চাঁদপুরে ৬মাস যাবত রকেট-স্টিমার চলাচল বন্ধ : রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

স্টাফ রিপোর্টার : দেশের বৃহত্তম নদী বন্দর চাঁদপুর হলেও চাঁদপুরের সাথে দীর্ঘ প্রায় ৬মাস যাবত চলাচলে নিরাপদ হিসেবে খ্যাত রকেট স্টিমার সার্ভিস এ রুটে চলাচল বন্ধ থাকায় সরকার লক্ষ-লক্ষ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে ।

বিগত বছরের জরিপে দেখা যায় চাঁদপুরের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানের নৌ-পথের যাত্রী পাড়াপাড়ে নিরাপদ রুট হিসেবে সাধারন যাত্রীরা এ রুটে চলাচল করতে বেশী উৎসাহ পেত।

এতে করে সরকার এ রুট তথা চাঁদপুর সংশ্লিস্ট সকল স্থান থেকেই বিরাট অংকের রাজস্ব আয় পেত। বর্তমানে সে রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হয়ে রয়েছে। এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আসন্ন ঈদে রকেট-স্টিমার সার্ভিস যদি চলাচল না’থাকে তা’হলে এ রুটের যাত্রীদের মারাত্বক ভোগান্তি বাড়বে।

যার ফলে সকল মহলের একটাই দাবী পবিত্র ঈদুল ফিতরে যাত্রীদের ভোগান্তি কথা চিন্তা করে সরকার এ রুটে রকেট-স্টিমার সার্ভিস চালু একান্ত এখন সময়ের দাবী হিসেবে পরিগনিত হযে আসছে।

সেই পাক আমল থেকে নিয়মিত চলাচল করা বিআইডব্লিউটিসি পরিচালিত চাঁদপুরে রকেট স্টিমার সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বিগত প্রায় ছয় মাস যাবত এ অবস্থায় বিড়াজোমান বলে জানালেন চাঁদপুরের সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষ। স্বাভাবিকভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পিএস টার্ণ, লেপচা, মাসুদ, শেলা, রকেট স্টিমারগুলো ঢাকা-চাঁদপুর-খুলনাসহ বিভিন্নস্থানে চলাচল করতো।

এ ভাবে হঠাৎ চলমান অবস্থা থেকে কোন প্রকার ঘোষনা ছাড়াই এ পথে চলমান রকেট স্টিমার সার্ভিস বন্ধ থাকায় শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েছে। চাঁদপুর থেকে বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, ঢাকা রুটে ঝড়-তুফান, বজ্র বৃষ্টি বাদলের দিনে ও ঈদ উৎসবে নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে যাতায়াত করতে পারছেন না শত শত যাত্রী সাধারণ। এতে করে ক্ষতি হচ্ছে সরকারের।

সরকার প্রতিদিন তার রাজস্ব হারাচ্ছে,সরকারের কোষাগার পূর্ন হওয়ারস্থলে খালি হচ্ছে। এর জন্য পদ্মা সেতুকে দায়ী করলেন অনেক সংশ্লিস্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,এ স্টিমার বা রকেট না থাকায় সপ্তাহান্তে বা কখনো ৩দিন সরকারি ছুটির দিনে লোকজন বাড়ি ও অফিসে যাতায়াত করতে পারছেন না। এঘাট দিয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন উপজেলার লোকজন, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লা ও ফেনী অঞ্চলের কর্মরত শত সহস্র লোক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী, শিক্ষক ও অভিভাবকগণ নিয়মিত বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাটে, ঢাকায়ও যাতায়াত করতেন। আবার খুলনা ও বরিশাল মেডিকেল, প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও এঘাট দিয়ে যাতায়াত করতেন ।

