গাজী মোঃ ইমাম হাসানঃ “আমার জীবন আমার সম্পদ, বীমা করলে রাখবে নিরাপদ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে জাতীয় বীমা দিবস’২৩ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও রচনা প্রতিযোগিতা এবং বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল ১ লা মার্চ বুধবার সকাল ১০ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান এবং পরে সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ ইমতিয়াজ হোসেন।
এ সময় তিনি বীমা দিবসের গুরুত্ব আরোপ করে তার বক্তব্যে বলেন, বীমা শিল্প আমাদের আর্থিক সম্ভাবনার খাত, আমরা টার্গেট করেছিলাম যে বীমার থেকে যেন ৪% পার্সেন্ট এর মত জিডিপি ভূমিকা রাখে, সেই জায়গাতে কিন্তু .৫% সেটা অনেক কম, অনেক পিছিয়ে আছে। আপনাদের বক্তব্য অনুযায়ী বীমা দিবসটি “খ” শ্রেণীর দিবস ছিল, এই দিবসটিকে গুরুত্ব দিয়ে সেটি এখন “ক” শ্রেণীর দিবসে রূপান্তর হয়েছে। এক্ষেত্রে বুঝা যায় যে সরকার বীমাকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বীমা আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে কেন এতটা বেশি জরুরী, একসময় আমরা যৌথ পরিবার নিয়ে বসবাস করতাম, গ্রামে গঞ্জে বেশিরভাগ যৌথ পরিবার ছিল। যেহেতু আমরা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, সেহেতু যৌথ পরিবার থেকে জীবনের প্রয়োজনে বলেন, আর্থিক প্রয়োজনে বলেন, কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে বলেন একক পরিবারের সৃষ্টি হয়েছে। যৌথ পরিবারের বেলায় ধরা যায় একজন ব্যক্তি উপার্জন ক্ষম থাকলে সে ব্যক্তি যদি মারা যায় তাহলে সেই উপার্জনটা আর একজন ব্যক্তি ধরে নেয়। একক পরিবারের ক্ষেত্রে কিন্তু এটি একটি চ্যালেঞ্জ। কারণ একক পরিবারের বেলায় যদি উপার্জন কোন ব্যক্তি দুর্ঘটনা কবলিত অথবা অন্য কোনভাবে মারা যায় তাহলে কিন্তু সেই পরিবারটি একেবারেই অভিভাবক শূন্য হয়ে যাচ্ছে। এবং ব্যক্তির মৃত্যুর সাথে সাথে সেই পরিবারটি একটি মানবেতর জীবন যাপনের বাধ্য হয়ে যায়। সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমি বলব আমাদের দেশে এই বীমার অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে অনেক দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধি কমে গেছে, উন্নত দেশগুলো ৩% থেকে ৪% এর মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত সাড়ে ৬ থেকে ৭ এর মধ্যে আমাদের জিডিপি আছে। এই ভালো করার পিছনে আপনাদের মত যারা বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন সকলের এখানে অবদান আছে। তবে এই বীমার ক্ষেত্রে মানুষের কাছে একটু আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, আপনারা সবাই জানেন আমরা এখনো একটা ভয় ভীতির মধ্যে আছি, আমার কাছে যদি কেউ একটা পলিসি করার জন্য আসে, পরে চিন্তায় পরি যে এই যে করলাম আমি শেষ সময়ে এই পলিসির রিটার্ন টা পাবো কিনা ।
সরকার কিন্তু সব জায়গাতে উন্নয়নের চেষ্টা করছে, যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের মৃত্যুতে যে এককালীন টাকাটা পাওয়ার কথা এটি এক সময় ৬/৭ মাস কোন কোন সময় ১ বছর ঘুরতে হতো। কিন্তু এখন প্রসেসিং যদি ঠিক থাকে তাহলে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই এই টাকাটা পাওয়া সম্ভব। আমার মনে হয় আপনাদের এই জায়গাটাতে একটু প্রচার প্রচারণার অভাব আছে, সেক্ষেত্রে আমি বলব আপনার মেলার মাধ্যমে এই প্রচার-প্রচারণা কাজগুলোও সমাধান করতে পারেন। এই বীমা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সারা বাংলাদেশে প্রায় এক কোটি মানুষ সম্পৃক্ত আছে। আমাদের বাংলাদেশে আছে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মতো, এরমধ্যে কাজ করে না আমাদের বাচ্চারা, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এরকম মানুষ গুলা বাদ দিলে একেবারে সরাসরি কর্মের সাথে নিযুক্ত প্রায় ৬/৭ কোটি মানুষ। তাহলে কর্মের যে খাত এই হিসাবে আপনাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ পার্সেন্ট লোক বীমা সেক্টরে কাজ করে। আমরা মনে করি এটা একটা সম্ভাবনাময় খাত, এবং বর্তমান সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। আশা করি আপনাদের ইতিবাচক পরিবর্তন এনে সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিগার সুলতানা।
পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প ইনচার্জ মোঃ নূরে আলম জুয়েলের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, লিডিং কোম্পানি পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স কোং লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক মোঃ দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বল।
আরো বক্তব্য রাখেন, জীবন বীমা কর্পোরেশন ইনচার্জ মোঃ জামিল হোসেন, ম্যাটলাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মাকসুদুর রহমান, ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোঃ মতিউর রহমান, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর ইনচার্জ মোহাম্মদ মঞ্জুরুল হক, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড এর ইনচার্জ লোকমান হোসেন।
বীমা দিবস উপলক্ষে সকালের শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভায় জেলার সমস্ত বীমা কোম্পানির কর্মকর্তা বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতা এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।