চাঁদপুর পৌরবাসীর ভোটাধিকার আছে, সেবা পাওয়ার সুযোগ নেই

চাঁদপুর সদর উপজেলার পরিষদ গঠন কাঠামোতে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন ১৪ টি ইউনিয়ন ও সদরে অবস্থিত চাঁদপুর পৌরসভাকে একটি ইউনিট ধরে মোট ১৫টি ইউনিট নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার পরিষদ গঠন করা হয়, সে হিসেবে পৌর পরিষদের মেয়র এবং ১৪টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা তার নিযুক্ত কোন ব্যাক্তিকে সদস্য হিসেবে দেখানো হয়েছে।

বর্তমানে চাঁদপুর পৌরসভার মোট ভোটার এর ১ লাখ ৩৫ হাজারের কম বেশি, চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাচনে ১৪ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার ভোটারদের প্রত্যাক্ষ ভোটের মাধ্যমে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত করতে হয়, অথচ মোট ভোটারের প্রায় ১ তৃতীয়াংশ যারা পৌরসভার বাসিন্দা, তারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়রম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানকে ভোটে নির্বাচিত করলেও কাক্ষিত কোন সেবা প্রদান করার সুযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশনায় প্রচলিত বিবিধানে রাখা হয় নাই।

পৌর পরিষদের প্রায় এক লক্ষ ৩৫ হাজার ভোটার ভোটে অংশ গ্রহণ করবে প্রার্থীরা নির্বাচনে তাদের উন্নয়নে মিথ্যা আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট চাইবে, ভোট গ্রহণ শেষে তাদের কোন ধরনের উন্নয়নে সরকারি বাধ্য বাদকতায় কাজ করতে পারবে না। এটা এক ধরনের প্রতারণা।

সদর উপজেলায় একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা আছেন যিনি শুধুমাত্র উপজেলারধীন ১৪টি ইউনিয়নের সামাজিক নিরাপত্তার বেষ্টনীর আওত্তায় দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস কারি জনগোষ্ঠীর জন্য পরিবর্তনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ইচ্ছায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সহ অন্যান্য সেবা মূলক কাজ বাস্তবায়ন করেন।

অপরদিকে চাঁদপুর পৌরসভার একজন শহর সমাজসেবা কর্মকর্তার মাধ্যমে পৌরসভাধীন ১৫ টি ওয়ার্ডের একই ধরনের সেবা প্রদান করেন। এতে সদর উপজেলা পরিষদের কোন রুপ মতামত নজরধারী বা পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ নাই। এ বিপুল সংখ্যক ভোটারগণ যখন উপজেলা পরিষদে যে কোন সহায়তা জন্য আসেন, তখন বিশেষ করে অতিদরিদ্র অসহায় মানুষগুলো আসেন, তখন যদি বলি পৌর সভার লোকদের ভাতা দেওয়ার কোন সুযোগ উপজেলা পরিষদের নেই তখন তারা ক্ষোভ সাথে বলে আমরা আপনাকে ভোট দিয়েছি, আপনারা আমাদের প্রতিনিধি, এখন কেন না করছেন। তাদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে এ অসহায়ত্ব এ, অক্ষমতা একান্তই লজ্জাস্কর ও দুঃখজনক ।

একজন উপজেলা চেয়ারম্যান পৌরসভাসহ উপজেলাধীন সব কয়টি ইউনিয়নের ভোটে নির্বাচিত হন আর পৌর মেয়র শুধু পৌরসভা পৌর এলাকার ভোটে নির্বাচিত হন। অথচ পৌরসভার মেয়রগণকে সরকারিভাবে উপজেলা চেয়ারম্যান সমান মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ আইনে উপজেলাধীন পৌরসভা গুলোকে একটা ইউনিটে হিসেবে মেয়রগণকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর সমান মর্যাদা দিয়ে উপজেলা পরিষদের সদস্য দেখানো হয়েছে, এবং সে হিসেবে সে উপজেলা পরিষদের নিয়মিত সদস্য, কিন্তু পৌর মেয়রগন উপজেলা পরিষদের সদস্য হওয়া সত্ত্ েও কোন মিটিংয়ে উপস্থিত হন নাই, এবং তার কোন প্রতিনিধি আসেনাই।

যদি পৌর মেয়রকে উপজেলা পরিষদের সদস্য হিসেবে দেখানো হয়, সেক্ষেত্রে উপজেলাধীন ইউনিয়ন গুলোর সাথে পৌর পরিষদের সরকারি বরাদ্ধ এক সাথে থাকার কথা, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সরকারি বরাদ্দ পত্রে চাঁদপুর সদর উপজেলা ১৪টি ইউনিয়নের বরাদ্দ এক সাথে ও পৌর সভার বরাদ্দ আলাদা ভাবে দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাস্তাঘাট নির্মাণ বা উন্নয়ন কাজ উপজেলা পরিষদের কোনরকম সম্পৃক্ততা থাকে না, বন্যা প্লাবন, অগ্নিসংযোগ, দুর্যোগের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগণ যখন সাহায্যের জন্য আসেন তখন তাদের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে বিবেকের কাছে নিজেকে অসহায়ত্ব ও অপরাধী মনে হয়।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পর হয়তো উপজেলা পরিষদের নির্বাচন তফসিল ঘোষণা হবে, যদি আইনের কোন সংশোধন না হয়, তবে শুভঙ্করের ফাঁকির মধ্য আবারও নির্বাচন হয়ে যাবে এবং পৌরসভার ভোটারগণ আবারো প্রতারিত হবেন।

গত ১৮ মে ২০২৩ চাঁদপুর সদর উপজেলার মাসিক সভায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনাক্রমে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সচিব, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর পত্র পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। যদি আইনের কোন সংশোধন না হয়, উপজেলা পরিষদ থেকে পৌরসভার ভোটারদেরকে বাধ দিয়ে নতুনকে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।

কি বিচিত্র ও সাংঘর্ষিক আইন নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠন প্রক্রিয়ার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাই চেয়ারম্যানকে প্রদাধিকার বলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়, ১৪ টি ইউনিয়নের মহিলা সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার ও পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর সমন্বয়ে নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠন করা হয। এবং তাদের মতামতের ভিত্তিতে এক জন সাধারন সম্পাদক নির্বাচন করা হয়। আবার পৌর পরিষদকে আলাদাভাবে চিহৃত করা হয়, আইনের এ বেড়াজালে ভোটার গণ ক্ষতিগ্রস্ত। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভিভ্রান্ত ও দিশেহারা, নতুবা এটার অবসান হওয়া জরুরী, নতুবা আবারও পৌরবাসী ভোট দিয়ে প্রতারিত হবেন।

লেখক : নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান
সভাপতি, চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ
চেয়ারম্যান –চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ, চাঁদপুর সদর।

 

সম্পর্কিত খবর