চাঁদপুর মৎস্য আড়তে ইলিশের দাম অনেক চড়া

শওকত আলী : চাঁদপুর মৎস্য আড়তে শিশু ২সন্তানকে সাথে নিয়ে সাংবাদিক দম্পতি আসেন,পদ্মা-মেঘনা নদীর সুস্বাদু রুপালী ইলিশ ক্রয় করতে। এসে তারা হয়ে যান হতাশ,ইলিশের আড়তে ইলিশের হাহাকার। এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রয় হচ্ছে,প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকায়।

গত (৯ জুলাই) চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে পদ্মা-মেঘনা নদীর সুস্বাদু ১টি রুপালী ইলিশের ওজন ২কেজি ২০০ গ্রাম হওয়ায় এ পদ্মার রুপালী ইলিশটি ৪০০০ হাজার টাকা কেজি দরে, বিক্রি হয়ে ছিল ৮হাজার ৮শ’টাকায়। এটি ক্রয় করেন শহরের এক জিরো থেকে হিরো হওয়া শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ব্যবসায়ী কবির খান। সে তার ছোট স্ত্রী দীপুর জন্য এ মাছটি সখ করে তাকে উপহার দিতে কিনে ছিলেন।

তাই সাংবাদিক দম্পতি ইলিশ ক্রয় করার কথা ভুলে গিয়ে মেঘনা নদীর সুস্বাদু পোয়া মাছ ক্রয় করার চিন্তা করেন। কেননা ইলিশের আড়ত এখন পোয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ভরপুর। যেখানে এ ভরমৌসুমে আড়ৎ গুলোতে থাকতো রুপালী ইলিশে ভরপুর,দামও থাকতো সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা মধ্যে। এ বছর তার ভিন্নরুপ দেখা যায় চাঁদপুর মৎস্য আড়তে।
বাংলাদেশ ফটো জার্নালিষ্ট এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সাবেক সাধারন সম্পাদক,চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ক্লাবের সাংগঠনিক

সম্পাদক ও স্থানীয় দৈনিক চাঁদপুর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কে এম মাসুদ ও তার স্ত্রী ব্যাংকার সিগমা আহসান দম্পতি তখন ইলিশ ক্রয় করতে না পেরে চিন্তায় মগ্ন।

এরই মধ্যে শুক্রবার(২১ জুলাই) দুপুরে মৎস্য আড়তের আনোয়ার গাজীর আড়তে প্রচুর পোয়া মাছ আসে। আর তখনই আসে মেঘনা নদীর অনেক বড় আকারের ২টি পোয়া মাছ। প্রতিটি পোয়া মাছের ওজন মাপার পর দেখা গেল, প্রতিটি পোয়া মাছ ১ কেজি ১০০গ্রাম ওজন।

এ বছর এই প্রথম ২টি বড় আকারের পোয়া মাছ মৎস্য আড়তে উঠে। যা’বিগত কোন সময় এত বড় পোয়া মাছ চাঁদপুরের মেঘনায় কখনো জেলেদের জালে মিলেনি। এ ২টি পোয়া মাছের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন সাংবাদিক পুত্র শাহরিয়ার সিয়াম,বয়স তার মাত্র ৬ বছর। সে এ ২টি মাছ ক্রয় করার জন্য তার পিতা কেএম মাসুদকে অনুরোধ জানান ও ভায়না ধরে এ ২টি মাছ ক্রয় করার জন্য।

তখনই আড়তটিতে দরকষাকষি চলতে থাকে। পাইকারী ভাবে মাছের ডাক উঠে ১২শ’ থেকে শুরু করে ২০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পরে অন্য এক ক্রেতা ২টি পোয়া ২৩০০শ’টাকা মূল উঠান।

মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী সম্রাট বেপারী সাংবাদিক পুত্রের আবদার রক্ষায় ২টি পোয়া মাছের দাম ২৩০০শ’টাকা হাকা হলেও পরে শিশু সিয়ামের জন্য ২০০০ হাজার টাকায় মাছ ২টি বিক্রয় করেন। পাইকারী মাছ ২টি ২০০০ হাজার টাকা হলে খোলা বাজারে খুচরা দরে দাম ২৩০০শ’টাকা হতেই পারে। ২কেজি ১০০গ্রাম ওজনের পোয়া মাছটি সখের বসবতি হয়ে পুত্রের আবদার রক্ষা করতে তাকে পোয়া মাছ ২টি কিনে দেন তার পিতা।

