শওকত আলী : দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর পর চাঁদপুর-সিলেট রেলপথে এ রুটে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ গ্রহন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের তর্থের ভিত্তিতে জানা যায়, বর্তমান সরকারের প্রায় ১৫ বছর ও বিগত সরকারের সময়ের প্রায় ৫ বছরসহ প্রায় ২০টি বছর যাবত চাঁদপুর- সিলেট রেলপথে ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
যাত্রীদের দীর্ঘ বছরের ভোগান্তি ও সুবিধার দিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকারের রেলওয়ে কর্তৃপক এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চাঁদপুরসহ দেশের পাঁচটি রুটে বিশেষ ট্রেন চালুর উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্থে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রুটে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এসব ট্রেনে আসন রয়েছে ২ হাজার ৪০০টি।
এ ছাড়া ট্রেনে যাত্রী দাঁড়িয়ে যাওয়ারও সুযোগ থাকবে। এসব বিশেষ ট্রেন আগামী মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) থেকে বিভিন্ন স্থানে রুটে চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ের পরিবহন ও কর্মাসিয়াল বিভাগের সংশ্লিষ্টরা কর্তৃপক্ষ জানান, এবারের ঈদযাত্রায় চট্টগ্রাম থেকে ১০টি আন্তঃনগর, মেইল এবং সাতটি বিশেষ ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার যাত্রী চলাচল করবে। এ লক্ষে শুক্রবার (৭ এপ্রিল) থেকে রেলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করা হয়। এ টিকিট বিক্রি হবে আগামী পাঁচদিন (১২এপ্রিল) পর্যন্ত।
ঈদে ট্রেনের টিকিট পেতে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করতে এবার অনলাইনে টিকিট বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। শুধু ১০টি আন্তঃনগর ট্রেনে সাড়ে ৭ হাজার টিকিট বিক্রি হবে অনলাইনে। অন্যান্য মেইল ট্রেন ও স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে কাউন্টারে। এ ছাড়া ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সুবিধার্থে শোভন শ্রেণির (নন এসি) মোট আসনের ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকিট (স্ট্যান্ডিং) যাত্রার দিন কাউন্টার থেকে কিনতে পারবেন যাত্রী সাধারন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দুইটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটিতে ৫১৪টি করে দুই ট্রেনে আসন সংখ্যা রাখা হয়েছে ১ হাজার ২৮টি আসন। দুটি বিশেষ ট্রেনের মধ্যে চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-১ চাঁদপুরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টায় আর চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়বে বিকাল সাড়ে তিনটায়।
চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল-২ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে যাবে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে এবং চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে সকাল ৬টায়।
এ ছাড়া এ রুটে স্বাভাবিক সময়ে যে ২টি ট্রেন সাগরিকা এক্রপ্রেস ও আন্ত:নগর মেঘনা এক্রপ্রেস রয়েছে,সেটি আগের নিয়মে চলাচল করবে। সাগরিকা এক্রপ্রেস চট্রগ্রাম থেকে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে চাঁদপুরের উদ্দের্শে ছেড়ে যাবে। সাগরিকা এক্রপ্রেস চাঁদপুর স্টেশন থেকে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে চট্রগ্রামে উদ্দের্শে ছেড়ে যাবে। অপর ট্রেন আন্ত:নগর মেঘনা এক্রপ্রেস চট্রগ্রাম থেকে বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটে চাঁদপুরের উদ্দের্শে ছেড়ে যাবে। আন্ত:নগর মেঘনা এক্রপ্রেস চাঁদপুর স্টেশন থেকে সকাল ৫টায় চট্রগ্রামের উদ্দের্শে ছেড়ে যাবে।
চাঁদপুর-সিলেট রুটে বিশেষ ট্রেনটি সিলেট থেকে বিকাল চারটা ৪০ মিনিটে ছেড়ে চাঁদপুরে পৌঁছাবে রাত সোয়া ১২টায়। আর চাঁদপুর থেকে বিকাল ৪টায় ছেড়ে সিলেটে পৌঁছাবে রাত ১২টায়।এ ট্রেনে থাকবে ৪৮৮টি আসন।
চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে বিশেষ ট্রেনটি ময়মনসিংহের উদ্দেশে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে রাত ১০টায় ছাড়বে। আর ময়মনসিংহ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দেবে সকাল ১১টায়। এই ট্রেনে আসন থাকবে ৪০০টি। স্বাভাবিক সময়ে এই রুটে দুটি ট্রেন চলাচল করে।
ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রুটে বিশেষ ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে ছেড়ে দেওয়ানগঞ্জ পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। আর দেওয়ানগঞ্জ থেকে বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে রওনা হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ১১টা ১০ মিনিটে। ট্রেনে আসন রয়েছে ৪৬৬টি।
রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ঈদে চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে ১৭-১৮ হাজার যাত্রীর টিকিটের চাহিদা থাকে। নিয়মিত, বিশেষ ট্রেনসহ অতিরিক্ত বগি সংযোজন করে সর্বোচ্চ ১০ হাজারের মতো টিকিট দেওয়া যেতো। তাই এবার বিশেষ ট্রেন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে এবারের ঈদে অন্তত ১২-১৩ হাজার টিকিটের চাহিদা মেটানো যেতে পারে।
এদিকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির প্রথম দিন গতকাল সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত তেমন ভিড় ছিল না। জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার জাফর আলম বলেন, ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। যা আগামী ৫ দিন চলবে। এখন অনলাইনে শতভাগ টিকিট বিক্রি হওয়ার কারণে স্টেশনে ভিড় নেই। তবে ঈদের সময় ভিড় হবে। ১৫ এপ্রিল থেকে ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঈদযাত্রার আনন্দকে আরও রাঙিয়ে তুলতে এবার পাঁচটি রুটে বিশেষ ট্রেন চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চাঁদপুর-সিলেট রুট এবং চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে এবারই প্রথম ঈদে বিশেষ ট্রেন চলাচলের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আগে ঈদের সময় এই দুই রুটে কখনো বিশেষ ট্রেন চলাচল করেনি।
তিনি বলেন, মূলত ঈদের সময় যাত্রীদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষে এসব বিশেষ ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এসব বিশেষ ট্রেন ১৮ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন স্থানে চলাচলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ঈদের দিন ছাড়াও ঈদ পরবর্তী আরো ২দিন এ অতিরিক্ত ট্রেন গুলো যাত্রী পরিবহন করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।