হাজীগঞ্জে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে প্রসূতির মৃত্যু

গাজী মহিনউদ্দিন: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বাজারে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) দিয়ে সেলাই করায় এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।

হাজীগঞ্জ বাজারে হাজীগঞ্জ টাওয়ার মার্কেটের ২য় তলায় অবস্থিত নানা অনিয়মে জর্জরিত ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে ভুল সিজারিয়ান অপারেশনে জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) দিয়ে সেলাই দেওয়ার মত চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনা ভুল অপারেশনের শিকার প্রসূতি রুজিনা আক্তারের শরীরে রক্ত ক্ষরণের কারণে মৃত্যু বরণ করে।

নিহত প্রসূতি রুজিনা আক্তার হাজীগঞ্জ উপজেলার ২নং বাকিলা ইউনিয়নের শ্রীপুর ফজর আলী বেপারি বাড়ির ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী এবং একই উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ খান বাড়ির হাসান খা’র মেয়ে।

গত ৩১ মার্চ প্রসূতি রুজিনা আক্তার আত্মীয়দের সহযোগিতায় হাসপাতালের দালাল আমেনা আক্তারের মাধ্যমে ইসলাামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের নিয়ে আসে। সেখানে কোন সার্জন এবং এনেসথেসিয়া ডাক্তার ছাড়াই অপারেশ করা হয়। দালাল আমেনা’র কমিশন বাণিজ্যের লোভে এরকম শত শত রোগী চিকিৎসা করাতে এসে উল্টো ক্ষতির সম্মূখিন হয়েছে। এই হাসপাতাল থেকে যৌন ও চর্ম রোগের অষ্টম শ্রেণি পাশ ভূয়া বিশেষজ্ঞ আটক করে পুলিশ।

প্রসূতি রুজিনার সিজারিয়ান অপারেশন করেন হাজীগঞ্জ গোল্ডেন হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার রইসুল ইসলাম রুবেল এবং এনেসথেসিয়া করান ডাক্তার সাদ্দাম হোসেন। সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ডাক্তার রুবেল সন্তান প্রসবের ফুল কাটতে গিয়ে নির্ধারিত অংশের চেয়ে অতিমাত্রায় জরায়ু কেটে ফেলেন।

এসময় তিনি শাক দিয়ে মাছ থাকতে জরায়ুর কাটা অংশে বেলুন (কনডম ) বসিয়ে সেলাই করে দেন। ৪দিন পর প্রসূতি রুজিনা আক্তারকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে বাড়িতে পাঠানো হয়। বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করলে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ দেখা দিলে অসুস্থ্য রুজিনাকে পুনরায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার ২য় বার ভর্তি হলে রুজিরার শরীরে ৪ ব্যাগ রক্ত প্রয়োগ করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সুকৌশলে ভুল অপারেশনের দায় থেকে রক্ষা পেতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে হাসপাতাল কতৃপক্ষ।

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে গাইনী বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারা পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন জরায়ু কেটে কনডম (বেলুন) বসিয়ে সেলাই করা হয়। যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের কোন অধ্যায়ের এমন নিয়ম নেই। গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মেডিকেল বোর্ড জরায়ু কেটে বেলুন প্রতিস্থাপন ঘটনাটি এই প্রথম দেখেছেন বলে মৃতের স্বজনরা জানায় । এক দিনে প্রসূতি রোজিনা শরীরে ১৯ রক্ত দিয়েও মৃত্যুর হাত থেকে তাকে রক্ষা করতে পারেনি চিকিৎসকরা। চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন প্রসূতি রোজিনা আক্তার।

৫ এপ্রিল বুধবার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে এ্যাম্বুলেন্সে রোজিনা আক্তারের মৃত দেহ নিয়ে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতালের নিচে অবস্থান নেয় স্বজনরা।

স্থানীয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে নিহতের স্বজনা হাসপাতাল কতৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানতে হাসপাতালে ছুটে যায়। সেখানে কয়েকজন কর্মচারী ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।

এরপূর্বে এ হাসপাতালে অষ্টম শ্রেণি পাশ ভূয়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ভুল অপারেশন এবং চিকিৎসা অবহেলার রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল ভাংচুর করার বহু ঘটনা ঘটে। অতীতের অনিয়মের হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম এবং এনেসথেসিয়া করা ডাক্তার সাদ্দাম ওই ভবনের চতুর্থ তলায় বাসায় অবস্থান করলেও ছুটে আসেনি।

ভুল অপারেশনের শিকার নিহতের লাশ নিয়ে হাসপাতাল কতৃপক্ষের ডাক্তারদের এমন নিষ্ঠুর আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।

হাজীগঞ্জ প্রাইভেট হাসপাতাল এন্ড ডায়ানস্টিক মালিক সমিতির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসমিল্লাহ হাসপাতার এন্ড ডায়াগনস্টিক এর মালিক তোফায়েল আহম্মেদ এর সুষ্ঠ সমাধানের আশ^াসে নিহত রোজিনার আত্মীয় স্বজনরা বাড়িতে লাশ দাফন করলেও এখন পর্যন্ত ভুল শোকাহত পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেনি কেউ।

নিহত রোজিনার বোনের ছেলে মো. সোহেল বলেন, আমার খালাকে সিজারিয়ান অপারেশনের পর থেকে ইসলামিয়া মর্ডাণ হাসপাতাল চিকিৎসায় অবহেলা করে আসছে। জরায়ুর গুরুত্বপূর্ণ অংশ কেটে তারা বেলুন দিয়ে সেলাই করে দেয়। দুই দিন পর বেলুন ফেটে যাওয়ার কারণে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ হওয়ার কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালিন অবস্থায় মারা যায়।

এ ঘটনায় হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে বহুবার যোগাযোগ করেও তাদের কাছ থেকে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

সম্পর্কিত খবর