এস এম ইকবাল, ফরিদগঞ্জ: ফরিদগঞ্জ বাজারের সাথে একটি আবাসিক এলাকায় অব্যাহত চুরির ঘটনায় জনমনে ক্ষোভ ও নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রায় ধারাবাহিক চুরির অংশ হিসেবে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যার পর একটি নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। চুরির এ ঘটনাটি ঘটেছে প্রবাসী দুলাল মিজির পাঁচতলা পাকা ভবনে।
ওই এলাকায় ১০-১২ বছরে অন্তত ৩০টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। এতে, বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা চুরি হয়েছে- দাবী করেছেন এলাকাবাসী। এলাকাটি ফরিদগঞ্জ থানা (পুলিশ স্টেশন) সংলগ্ন পশ্চিম পাশে চিটু বেপারীর মিল এলাকায়।
চুরির শিকারের মধ্যে পুলিশের এস.আই, এ.এস.আই, কনস্টেবলও রয়েছেন। কিন্তু, কোনো একটি ঘটনায়ও অপরাধী শনাক্ত হয়নি। বরং, নিরাপদে অপরাধ অব্যাহত রেখেছে। এলাকায় অন্যান্য অপরাধও সংঘটিত হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবী করেছেন। এ সব নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
ভূক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ফরিদগঞ্জ (দঃ) ইউপি’র পোঁয়া গ্রামের শ্রী কৃষ্ণের ছেলে নারায়ন চন্দ্র দাস (৩১)। তিনি একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকরি করেন। অপর একটি ওষুধ কোম্পানীতে কর্মরত জনৈক উজ্জ্বল ভাড়া থাকেন ঘটনাস্থলের প্রবাসী দুলাল মিজির পাঁচতলা ভবনে। নারায়ন চন্দ্র দাস ডিসকভার মোটারসাইকেল চালিয়ে তার বাসায় যান বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা প্রায় ৬ ঘটিকায়। মোটর সাইকেলটি ভবনের নীচতলার পার্কিংয়ে রেখে তিন তলায় উজ্জ্বলের বাসায় যান।
প্রায় দুই ঘন্টা পর নীচে নেমে দেখেন তার মোটরসাইকেল নেই। খবর পেয়ে বাড়ির মালিকের ছেলে মাসুদ মিজি রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ ঘটিকায় উপস্থিত হন। তিনি সিসি ক্যামেরা ঘেটে ফুটেজ বের করতে পারেননি। তিনি বলেছেন, তার মনিটরে সমস্যা আছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিজ্ঞ লোক নিয়ে ঠিক করে দেখা হবে। তবে পাশের বাড়ির সিসি ক্যামেরায় মোটরসাইকেল চালিয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। যে ব্যক্তি নিয়ে যাচ্ছেন তার গায়ে প্রায় কমলা রংয়ের টিশার্ট পড়া ছিলো। মুখ দেখা যায়নি।
এ ঘটনায় নারায়ন চন্দ্র দাস ওইদিন রাতে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। চুরির ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, ওই এলাকায় এতো চুরি কারা করছে। তারা দাবী করেছেন গত প্রায় ১২ বছরে ওই এলাকায় কমপক্ষে ৩০টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। কোনো একটি ঘটনায়ও কেউ আটক ও শনাক্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, অন্যান্য অপরাধও হয়েছে। অপরাধী অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেছে।
এদিকে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রবাসীর পাঁচতলা ওই ভবনে এর আগে অন্তত পাঁচটি, পাশর্^বর্তী মফিজ মিজির ভবনে তিনটি, প্রবাসী মিজানুর রহমান এর বাড়িতে দুটি, রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারির বাড়িতে অন্তত ১০টি, প্রবাসী আলম খানের বাড়িতে একটি, প্রবাসী বাচ্চু মিয়ার ভবনে অন্তত ছয়টি, শাহজাহান এর বাড়িতে একটি, সাঈদ বেপারীর বাড়িতে একটি, বাচ্চু বেপারীর বাড়িতে একটি চুরির ঘটনা স্মরণে পড়ছে। অন্যান্যদের নাম এখন মনে নেই। চুরির ঘটনার ২/৩টি সন্ধ্যা-রাতে হলেও অপর সবগুলো হয়েছে দিনের বেলায়।
বাসিন্দাগণ বাসা থেকে বের হয়ে সন্তান নিয়ে স্কুলে, বাজারে বা আত্মীয় স্জনের বাড়িতে যাওয়ার পরই দরজার তালা ভেঙ্গে চুরি হয়েছে। এলাকাটি ফরিদগঞ্জ থানার পশ্চিম পাশের বাউন্ডারির সাথে!
