স্টাফ রিপোর্টার : বাড়ির কাছেই বন্ধুদের সঙ্গে বুধবার ফুটবল খেলতে গিয়েছিল মো. মিনহাজ (১৪) ও মো. তামিম হোসেন (১৫)। কিন্তু সেখান থেকে আর বাড়িতে ফেরা হয়নি তাদের। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে মারা যায় তারা। সন্তানদের হারিয়ে তামিম ও মিনহাজের মা-বাবা শোকে স্তব্ধ। তাঁদের কান্না থামছে না।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০ নম্বর লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের পূর্ব রামদাসদী এলাকার মেঘনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, ওই দুই কিশোরের মাকে সান্ত্বনা দিতে আশপাশের অনেকে ভিড় করেছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৫ নম্বর ব্যারাকের ছোট একটি পাকা ঘরে বসবাস মিনহাজদের। মিনহাজকে হারিয়ে তার মা তাসলিমা আক্তার কাঁদছেন। মিনহাজের মা সারাক্ষণ ‘আমার বাবা কই, আমার বাবা কই’ বলে বিলাপ করছেন।
মিনহাজের বাবা জাহাঙ্গীর খান বালুর জাহাজের কর্মচারী। তিনি একদম চুপচাপ হয়ে গেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পরিবারে দুই মেয়ের পর একমাত্র ছেলেসন্তান ছিল মিনহাজ। সবাই তাকে ভীষণ আদর করত।
একই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ২২ নম্বর ব্যারাকের বাসিন্দা আক্তার হোসেন রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি কাজে ছিলেন। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে তামিম হোসেন ছিল বড়। খবর পেয়ে দৌড়ে এসে ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসক বলেন, তাঁর ছেলে আর নেই। ছেলেকে হারিয়ে তামিমের মা তাসলিমা বেগমের কান্না থামছে না। সারাক্ষণ ‘ও বাবা গো, ও বাবা গো’ বলে বিলাপ করছেন।
তামিম ও মিনহাজ দুজনই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা রফিক জমাদার বলেন, কৈয়ার বিলের মাঝখান দিয়ে প্রায় ১০০ গজ দীর্ঘ একটি তার একটি বাঁশের ওপর ভর করে ছিল। ঝড়ের সময় খুঁটিটি সরে গেলে বিদ্যুতের তার নিচে নেমে আসে। এ সময় মাঠে বেশ কিছু ছেলে খেলাধুলা করছিল। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হয়। অসাবধানতাবশত মিনহাজ তারটি ধরতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। তাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রতিবেশী হাফেজ খান (৭০) আহত হন।
আহত হাফেজ খান বলেন, ‘আমি বাঁশ দিয়ে দুজনের তার ছাড়াই। সেই তার আবার আমার হাতে এসে পড়ে। এরপর আর কিছু বলতে পারব না। পরে কীভাবে বাঁচলাম, তা–ও বলতে পারব না।’
তামিম ও মিনহাজের আরেক বন্ধু মুন্না জানায়, ‘এ ঘটনার পর কী করব, বুঝতে পারছিলাম না। পরে পাশের বাড়ির একজনকে ডেকে এনে তার কাটানোর ব্যবস্থা করি। এতে আমি নিজেও আহত হই।’
স্থানীয় বাসিন্দা টুটন মজুমদার অভিযোগ করেন, এভাবে কোনো শক্ত খুঁটি ছাড়া শুধু বাঁশ দিয়ে দীর্ঘ লাইনের বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। যে মাঠে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই বিদ্যুতের তারটি এখনো (বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত) সেখানে পড়ে আছে।