চাঁদপুরের বিআইডব্লিউটিসির উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানান, রকেট স্টিমার চাঁদপুরে চলাচল কেনো বন্ধ, সেটার সঠিক তথ্য আমি জানিনা। তবে এ তথ্য হেড অফিস বলতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, এখন মানুষের রকেট স্টিমারে ভ্রমনের প্রতি আগ্রহ কম। অথচ চাঁদপুরের যাত্রী টামির্নাল ঘাট থেকে নিয়মিত প্রতিদিন প্রতি আধা ঘন্টা কিংবা এক ঘন্টা পর পর দিনে রাতে প্রায় ৩৭ টি যাত্রীবাহী বিলাস বহুল লঞ্চ চলাচল করছে দেশের এসব নৌ রুটসহ বিভিন্ন রুটে। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী কম বেশী নিয়েইতো এসব লঞ্চ চলছে। কোনটাইতো বন্ধ হয়নি প্রশ্ন সাধারণ ও সচেতন জনগনের। স্টিমার সার্ভিস-এর সেবা দান এটা রাস্ট্রীয় দায়িত্ব। কোন লাভ-লোকসানের ব্যাপার না-বলে মতামত দেন সচেতন অনেকেই।

জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির কর্মচারী মাসুদ, রাশেদ ও বারেক জানান, পদ্মা সেতু চালুর পরে যাত্রী সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় স্টিমার সার্ভিস বন্ধ রয়েছে। ওদিকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের ট্রেনের সময়ের সাথে সমন্বয় করে আসন্ন ঈদে বন্ধ রকেট স্টিমার সার্ভিস আবার চালু করলে শত সহস্র যাত্রীদের ঈদ যাত্রায় কষ্ট লাঘব হতো ও সুবিধাও হতো বলে জানান অনেক সচেতন জনগন।

রকেট ঘাটের সাথেই রয়েছে চাঁদপুর রেল স্টেশন। চাঁদপুর টু বরিশাল রকেট স্টিমার ভাড়া মাত্র ১২০ টাকা। আর লঞ্চ ভাড়া ৩৬০টাকা। যা ঈদে আবার দ্বিগুন হয়ে যায়। স্টিমার ঘাট ও রেল স্টেশনের ব্যবধান মাত্র দুই মিনিটের হাঁটাপথ।

ঘাটের চা দোকানী ইব্রাহীম মিয়া ও লিটন মোল্লা, তেলের ব্যবসায়ী মোস্তফা মিয়া, ওমর ফারুকসহ অনেকে জানান, রকেট স্টিমার প্রায় ছয় মাস যাবত চলে না, বন্ধ। তারা সবাই জানান, পদ্মা সেতু চালুর কারণে মানুষজন এখন আর রকেট স্টিমারে ভ্রমন করছেনা বিধায় যাত্রী কম। সেজন্যই রকেট স্টীমার বন্ধ রয়েছে ।

অনেকেই বললেন, আমরা দূর থেকে রকেটের আগমনে ও প্রস্থানে ভেপু’র আওয়াজ রাত বিরাতে আর শুনছি না। কোথায় যে গেলো সেই দিনগুলো! অথচ কতো কতো ভিআইপি, মন্ত্রী, সচিব, উচ্চ পদস্থ লোকজন ও জনসাধারন নিরাপদে, আরামে ও অল্প খরচে স্টিমারে যাতায়াত করতো। স্টিমারের আভিজাত্য ও মানসম্পন্ন খাবারের ঘ্রানও মনে প্রাণে ও নাকে প্রশান্তি যোগাতো। ভ্রাম্যমান হকার, পান সুপারি, সিগারেট, বাদাম ও চানাচুর বিক্রেতারাও অন্য ঘাটে চলে গেছেন।

চাঁদপুর রেল স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার সোয়াইব সিকদার ও কয়েকজন টিটিই জানান, চাঁদপুরে রকেট সার্র্ভিস চালু করলে দক্ষিনাঞ্চলীয় জেলার যাত্রীদের ভ্রমন আরামদায়ক ও নিরাপদ হতো। পরিবার পরিজনদের জন্যও খুবই সুবিধা হতো। চাঁদপুর থেকে বরিশালের ভাড়াও কম মাত্র ১২০ টাকা। ওদিকে চাঁদপুর টু বরিশালের লঞ্চ ভাড়া ৩৫০-৪০০টাকা। ঈদে আরো বেশী নেয়। তাছাড়া রেল স্টেশন থেকে স্টিমারঘাট মাত্র দুই মিনিট হাঁটার পথ।

চাঁদপুর বিআইডাব্লিউটিসি (বানিজ্য) ম্যানেজার ফয়সাল চৌধুরী জানান, দক্ষিনাঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার্থে চাঁদপুর রুটে ঈদ উপলক্ষে স্টিমার চালু করার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আলোচনা করছেন। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

সম্পর্কিত খবর