চাঁদপুরে দু শতাধিক স্থায়ী-অস্থায়ী কোরবানির হাট বসছে

স্টাফ রিপোর্টার : পবিত্র ঈদুল আযহা ২৯ জুন । যাকে বলা হয় কোরবাণীর ঈদ্। আর এ ঈদকে ঘিরে চাঁদপুরে ২ শতাধিক জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট।

এবারে হাজীগঞ্জ ও শাহরাস্তির বিভিন্ন পশুর হাটে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ দেশের উত্তরবঙ্গসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারীরা কোরবানির পশু নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। হাটে অনেক ভাল গরু দেখা যাচ্ছে তবে গত বছরের চেয়ে দাম বেশ চড়া।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে – চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় প্রায় দু’শতাধিক পশুর হাট বসেছে। এর মধ্যে হাজীগঞ্জে ২৬ টি, শাহরাস্তি ২১টি , চাঁদপুর সদরে ২৫ টি পৌরসভায় ৬টি, কচুয়ায় ৪১টি , ফরিদগঞ্জে ৩৪ টি ও পৌরসভায় ২টি, মতলব দক্ষিণে ১৮টি ও পৌরসভায় ২টি ,মতলব উত্তরে ১২টি এবং হাইমচরে ১২টি কোরবাণীর পশুরহাট বসছে ।

চাঁদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় শাখা সুত্রে ১৫ জুন এ তথ্য জানা গেছে ।

আগাম কটি হাটে গিযে দেখা গেছে- এ নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই রয়েছে দামের বিপাকে। সংশয় ও হতাশা কাজ করছে তাদের মধ্যে। ব্যবসায়ীরা বলছেন গরু খাবারের দাম বৃদ্ধি ও লালন-পালনের খরচ বেড়ে যাওয়ায়, দামও বেড়েছে। আর ক্রেতারা এবার সংশয়ে রয়েছেন– এতো চড়া দামে কোরবানির পশু কেনার সক্ষমতা নিয়ে।

এখন প্রতিটি হাটেই কোরবানির পশু বিক্রি হচ্ছে। হাটগুলোতে বড়-ছোট, মাঝারি ও ছোট সাইজের প্রচুর গরু উঠলেও দাম বেশ চড়া। গরু কিনতে গিয়ে দর-দাম নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। গত বছরের তুলনায় এবার গরুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ১০-১৫ ভাগ।

তবে দেশি গরু এবার বাজারে বেশি দেখা যাচ্ছে। গরুর খাবারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি লালন-পালন খরচ বেড়ে যাওয়ায় গরুর দাম গত বছরের তুলনায় এবার বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতারাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আর সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, হাটে গরুর দাম বেশি হওয়ায় ঈদে কোরবানি নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, ঈদ যতো ঘনিয়ে আসছে, দাম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে গরু কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অনেকেই।

চাঁদপুরে এবার ভারতীয় গরু নেই বললেই চলে। দেশীয় গরুতে বাজারগুলো ভরপুর। বেপারীরা এবার নিশ্চিন্তে গরু নিয়ে বাজারে আসছে। কোনো সমস্য হচ্ছে না। চাঁদপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, জেলায় ২৫ হাজার ৮ শ’ ৮৪টি খামারে সাড়ে ৩৫ হাজার গবাদি পশু,ছাগল ও ভেড়া রয়েছে। ঈদে কোনো ধরনের সংকট থাকবে না। চাঁদপুর জেলায় এবার দু’ শতাধিক স্থানে গরুর হাট বসবে।

কোরবানির ঈদকে ঘিরে চাঁদপুর জেলায় পর্যাপ্ত গবাদি পশু রয়েছে। শেষ পর্যন্ত সাধারণ ক্রেতারা মনের মতো পশু কোরবানি দেয়ার জন্য কিনে নিয়ে যেতে পারবেন– এমনটিই প্রত্যাশা সকলের। পবিত্র ঈদুল আজহায় দেশি গরু দিয়েই কোরবানির প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এবার কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.নাহিদ রশীদ এ কথা জানিয়েছেন। ১০ জুন মোহাম্মদপুর এলাকার সাদিক এগ্রো পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেনসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শন শেষে ড.নাহিদ রশীদ বলেন,‘ ব্যবসায়ী ও খামারিদের স্বার্থে ভারত ও মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে গরু প্রবেশে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বন্ধ আছে মাংস আমদানিও। পাশাপাশি খামারিদের ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে সব ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

তিনি বলেন,‘ গত ঈদুল আজহার চাইতে বেশি কোরবানিযোগ্য পশু এবার প্রস্তুত রয়েছে।’এখন পর্যন্ত খামারি ও প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ১ কোটি ২৫ লাখ কুরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এ সংখ্যা বাড়তে পারে। ফলে বিদেশি পশুর ওপর নির্ভর করতে হবে না। তাই আমরা সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছি।

এজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে, যেন বাইরে থেকে কোনো পশু না প্রবেশ করে।’ গত বছর কোরবানিরযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২১ লাখ। কিন্তু গত বছর ঈদুল আজহায় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার পশু কোরবানি হয়েছিল।

সেই হিসাবে এবার কোরবানি বাড়লেও পশুর সংকট হবে না। খামারিদের দাবির প্রেক্ষিতে ঈদের আগে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কুরবানির পশুবিক্রেতা বা খামারি পর্যায়ে কেউ যেন অযথা হয়রানি বা চাঁদাবাজির শিকার না হন সেজন্য জাতীয় জরুরি সেবার হটলাইন নম্বর-৯৯৯ যুক্ত করার বিষয়ে আশ্বাস দেন সচিব।

এর বাইরে অন্য কোনো হটলাইন নম্বর যুক্ত করার প্রয়োজন থাকলে সেটিও ১৪ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান তিনি। খামার থেকে কেনা পশুর জন্য হাসিলমুক্ত রাখার বিষয়টি মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির অনুরোধ জানান বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। পশু ঢাকায় বা বিভিন্ন জেলা শহরে নিতে গেলে চাঁদা দিতে হয়।

চাঁদার গিয়ে গরুর দাম বেশি হচ্ছে। এ ছাড়া খামারে বিক্রি হওয়া গরু কোনো হাটের কাছ দিয়ে গেলে ক্রেতাকে নাজেহাল হতে হয়। এদিকে সিটি করপোরেশন ঢাকায় থাকা খামারগুলো বাইরে নেয়ার তাগাদা দিচ্ছে। ফলে আমরা কয়েক হাজার খামারি বিপদে আছি।

এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া আশ্বাস দেন সচিব।
১৪ জুন আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় বিষয়টি আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান। পাশাপাশি খামারিদের উন্নয়নে ডেইরি উন্নয়ন বোর্ড গঠনের প্রস্তাব সংসদে পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে বলেও জানান সচিব।

সম্পর্কিত খবর