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, গত প্রায় ১০/১২ বছরে চুরির শিকার লোকজনের মধ্যে এস.আই, এ.এস.আই, কনস্টেবলসহ অন্তত ১০ জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। সর্বশেষ, দরজার তালা ভেঙ্গে চুরির শিকার হয়েছেন এস.আই. আবদুল কুদ্দুছ। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় অভিযোগ বা মামলা করা হয়নি। পুলিশ তৎপর হয়নি।
ফলে, অপরাধী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এলাকাবাসী আরও জানিয়েছেন, ওই এলাকায় বাসায় নারী রেখে দেহ ব্যবসা করানো হয়েছে। চলেছে মদ, জুয়ার আসর। তারা দাবী করেছেন, এলাকায় ও সংলিষ্ট লিংকে গোপন তদন্ত করলে ঘটনার বিস্তারিত জানতে পারবে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনী। তারা বলেছেন, অপরাধীকে আইনের আওতায় নিতে ও মূল উৎপাটন করতে না পারলে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনী প্রশ্নের মুখে পড়বে।
এলাকায় ভাড়ায় থাকা একজন বাসিন্দা বলেছেন, চুরি থেকে সাইকেলও বাদ যায়নি। একটি বাড়ির মালিক সাঈদ জানিয়েছেন, আমার ও আমার ভাইয়ের বাসায় ও এলাকায় অনেকগুলো কলের উপরি অংশ চুরি হয়েছে। শুধু একজন প্রবাসীর ভাড়া বাসা থেকে ১০ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ আড়াই লাখ টাকা নিয়েছে। অপর একজন প্রবাসীর বাসা থেকে প্রায় ৭ভরি স্বর্ণালংকার নিয়েছে। প্রায় ১০ বছর আগে ওই এলাকা থেকে এস.আই. নূর এর নতুন মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেছে।
নারায়ন চন্দ্র দাস চুরির ঘটনা শিকার করে বলেছেন, মোটর সাইকেলটি আমার রুটি রুজির বাহন ছিলো। মাত্র ১৫/১৬ দিন আগে কেনা মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছি। চুরির ঘটনায় আমি বাদী হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেন, আমি আশা করছি পুলিশ বাহিনী চোর শনাক্ত করবে ও মোটর সাইকেল ফেরৎ পাবো।
বাড়ির মালিক প্রবাসী দুলাল বেপারীর ছেলে মাসুদ বলেছেন, আজ (শুক্রবার) পুনরায় সিসি ক্যামেরা দেখবো। তিনি মন্তব্য করে বলেছেন, এ এলাকার মতো ফরিদগঞ্জ বাজারের আশেপাশে অন্য সব এলাকায় এর ১০ ভাগের এক ভাগ চুৃরিও হয়েছে কিনা সন্দেহ আছে। এই এলাকায় এতো চুরির কারণ কি। শুনেছি, বাইরে থেকে চোর এলেও এলাকার সহযোগী লাগে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কে সেই সহযোগী।
অন্য এক বড়ির মালিক বলেছেন, নিশ্চয় শর্ষের ভেতর ভূত আছে। তিনি বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতার মাধ্যমে অপরাধী শনাক্ত করা কর্তব্য। বাসিন্দারা মন্তব্য করে বলেছেন, আমরা শান্তিতে ঘুমাতে ও বসবাস করতে চাই। অপরাধী শনাক্তের দাবী করেছেন সবাই।
এ ব্যপারে ফরিদগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) প্রদীপ মন্ডল বলেছেন, মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ বৃহষ্পতিবার রাতে পেয়েছি। তদন্তের জন্য একজন অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। অপরাধী শনাক্ত করতে ও মালামাল উদ্ধার করতে আমরা চেষ্টা করছি।