ঢাকা অফিস : জাতীয় সংসদের বিদ্যমান সীমানা হুবহু ঠিক রেখেই ৩০০ নির্বাচনি আসনের সীমানা পুন:নির্ধারনে খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোববার নির্বাচন কমিশন এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেছে।
বহুল আলোচিত-সমালোচিত কে এম নূরুল হুদা কমিশন বিগত ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল সংসদীয় আসনের সীমানা প্রকাশ করেছিল। সেটিকেই পুন:নির্ধারিত সীমানা আখ্যা দিয়ে এ খসড়া প্রকাশ করলো বর্তমান কমিশন। এতে নতুন সৃষ্ট হওয়া উপজেলা ও ওয়ার্ড অন্তর্ভূক্তির কারনে সাতটি আসনের সীমানায় নামগত পরিবর্তন এসেছে। তবে বাস্তব সীমানায় কোনো রদবদল আসেনি।
খসড়া এ সীমানা নিয়ে কারও দাবি বা আপত্তি থাকলে তা আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। যদিও এ খসড়া সীমানা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।
যে সাতটি আসনে নামগত পরিবর্তন এসেছে সেগুলো হলো- মাদারীপুর-৩, ময়মনসিংহ-৪, সুনামগঞ্জ-১ ও ৩, সিলেট-১ ও ৩ এবং কক্সবাজার-৩।
ইসি সূত্র জানায়, আইনে আদমশুমারির পর জনসংখ্যার যতটা সম্ভব বাস্তব বন্টনের ভিত্তিতে সীমানা পুন:নির্ধারণের কথা বলা হলেও তা মানা হয়নি। এবারের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ি, দেশের অন্তত ৭৫টি সংসদীয় আসনে সংশ্লিষ্ট জেলার গড় জনসংখ্যার চেয়ে ২৬ থেকে ৮৮ শতাংশ পার্থক্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৮ আসনে জনসংখ্যার ব্যবধান ৫১-৮৮ শতাংশ।
‘বিতর্ক’ এড়াতে জনসংখ্যার এত বড় ব্যবধান রেখেই এ খসড়া প্রকাশ করা হলো। অর্থাৎ জনশুমারির এ প্রতিবেদনকে আমলে নেয়নি ইসি। এছাড়া ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন ৪০টি আসনের সীমানা পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করেছিল তৎকালীন কমিশন।
পরবর্তীতে ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনে। ওই সীমানা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছিল। সেই সীমানাকেই মূলভিত্তি ধরেছে বর্তমান কমিশন। এছাড়া আইনে ইসিকে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া থাকলেও তা করা হয়নি।
তবে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, খসড়া প্রকাশের পর অংশীজনের দাবি-আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক ক্ষেত্রে সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে।
খসড়া সীমানা নির্ধারণে ইসি পাঁচটি কার্যপদ্ধতির কথা জানিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- প্রতিটি জেলার ২০১৮ সালে নির্ধারিত মোট আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখা; প্রশাসনিক ইউনিট বিশেষ করে উপজেলা এবং সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের ওয়ার্ডের যথাসম্ভব অখণ্ডতা রাখা; নতুন সৃষ্ট, সম্প্রসারিত ও বিলুপ্ত প্রশাসনিক এলাকা অন্তর্ভূক্ত করা এবং ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনা করা। এ কারণে সাতটি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এসেছে।
সেগুলোর মধ্যে কালকিনি উপজেলা নিয়ে গঠিত মাদারীপুর-৩ আসনের সঙ্গে ডাসার উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। কালকিনি উপজেলা বিভক্ত করে সরকার কালকিনি ও ডাসার উপজেলা করেছে। ময়মনসিংহ-৪ আসনে ময়মনসিংহ সদর আসনের সাথে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন যুক্ত করা হয়েছে।
ধর্মপাশা, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনে নতুন সৃষ্ট মধ্যনগর উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। জগন্নাথপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৩ আসনের দক্ষিণ সুরমার নাম পরিবর্তন করে সরকার শান্তিগঞ্জ উপজেলা করায় ওই নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।
সিলেট সিটি করপোরেশন ও সিলেট সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসনের সদর উপজেলার একটি ইউনিয়ন এর তিনটি ইউপির আংশিক সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভূক্ত হওয়ায় এ আসনে পরিবর্তন হয়েছে।
এক্ষেত্রে খসড়ায় সিলেট-১ আসনে সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ২৭ নম্বর এবং ৩১ থেকে ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠন করা হয়েছে। একই কারণে সিলেট-২ আসনে পরিবর্তন হয়ে সিটি করপোরেশনের ২৮ থেকে ৩০ ও ৪০ থেকে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হয়েছে। কক্সবাজার সদর ও রামু উপজেলা আসন নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৩ আসনের সদর উপজেলা ভেঙ্গে ঈদগাঁও নামে নতুন আরেকটি উপজেলায় করায় এই নামটিও যুক্ত হয়েছে ইসির খসড়া সীমনায়।