এস এম ইকবাল, ফরিদগঞ্জ : ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ বা ‘খুঁটির জোর’ এ কথা গুলো সমাজের বাস্তবতা থেকে নেওয়া। সমাজে আবার এরকম লোকও রয়েছেন যারা নিজ ঘরে পরবাস।
এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের হাজী বাড়িতে। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধে পেশি শক্তি দেখিয়ে পুরুষ শূণ্য পরিবারের উপর এ পযর্ন্ত ২০ থেকে ২৫ বার হামলা করে বসত ঘর ভেংঙ্গে আসবাবপত্র সব তছনছ করে ফেলে। এ যেন জোর যার মূলক তার!
মিজান, মানিক, বিল্লাল। এদের পূর্ব পুরুষের বাড়ি ১০নং গোবন্দিপুর ইউনিয়ন। তাদের বাবা চাঁন মিয়া (মরহুম), নোয়াব আলী হাজীর কাছ থেকে জায়গা নিয়ে এখানে বসবাস করতে থাকেন। বিভিন্ন দাগে চাঁন মিয়া ১৪ শতাংশ ভূমি ক্রয় করে সেখানে বসবাস করে আসছেন কিন্তু তার বংশধররা সিরাজুল ইসলামের জায়গা দখল করতে গেলেই বিপত্তি বাঁধে। জোর পূর্বক তারা সিরাজুল ইসলামের জায়গার উপর ঘর ও সেফটি ট্যাংকি করে।
বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালে চাঁদপুর কোর্টে সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় সিরাজুল ইসলাম রায় পায়। কিন্তু বিল্লাল গংরা আদালতের রায়কে অমান্য করে আবারও জোর করে জায়গা দখল করতে যায়। এ নিয়ে স্থানীয় ভাবে একাধিকবার পঞ্চায়েত বসলেও তারা তাদের রায়ও মেনে নেয়নি। উল্টো তারা দপায় দপায় সিরাজুল ইসলামের সন্তানদের মারধর করে। তাদের গাছ কেটে নিয়ে যায়। দীর্ঘ ছয়/সাত বছর সিরাজুল ইসলামের পরিবারের উপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কথায় কথায় ঝড়গা, অসভ্য ইঙ্গিত পূর্ণ আচরণ করে আসছে বিল্লাল এবং তার পরিবারের সদস্যরা। উপজেলার ক্ষমতাশীন দলের এক প্রভাবশালী নেতার আশ্রয়- প্রশ্রয়ে বিল্লাল এই বর্বর কাজটি করে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসী সাংবাদিকদের জানান।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৭ এপ্রিল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ পড়তে না গিয়ে বিল্লাল ও তার ভাই এবং স্ত্রীরিদের নিয়ে মৃত সিরাজুল ইসলামের বসত ঘরে হামলা করে। তারা মৃত সিরাজুল ইসলামের বৃদ্ধা স্ত্রী সালেহা বেগম এর ঘরের একটি বেড়া সম্পূর্ণ ভেঙ্গে ফেলে। ঘরে প্রবেশ করে আসবাবপত্র ভেঙ্গে ফেলে এবং একটা আলমারী, নগদ সাড়ে চার লাখ টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলে তারা অভিযোগ করেন।
এ সময় উভয় পক্ষের মারামারিতে সিরাজুল ইসলামের বড় মেয়ে হাসিনা (৩৫), মেজ মেয়ে নাছিমা (২৬) এবং নাতি জিহাদ (৭) এবং আছমা (১২) আহত হয়। এদের উপর হামলা করেন মিজান, বিল্লাল, মানিক, রাশেদ, রাজন, ফারজানা, এমরান, মারজানা, স্বপ্না, শিল্পী, কুসুম, হিরা, তানজিলা ও আমেনা।
এ সময় তারাও অভিযোগ করে বলেন, আমাদেরও কয়েকজন আহত হয়েছে। যদিও আহত হওয়ার কোনো প্রমান দেখাতে পারেননি।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাছিমা আক্তার (সুমি) বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের আলোকে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঘটনার বিষয়ে বৃদ্ধা সালেহা বেগম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বাবা, ওদের অত্যাচারে আমাদের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠছে। আমার এক ছেলে সে ব্যবসা করে ঢাকায়। বাড়িতে আসতে পারে না। ওদের আঘাতে আমার স্বামী আহত হয়। শেষ পর্যন্ত উনি এ আঘাত নিয়ে মারা যায়। এখন আমার সংসারে কোনো পুরুষ নেই। তারা আমাদের জায়গার মাঝখান দিয়ে জোর করে পথ নিতে চায়। আমরা রাজি না হওয়াতে ওরা আমাদের ঘর ভেংগে দিয়েছে। আমার মেয়ে এবং নাতীকে ইট মেরে আহত করে দিয়েছে।’
বিল্লালের স্ত্রী আমেনা বলেন, ‘আমার স্বামী (বিল্লাল) কাজ সেরে পুকুরে গোসল করতে গেলে হাবীব নামের একটা ছেলে তাকে ইট মারে। তাই আমরাও তাদেরকে মেরেছি।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাদের ঘর তারাই ভেঙ্গেছে। আমরা ভাঙ্গিনি।’
নোয়াব আলীর ছেলের বৌ ফিরোজা বেগম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমার শ^শুর এদেরকে (চাঁন মিয়া) জায়গা দেয়। পথ নিয়ে এই দুই ফ্যামিলির মধ্যে জামেলা। এদের (বিল্লাল গং) যাতায়াতের পথ নেই।’
৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিরর মো. আব্দুল মান্নান পরান এ বিষয়ে বলেন, ‘তারা উভয় পার্টিই খারাপ। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি হচ্ছে না।’
এস.আই মাহাবুব বলেন, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। মরুহুম সিরাজুল ইসলামের ঘর ভাংচুর অবস্থায় পেয়েছি। যেহেতু জমি নিয়ে জামেলা, কাগজপত্র দেখা ছাড়া কিছু বলতে পারছি না। তাই তাদের উভয় পক্ষকে আগামীকাল (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থানায় আসতে বলেছি।’