ফরিদগঞ্জে রাতের আঁধারে পুরোহিতের ঘরের বিদ্যুতের মিটারে অগ্নিসংযোগ

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো :ফরিদগঞ্জে রাতের আধারে বসতঘরের বিদ্যুতের মিটারে অগ্নিসংযোগ করে মিটারটি পুড়িয়ে দিয়েছে দুবৃর্ত্তরা। প্রতিবেশিরা দেখতে পেয়ে আগুন নেভানোর ফলে বড় ধরনের ক্ষতি থেকে বেঁচে যায় পরিবারটি।

আবার মিটারে ধরা আগুণ নিভাতে গিয়ে লোকজন মিটারের উপর কেরোসিন মিশ্রিত গামছার পোড়া অংশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে এই ঘটনায় আংতকিত হয়ে কয়েকদিন পর গৃহকত্রী স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করেন।

আগুণে পুড়ে যাওয়া মিটারের স্থলে নতুন মিটার ও সংযোগ পুন:স্থাপন করতে এসে ঘরের চালের উপর দিয়ে বিদ্যুতের তার যাওয়ার বিরোধিতার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয় পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। ফলে এক দিকে স্ত্রী হারানোর শোক, অন্যদিকে গত প্রায় এক মাস ধরে বিদ্যুৎ বিহীন দিনাতিপাত করছে হারাধন চক্রবর্তীর পরিবারের সদস্যরা। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পুর্ব ইউনিয়নের বৈচাতরি গ্রামের।

জানা গেছে, বৈচাতরি গ্রামে সনাতন ধর্মালম্বী অধ্যুষিত বৈচাতরি গ্রামে বয়োবৃদ্ধ হারাধন চক্রবর্তীর (৭০) বসঘরের বৈদ্যুতিক মিটারে গত ৮ এপ্রিল গভীর রাতে আগুণের ঘটনা ঘটে। আগুণের এই ঘটনার বিষয়ে হারাধন চক্রবর্তীর ছেলে সমীর চক্রবর্তী বাদী হয়ে নিরঞ্জন চক্রবর্তীকে বিবাদী করে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। অন্যদিকে নিরঞ্জন চক্রবর্তী সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের তার সুনাম ক্ষন্ন হওয়ার অভিযোগ করে পাল্টা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সুবাস সরকার ও শ্রীবাস সরকার জানান, ওই দিন রাতে একই গ্রামের মন্দিরে কালীপূজা শেষে বাড়ি ফেরার সময় তারা পুরোহিত হারাধন চক্রবর্তীর বসত ঘরে আগুণের দৃশ্য দেখতে পেয়ে ডাকচিৎকার দেন। দ্রুত তারা কাছে গিয়ে দেখতে পান ঘরের বিদ্যুতের মিটারে আগুণ জ¦লছে। তখন তারাসহ আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আগুণ নিভিয়ে ফেলেন। আগুণ নেভানোর সময় মিটারের উপর থেকে একটি পোড়া গামছা নিচে পড়ে। পরে তারা ওই গামছাতে কেরোসিনের গন্ধ পান। অগ্নীককাণ্ডের সময় ঘরের মধ্যে থাকা হারাধন চক্রবর্তীর ছেলে সমীর চক্রবর্তী লোকজনের ডাকচিৎকরে জেগে উঠে আগুণের দৃশ্য দেখতে পায়।

হারাধন চক্রবর্তী জানান, তিনি কালীপূজায় পুরোহিত্য করতে পাশের গ্রামে অবস্থান করছিলেন। তার স্ত্রী ঢাকায় চিকিৎসা জনিত কারণে অবস্থান করছিল। ঘরে শুধুমাত্র তার একমাত্র ছেলেই ছিল। এই ঘটনার পর তার স্ত্রী ঝর্ণা চক্রবর্তী বাড়ি ফিরে আতংকিত হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গত ২২ এপ্রিল স্ট্রোক করে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। আগুণের ঘটনার পর পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে তারা পুড়ে যাওয়া মিটার নিয়ে যায় এবং সংযোগ আপাতত বিছিন্ন করে।

পরবর্তীতে আমরা নুতন মিটারসহ পুন:সংযোগের জন্য আবেদন করলে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ আমার ঘরে মিটার লাগাতে আসলে তার সাহোদর নিরঞ্জন চক্রবর্তী মুঠো ফোনে একই বাড়ির শান্ত চক্রবর্তীকে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে ধরিয়ে দেয়।

এসময় শান্ত চক্রবর্তী তার ঘরের উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন দিবে না বলে জানালে, পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ সংযোগ না দিয়েই ফিরে যায়। ফলে গত প্রায় একমাস ধরে আমরা বিদ্যুৎ বিহীন অবস্থায় রয়েছি। আমার মৃত স্ত্রীর লাশ শশ্মানে নিতেও বাঁধার সম্মুখিন হয়েছি। আমার ছোট ভাই এসব ঘটনার জন্য দায়ী বলে আমার সন্দেহ। তাই ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। পুলিশ এসে তদন্ত করে গিয়েছে।

অন্যদিকে হারাধন চক্রবর্তীর ছোটভাই নিরঞ্জন চক্রবর্তীর জানান, আগুণ কে বা কারা লাগিয়েছে, আমি জানি না। কিন্তু আমার ভাই এই ঘটনার বিষয়ে আমার পরিবারকে জড়িয়ে নানা কথা বলায়। আমি আর সুনাম ক্ষন্ন হওয়ার অভিযোগ করেছি ইউনিয়ন পরিষদে। পল্লীবিদ্যুতের লোকজন ভাইয়ের ঘরে সংযোগ দিতে আসলে পাশের ঘরের শান্ত চত্রবর্তী (ঢাকায় অবস্থান করা)কে ফোনে ধরিয়ে দেই। শান্ত তার ঘরের উপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন না দেয়ার জন্য বললে পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ চলে যায়।

মুঠো ফোনে শান্ত চক্রবর্তী জানান, তার বসতঘরের উপর দিয়ে হারাধন চক্রবর্তীর বিদ্যুতের মিটারের সংযোগ না দিতে পল্লীবিদ্যুতের লোকজনকে তিনি নিষেধ করেন, তার ঘরের নিরাপত্তার স্বার্থে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বৈচাতরি গ্রামে চক্রবর্তীর পরিবারের দুই সহোদরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোেধ চলছে। সর্বশেষ আগুণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলহ আরো বড়ালো। তবে আগুণের ঘটনাটি নাশকতা। পুলিশের উচিত তদন্ত করে এর রহস্য উন্মোচন করা।

ফরিদগঞ্জ থানার এএসআই কামাল হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়ে সরেজমিন গিয়েছি। তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

 

সম্পর্কিত খবর