গাজী মহিনউদ্দিন: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের ৯নং গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারের গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃৃৃৃৃদ্ধির কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে।
প্রায় সবগুলো প্রকল্প কমিটি শ্রমিক দিয়ে কাজ করার মাস্টাররোল অফিসে জমা দিলেও, আসলে কাজ করছে এস্কেভেটর দিয়ে। কাবিটা প্রকল্পের তালিকাভূক্ত শ্রমিকদের ব্যবহৃত সীম কার্ডে কাজের টাকা লেনদেন হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবের সাথে এ কাজের কোন মিল নেই। সীমধারী শ্রমিক কারা এ নিয়ে সঠিক তথ্য দিতে নারাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে কাবিটা ২টি প্রকল্পের বরাদ্ধ দিয়েছিল সরকার। প্রকল্প গুলোর তথ্য চাইতে একাধিক বার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ট্রেনিংয়ে থাকা এবং জেলায় মিটিংয়ে আছেন বলে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা জানান।
কাবিটা প্রকল্পের কাজ চলমান অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তদারকি করার নিয়ম থাকলেও তার কখনো করা হয় না। গায়েবী সীম কার্ডের বিকাশ একাউন্টে বরাদ্ধের অর্থ আসে। একটি সূত্র জানায় মেম্বার এবং চেয়ারম্যানদের কাছে বিকাশ একাউন্ট খোলা এমন সীম কার্ড থাকে। যা শুধু মাত্র শ্রমিকদের নামে ব্যবহার করা হয়। এ শ্রমিকদের কখনো কাজ করতে দেখা যায় না।
গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে শ্রমিক দিয়ে মাটি কেটে এসব প্রকল্পের কাজ করার বাধ্যবাধকতার কথা থাকলেও, মেশিন দিয়ে সস্তায় মাটি কেটে সরকারের কোটি টাকা আত্মসাৎ করছেন এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। প্রায় সবগুলো প্রকল্প কমিটি শ্রমিক দিয়ে কাজ করার মাস্টাররোল অফিসে জমা দিলেও, আসলে কাজ করছে এস্কেভেটর (স্থানীয়ভাবে ভেকু নামে পরিচিত) মেশিন দিয়ে। ওই ইউনিয়নে কাবিটা প্রকল্পের কাজে হরিলুট চলছে।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলালের কাবিটা প্রকল্প নিয়ে অনিয়মের শেষ নেই। কৃষি জমি নষ্ট করে কাবিটা প্রকল্পের টাকায় অবাধে চলছে রাস্তা নির্মাণ কাজ। আহম্মেদপুর জগন্নাথপুর ও তারালিয়া মাঠে ইউপি চেয়ারম্যানের শত এক জমির মূল্য বৃদ্ধি করতে অযথায় কাবিটায় প্রকল্পের অর্থায়নে ভ্যেকু দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করেন। যার আশ-পাশে নেই কোন জনগোষ্ঠির বসবাস। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে জানা যায়, ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল নিজের স্বার্থে নির্মাণ করেছেন এ জনবিহীন এ রাস্তাটি।
সর্বতারা গ্রামে মৈশামুড়া-বড়কুল রাস্তা হইতে সর্বতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাস্তাটি ভ্যেকু দিয়ে মাটি কেটে তা কোদাল দিয়ে চেটে দেওয়া হয়। যা শাক দিয়ে মাক ঢাকার চেষ্টা।
এসব অনিয়মের সবই হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের চোখের সামনে। কিন্তু, কাউকেই কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যাচ্ছে না।
উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে কাবিটা প্রকল্পের অধিকাংশ কাজই ভ্যেকু দিয়ে মাটি কাটা হয়। গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের ৪টি প্রকল্প ঘুরে প্রত্যেকটিতে অনিয়মের প্রমাণ ।
ওই ইউনিয়নের তারালিয়া এবং কাকৈরতলা সড়কের কাকৈরতলা মাদ্রাসা থেকে ৩শ গজ পশ্চিমে গ্রামের মধ্যকরা তারালিয়া কাকৈরতলা গ্রামের দুটি সংযোগ সেতুর পাশ হইতে দক্ষিণ দিকে মালিগাঁও গ্রামে বয়ে যাওয়া একই রাস্তার পর পর দুইবার বরাদ্ধ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ প্রকল্পের কাজে দরিদ্রদের সুযোগ দিয়ে তাদের কর্মসংস্থান তৈরির কথা ছিল। কিন্তু, স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দরিদ্ররা কাজের কোনো সুযোগই পাচ্ছেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজী নুরুর রহমান বেলাল এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলবেন বলে ফোন কেটে দেন।
মুঠো ফোনে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো.জাকির হোসেন, এ কাজগুলো শ্রমিক দিয়ে হওয়ার কথা নয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেওয়া আছে লেবার দিয়ে মাটি কাটতে হবে। সে ক্ষেত্রে যদি কেউ অনিয়ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।