বিশেষ প্রতিনিধি : চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার মীরপুর চরের ১১০ একর কৃষি জমি মাছ চাষের জন্য ইজারা দেয়া ও কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ করেছে কৃষকরা।
গত কয়েক বছরে প্রায় কোটি টাকার হিসাব পায়নি এবং বর্তমানে ইজারার টাকা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মারাত্বক আশঙ্কা করছেন নিরীহ ৫শতাধিক কৃষক। তারা তাদের ন্যার্য্য দাবীকৃত টাকা না পাওয়ায় অনাহারে দিন কাটোচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। নিয়মানুসারে নিজেদের মধ্য থেকে কমিটি করে ইজারা দেয়ার দাবী জানিয়েছেন অসংখ্য কৃষকরা।
সরেজমিন ও কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় বেশ কয়েকটি ফসলি জমির চর মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু মীরপুরের চরের জমির মালিকরা নীরিহ হওয়ার কারণে একটি সংঘবদ্ধ চক্র পৌরসভার মেয়রদেরকে সভাপতি করে কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বার বার বঞ্চিত করে যাচ্ছে। পূর্বের মেয়র মাহফুজু রহমান এর মেয়াদ কালে ইজারার ৭৫ লাখ টাকা হিসেব পায়নি এবং ১৫ লাখ টাকা ঋন করে গেছেন ওই মেয়র। সেই ১৫ লাখ টাকার ঋণ গত দুই বছর পরিশোধ করেছেন কৃষকদের মধ্য থেকে গঠিত কমিটি।
কৃষক মনির হোসেন, ফারুক ও রফিক তালুুকদার জানান, বহুবছর এই চরের কৃষকরা নিজেদের মধ্য থেকে প্রস্তাব সমর্থনের মাধ্যমে কমিটি করে চরের রক্ষনা বেক্ষণ, সেচ ও মাছ চাষের জন্য ইজারা দিয়ে আসছেন। কিন্তু একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য পৌরসভার মেয়রকে সভাপতি করে নিজেদের পকেট ভারি করার জন্য চক্রান্ত করে আসছে। যার ফলে আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। আমরা চাই আমাদের মধ্যে থেকে কৃষকরাই কমিটি পরিচালনা করবে এবং ইজারার কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ডিসেম্বর মাসে নতুন কমিটি ও ইজারা দেয়ার কথা থাকলে চক্রান্তের কারণে এ বছর ৩ মাস পার হয়েগেল।
কৃষকদের মধ্যে থেকে ২০২২ সালে কমিটির সভাপতি ছিলেন, মোশারফ হোসেন রুনু। তিনি বলেন, আমাদের কৃষক সমিতির নিয়মানুসারে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে সভার মাধ্যমে আমরা বছরের হিসাব নিকাশ ও দায়িত্ব শেষ করেছি। ওই সভা মুলতবি ছিল পরবর্তী কমিটি করার জন্য। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কয়েকজন জমির মালিক বহিরাগত লোক নিয়ে মেয়রের মাধ্যমে পৌরসভায় বসে একটি কমিটি ঘোষনা দেয়। যার ফলে এখন সব কৃষক ক্ষুব্ধ।
চরের জমির মালিক কামাল হোসেন মিজি বলেন, কৃষকদের মধ্যে থেকে কমিটি হবে। কৃষকরাও এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। বহিরাগত লোকদের হস্তক্ষেপ হলে কৃষকরা আবারও তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হবে। কারণ গত দুই বছর কৃষকরা চর ইজারা দিয়ে প্রায় ৬০ লাখ টাকার বেশি পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, মুলতবি সভার পর কমিটি গঠন নিয়ে মতবিরোধ দেখাদিলে মেয়র চর এলাকায় আসেন। স্থানীয় মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকল কৃষকদের সাথে বসে তিনি বলেছেন ১ মাসের মধ্যে কৃষকদের মধ্য থেকে কমিটি গঠন করবেন। কিন্তু তিনি তা না করে নিজে সভাপতি হয়ে নতুন কমিটি করেছেন। সর্বশেষ তিনি এলাকায় মাইকিং করে ৬ মার্চ মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এসে চর ইজারা দেয়ার আহবান করেন। কিন্তু সেখানে কোন কৃষক উপস্থিত হননি।
পৌরসভা থেকে সম্প্রতি ঘোষিত কমিটির সভাপতি মেয়র মো. আবুল খায়ের। সাধারণ সম্পাদক জমির মালিক মো. ইব্রাহীম বেপারী। তিনি বলেন, সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়। পরে মেয়রের কাছে গিয়ে অভিযোগ দেয়া হয়। তিনি স্থানীয় প্রায় ২০জন গন্যমান্য ব্যাক্তির উপস্থিতিতে পৌরসভায় বসে কমিটি করেন। তিনি সভাপতি থেকে ইজারা দিবেন এবং পরবর্তীতে আমাদেরকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ফরিদগঞ্জ পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী বলেন, কৃষকদের মধ্যে বিরোধ দেখাদিলে আমার কাছে আসে। আমি এটি সমাধানের লক্ষে কমিটি করেছি। ইজারা দেয়া শেষ হলে তাদের মধ্য থেকেই কমিটি করে দেয়া হবে।