হাজীগঞ্জে স্ত্রীর পরকীয়ার বিচার চাইতে গিয়ে ভিটা বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধ

গাজী মহিন উদ্দিন : চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে স্ত্রীর পরকীয়ার বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো ভিটে বাড়ি ছাড়া বৃদ্ধ। ২৫ বছর পর ফিরে এসে নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলামকে মৃত দেখিয়ে তার সহায় সম্পত্তি বিক্রয় করে দিয়েছে স্ত্রী কাজল বেগম, ছেলে রাশেদ, রাসেল এবং মেয়ে মিনু ও লাকী।

এমন কি বিধবা ভাতার সুবিধা ভোগীর তালিকায় নাম উঠান কাজল বেগম। সন্তানদের বিশাল দালালে জায়গা হয়নি হতভাগা জন্মদাতা পিতার। পিতার সম্পত্তি আত্মসাৎ করলেও মাথা গুজানোর শেষ ঠিকানাটুকু দেওয়া হয়নি। ব্রেন স্টোক জনিত কারণে অসুস্থ বৃদ্ধকে গাজীপুরে ভবঘুরে অবস্থায় দেখতে পায় স্থানীয় সংগঠন।

২ সেপ্টেম্বর গাজীপুর থেকে মানবিক সংগঠনটি একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করে বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলামকে তার পৈত্রিক নিবাসে পৌঁছে দেয়। বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম হাজীগঞ্জ উপজেলার ১১নং হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড নোয়াপাড়া খন্দকার বাড়ির আদম আলীর ছেলে। দুই সন্তান রাশেদ ও রাসেলের বসবাস করা দালানে প্রবেশ করতে গেলে স্ত্রী কাজল বেগম মারধর করে তাড়িয়ে দেয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিরাজুল ইসলামের সাথে একই বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল খন্দকারের বিয়ে হয়। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে নিয়ে সংসার চলছে। সিরাজুল ইসলাম কাঠ মিস্ত্রির কাজ করতে নোয়াখালি অঞ্চলে অবস্থান করে। সেখান থেকে টাকা রোজগার করে দুলাল মেম্বারের কাছে পাঠাতো।

এরই মধ্যে তার স্ত্রী কাজল বেগম নোয়াপাড়া ছৈয়াল বাড়ির আব্দুল কাদেরের ছেলে রফিকুল ইসলামের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। সিরাজ তার স্ত্রী কাজল এবং পরকীয়া প্রেমিক রফিককে অনৈতিক সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে হাতে নাতে ধরা পড়ে। এভাবে স্থানীয়রা কাজল ও রফিককে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় হাতে নাতে ধরার অভিযোগ উঠে আসে। ওই গ্রামের ফসলি মাঠে পাট খেতে অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় সিরাজের স্ত্রী কাজল ও পরকীয়া প্রেমিক রফিককে হাতে-নাতে ধরে সালামত মেলিটারী।

স্ত্রীর এমন কর্মকান্ডের বিষয়ে সমদ ভাই দুলাল খন্দকারের কাছে বিচার চাইতে গেলে উল্টো সিরাজুল ইসলামকে এলাকা ছাড়ার কৌশল করা হয়। বোনের অপরাধের বিচার না করেই বোন জামাইকে এলাকা ছাড়া করা হয়।

এ দিকে কাজলের বোন জামাই একই ইউনিয়নের পাতানিশ পোদ্দার বাড়ির জয়নাল ও ভাই দুলাল খন্দকার সাদা স্টাম্পে স্বাক্ষর রেখে গ্রাম ছাড়া করে।

এর মধ্যে একাধিক বার বাড়িতে আসলে সিরাজুল ইসলামকে মারধর করে তাড়িয়ে দেয় দুলাল খন্দকার।
ওই ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল খন্দকার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রায় ২৫ বছর পূর্বে বোন কাজল বেগমের স্বামী সিরাজুল ইসলামের সম্পত্তি দখল করে তা বোন ও ভাগিনাকে পটিয়ে অন্যত্রে বিক্রয় করে দেয়। সিরজার বিক্রয় করা জায়গা বিক্রয় করে খন্দকার বাড়িতেই আরেকটি জায়গা ক্রয় করে।

সিরাজুল ইসলাম মানুষের সহযোগিতায় অসুস্থ্য শরীর নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলেও সন্তানদের দালানে ঠাঁই হয়নি। নোয়াপাড়া গ্রামে দোকানপাটের সামনে বেঞ্চে শুয়ে সিরাজুল ইসলামের রাত কাটে।

এ বিষয়ে সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী কাজল বেগমের সাথে যোগাযোগ করতে বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। দরজা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করে।

গাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সাবেক ইউপি সদস্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি দুলাল খন্দকার তার মুদি দোকান বন্ধ করে চলে যায়। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগিতা নিয়ে সিরাজুল ইসলামকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা চালায়। এ দিকে দুলাল খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিক বার ফোন করে না পেয়ে তার বাড়িতে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি ।

সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের কারণে আমি বিচার চাইতে গিয়ে উল্টো আমাকে এলাকা ছাড়া করা হয়। আমি এলাকায় আসলে আমাকে বার বার মারধর করা হয়। এখন আমি অসুস্থ্য অবস্থায় বাড়িতে গেলে স্ত্রী কাজল বেগম আমাকে মারধর করে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।

সম্পর্কিত খবর