চাঁদপুরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে সাংবাদিক রানার পরিবারকে উচ্ছেদ !

বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুর শহরের রেহানবাগে মরহুম সাংবাদিক আব্দুর ছোবান রানার পরিবারকে তাদের বসবাসকৃত বাড়ি থেকে জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে সেখানে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে দ্রুতগতিতে বহুতলা ভবনের নির্মান কাজ চলছে।

এ ঘটনায় শহীদ রেহান বাগ এলাকার রানার নিকট আত্বীয় খাজা আহমেদ বাদী হয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ছাড়াও এ ঘটনায় আদালতে বিগত দিনে করা ২টি মামলা চলিত অবস্থায় রয়েছে।

অবশেষে চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের হস্তক্ষেপে ও তার নির্দেশে আপাতত আগামী ২৭ জুলাই পর্যন্ত বহুতল ভবনের নির্মান কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ ঘটনায় এলাকায় ২গ্রুুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা ও গত কয়েকমাস যাবত ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে চলছে।

যে কোন সময় এখানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা বিরাজমান রয়েছে। এ বিষয়ে জরুরী ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ হস্তক্ষেপ গ্রহন করা একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।

নতুন করে পূনরায় কাজ করতে গেলে ঘটনাটি ঘটেছে,গতকাল (১৮জুন) রোববার রাত অনুমান ৯টায় শহরের চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের পাশে অবস্থিত শহীদ রেহান বাগে(সাবেক সিংহ পাড়ায়) দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের সাংবাদিক মরহুম আব্দুর ছোবান রানার জীবদশায় বসবাসকৃত বাড়িটির স্থানে।

এই ঘটনায় মামলার বাদী খাজা আহমেদ ও বহুতল ভবন নির্মানকারী বিবাদী ইকবাল হোসেন বেপারী (সোহেল) বিদেশে অবস্থান করার কারনে তার পক্ষে নিমার্ন কাজ পরিচালনাকারী ঘটনা সম্পর্কে তার বোন নাজমা বেগমের সাথে এ ঘটনা নিয়ে আলাপকালে যা’ জানা যায়।

ঘটনার বিবরনে জানা গেছে,শহরের রেহানবাগ(সাবেক সিংহ পাড়া) এলাকায় ২শতাংশ ৯ পয়েন্ট জায়গার উপর নির্মিত একটি বাড়িতে চাঁদপুর প্রবাহ পত্রিকার সাংবাদিক মরহুম আব্দুর ছোবান রানার বসবাস করতেন। সে জায়গাটি সিএস ও আর এস মুলে জায়গার মালিক ছিলেন,মৃত আবুল বাসার। সে জায়গাটি ভুলক্রমে বিএস খতিয়ান রেকর্ডে রেকর্ড হয়,বহুতল ভবন নির্মানকারী ইকবাল হোসেন সোহেলের পিতা মৃত নূরুল ইসলামের নামে।

সে জায়গার প্রকৃত মালিক মৃত আবুল বাসার। বর্তমানে আবুল বাসারের ছেলে ওয়ারিশ মূলে এ জায়গার মালিক হওয়ার জন্য তার অন্য ওয়ারিশরাসহ একত্রিত হয়ে বিএস খতিয়ান সংশোধনীর জন্য চাঁদপুর আদালতের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইবুনালে ৪০০/১৯ নম্বর সংশোধনঙ্গী মোকদ্দমা দায়ের করেন।

সে মামলাটি বর্তমানে আদালতে চলিত অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে গত ২০২২সালে সাংবাদিক মরহুম আব্দুর ছোবান রানা মারা যায়। তার মৃত্যুর পর সে জায়গায় রানার পরিবারের সদস্যরা তার স্ত্রী সুমি বেগম,ছেলে শওকত হোসেন,মেয়ে সিথী ও বৃদ্বা মা সৌখিনা বেগম বসবাস করতো। এরই মধ্যে গত কয়েকমাস পূর্বে তারা চাঁদপুরের বাহিরে এক আত্বীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যায়।

এ সুয়োগে তার পার্শ্ববর্তী মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে ইকবাল হোসেন সোহেল ২শতাংশ ৯ পয়েন্ট জায়গায় বাড়িটি জোর পূর্বক ঘরের তালা ভেঙ্গে দখল করে ফেলে। পরে তারা সে টিন সেট ঘর ভেঙ্গে সেখানে বহুতল ভবন নিমার্ন করতে থাকে। এ ভাবে জোর পূর্বক পাকা বিল্ডিং নির্মান করার বিষয়ে জায়গার প্রকৃত মালিক আবুল বাসারের ছেলে খাজা আহমেদ গত ২০২৩ সালের ৭ মে চাঁদপুর আদালতে একটি নিষেধাজ্ঞা মামলা করেন।

তার পেক্ষিতে আদালত ৭দিনের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে গত ৭মে নৌটিশ জারি করেন। সে মতে গত ২৪ মে আদালতে শুনানি করা হয়। শুনানি সে তারিখে শেষ না হওয়ায় আগামী ২৭ জুলাই আদালতে আবারও শুনানির তারিখ নির্ধারন করেন।

এরই মধ্যে জায়গার প্রকৃত মালিক আবুল বাসারের ছেলে খাজা আহমেদ জানান,আমার বিবাদী মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে ইকবাল হোসেন সোহেলের পক্ষে তার বোন নাজমা বেগম ও কতিপয় লোকেরা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে চুপি সারে কাজ চালিয়ে যায়।

গতকাল ১৮ জুন বিরোধকৃত জায়গার উপর পূনরায় রাতের আধারে বহুতল ভবন নির্মানকারী সোহেলের পক্ষের লোকেরা বিভিন্ন স্থান থেকে সন্ত্রাসী প্রকৃতির ৩০/৪০ জন লোক এনে বহুতল ভবন নির্মান করা ছাদ ঢালাই দেওয়ার জন্য লেবার ও রাজমিস্ত্রী এনে ছাদ ঢালাইয়ের পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করে।

এ সময় এ খবর জানতে পেরে খাজা আহমেদ ও তার পক্ষের লোকজন বাধা দিলে এক সংষর্ষের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে খাজা আহমেদ ৯৯৯-এ ফোন করলে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের নির্দেশে চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো: শাহজাহান ঘঠনাস্থলে এসে বিরোধকৃত নির্মান কাজ বন্ধ করেন দেন।

এ বিষয়ে মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, উভয়ের কাগজ পত্র দেখে আদালতের পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত আগামী ২৭জুলাই থাকায় সে পর্যন্ত কাজ স্থিতি অবস্থায় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে খাজা আহমেদ বলেন,আমি গত ২০ ডিসেম্বর ২০২২সালে এ বিরোধকৃত জমির উপর পৌরসভা থেকে প্লান পাস না করার জন্য দরখাস্ত দিয়েছি। তার পর পৌর কর্তৃপক্ষ গত ২৭ মার্চ ২০২৩ তারিখে অন্যায় ভাবে প্লান পাস করেছে। এ ছাড়া গত ৭মে ২০২৩ তারিখে আদালত থেকে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে তারা আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোর পূর্বক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে বহুতল ভবন নির্মানকারী মৃত নূরুল ইসলামের ছেলে ইকবাল হোসেন সোহেল পক্ষে তার বোন নাজমা বেগম বলেন,এ ২শতাংশ ৯পয়েন্ট জায়গা আমার পিতার হওয়ায় এখন ভাই সোহেল মালিক তাই সে বিদেশ থাকায় কাগজ মূলে আমি কাজ পরিচালনা করছি। এর মালিক খাজা আহমেদ নয়।

সম্পর্কিত খবর