেকের সাথে। সেতুর কাজের তদারকীতে উল্লেখিত ব্যক্তিগন বলেন, মহামারী করোনায় দেশের সকল মেঘা প্রজেক্টসহ উন্নয়ন কর্মকান্ড থেমে ছিল না।

পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফেলতি ও লেবার সংকটের কারনে প্রায় দুই বছর দেরী হলো সেতু চালু করতে। বর্তমানে কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করছি আগামী অক্টোবর মাসের শেষের দিকে যে কোন দিন সেতু হস্তান্তর করতে পারবো। তারা আরো বলেন আমাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে অক্টোবরের ২৫ তারিখের মধ্যে যেন হস্তান্তর করা হয়।

সে অনুযায়ী সেতুর অসমাপ্ত অংশ ও সেতুর দুইপাশের খুটিনাটি সকল কাজ সম্পন্ন করতে আমরা প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ করেছি। তারা এলাকাবাসীর সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে সকলেই আমাদের সহযোগিতা করে যেন কাজটি সমাপ্ত করতে কোন সমস্যার সম্মূখিন না হয়। তবে, কিছু কিছু সময় ছিচকে চোরের উপদ্রবে আমাদের কিছু কিছু মালামাল খোয়া যায়।

ফরিদগঞ্জের ২নং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ বলেন, ব্যস্ততার কারনে সরাসরি তদারকি করার সুযোগ না পেলেও নিয়মিত খোজ খবর নেই। স্থানীয় এলাকাবাসী অবশ্য চেয়ারম্যানের নিস্ক্রিয়তার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেতুর ডিজাইনে কিছুটা পরিবর্তন করা হয়েছে, যাতে করে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে এবং কাজের বিষয়ে চেয়ারম্যান দায়িত্ব নিয়ে কখনওই তদারকী করতে দেখা যায় না।

উপজেলা চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম রোমান বলেন, এটি ফরিদগঞ্জ এবং চাাঁদপুরবাসীর দির্ঘদিনের প্রানের দাবী। ফরিদগঞ্জ একটি বড় উপজেলা। উপজেলার উত্তর পূর্বাঞ্চলের জনসাধারনের জন্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি যথেষ্ট ভূমিকা রাখবে। ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ নামকরনে এবং গুরুত্বপূর্নস্থানে দৃষ্টিনন্দন দির্ঘ সেতুটি স্থাপন করায় আমি ফরিদগঞ্জ বাসীর পক্ষ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশের রুপকার, দেশের জনগনের আশা আকাঙ্খার বাতিঘর মাননীয় প্রধানমন্ত্রি জননেত্রী শেখ হাসিনার ও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রির প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

সেতুর কাজের ধীর গতির বিসয়ে কিছুটা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সেতুর বর্তমান এবং চলমান কাজের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী চাঁদপুরবাসীর স্বজন বলে পরিচীত ড. দিপুমনি এমপি বলেন, বাংলাদেশের সর্বত্রই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া দৃশ্যমান। করোনার কারনে কাজের গতি কিছুটা ধীরে হলেও সরকারের মেঘা প্রজেক্টগুলিসহ সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডই সমাপ্তির পথে।

ইতিমধ্যে পদ্মাসেতুসহ অসংখ্য সেতু, মেট্রোরেল, উড়াল সেতুসহ রাস্তাঘাট, ভূমিহীনদের ভূমিসহ ঘর প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর প্রদান, সারা দেশে মডেল মসজিদ নির্মান, কর্নফুলি ট্যানেলসহ অসংখ্য উন্নয়ন কর্মকান্ড সরকারের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত। ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ সেতুও সরকারের উন্নয়নের অংশ বিশেষ। কোনরকম প্রাকৃতিক সমস্যা না হলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের শেষে সেতুর দ্বার উম্মুক্ত করা হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ২৫ সেপ্টম্বরের মধ্যে সমাপ্ত করে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, কাজের গুনগত মান সন্তোষজনক, আমি সংশ্লিষ্ট লোকজনের মাধ্যমে নিয়মিত খবর নিচ্ছি। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আগামীতে সরকার ক্ষমতায় আসলে এ অঞ্চলের রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন সম্ভব হবে।

সম্পর্কিত খবর