তবে বাজার দরযাচাই করে দেখা যায়,এ ভরমৌসুমে বিগত বছর ১কেজি ইলিশই সর্বোচ্চ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০০ হাজার টাকায়। তাই কি দেখা গেল ইলিশের দামে এখন পদ্মা-মেঘনার পোয়া মাছ বিক্রি হলো।

অন্য আড়তের এক জন ব্যবসায়ী বাবুর জমাদার জানান,বিগত সময় এ ধরনের পোয়া মাছ ৫শ’টাকাও কখনো বিক্রি হয়নি। নদীতে ইলিশের আকাল হওয়ায় এ সময় ইলিশ যে দামে বিক্রি হতো তার চাইতেও চড়া দামে পোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার মাছ বিক্রি হতে দেখা যাচ্ছে। পদ্মা-মেঘনায় এ বছর বেশী ধরা পড়ছে,পাঙ্গাস,আইড়,বোয়াল,রিডা,বাগাইড় ও পোয়া মাছ।

চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের ব্যাপক আকাল চলছে,বর্তমান ইলিশের ভরমৌসুমে চলছে ইলিশের মারাত্বক আকাল। তাই দেখা যায়,এবার মেঘনায় ইলিশের পরিবর্তে ধরা পড়ছে বড় আকারের পোয়া মাছ। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। তবে বিগত বছর বর্তমান ইলিশের ভরমৌসুমে ইলিশের যে পরিমান দাম দেখা যেত,সেই পরিমান দাম ছাড়িয়েও বেশী দামে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ক্রয়-বিক্রয় হতে দেখা যায়।

কয়েকজন জেলের সাথে আলাপকালে তারা জানান,পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ যে খাদ্য খেয়ে বড় হতো সে খাদ্য খেয়ে পোয়া মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবার বড় হচ্ছে বলে জেলেদের ধারনা।

মৎস্য বনিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শবেবরাত সরকারের মৎস্য আড়তের ম্যানেজার শামীম হোসাইন বেপারী জানান, ‘নিষিদ্ধ সময়ে অসাধু জেলেরা বড় ইলিশসহ জাটকা ধরে ফেলায় এখন ইলিশের ভর মৌসুমে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছেনা। তবে এ বছর প্রচুর পরিমানে পাঙ্গাস,আইড়,বোয়াল,রিডা,বাগাইড় ও পোয়া মাছ ধরা পড়ছে।

চাঁদপুর মৎস্য আড়তের হুমায়ুন কবির বলেন, ‘মৌসুম না থাকা সময়েও ইলিশের এত ক্রাইসিস ছিলনা। এখন আমদানী কম এজন্য ইলিশ অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম যত বেশীই হউক না কেন ক্রেতা ক্রয় করছেন। বিক্রিতো বন্ধনেই। তবে এ বছর পোয়া,পাঙ্গাস,আইড় মাছ বেশী আসছে আড়তগুলোতে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক শবেবরাত সরকার এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইলিশের মৌসুম প্রায় আড়াই মাস হতে চলছে, কিন্তু এ মাছ ঘাটে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০ মণের বেশি ইলিশ আসছে না। অথচ গত বছরও এসময় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ পর্যন্ত ইলিশ আমদানী ও বিক্রি হয়েছে।’ নদীতে ইলিশের আকাল হলেও প্রচুর পরিমানে পাঙ্গাস,আইড়,বোয়াল,রিডা,বাগাইড় ও পোয়া মাছ ধরা পড়ছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান এ প্রতিনিধিকে জানান, আমরা বলতে পারছিনা এই ভরা মৌসুমে ইলিশের এত সংকট ও আকাশচুম্বী দাম কেন তার রহস্য খুঁজে পাচ্ছি না। জেলেদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, নদীতে আশানুরুপ ইলিশ পাইনা। তাইতো এতো দাম ইলিশের। এ বছর জাটকা নিধনও এর একটা কারন হতে পারে। তবে দেখা যায়, অন্য প্রজাতির প্রচুর পরিমানে পাঙ্গাস,আইড়,বোয়াল,রিডা,বাগাইড় ও পোয়া মাছ আড়ত গুলোতে আসছে বলে জেলে ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনায় জেনেছি।

চাঁদপুর মৎস্য আড়তে শিশু ২সন্তানকে সাথে নিয়ে সাংবাদিক দম্পতি আসেন,পদ্মা-মেঘনা নদীর সুস্বাদু রুপালী ইলিশ ক্রয় করতে। এসে তারা হয়ে যান হতাশ,ইলিশের আড়তে ইলিশের হাহাকার। এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রয় হচ্ছে,প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকায়।

সম্পর্কিত খবর