আখতারুজ্জামান আটকের ঘটনায় শাহমাহমুদপুরে তোলপাড়

চাঁদপুর খবর রির্পোট : বিধবা নারীকে ধর্ষণ মামলায় চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বিতর্কিত আলোচিত নেতা আখতারুজ্জামান পাটওয়ারীকে আটকের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় ।

এ ঘটনা জানার পর শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম নেয় ।দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকায় গতকাল এই ঘটনা প্রকাশিত হলে বিশেষ করে মহমায়া বাজারে আলোচনা ঝড় বইতে থাকে । স্টল থেকে নিমিষেই দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকা শেষ হয়ে যায় । অনেকেই পত্রিকা অফিসে ফোন করে সংবাদ প্রকাশ করায় কৃতপক্ষকে স্বাগত জানায় ।

অভিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ার বিতর্কিত আলোচিত নেতা আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী আটকের পর এলাকায় নেতা-কমীরা মিষ্টি বিতরণ করে । সেই সাথে তাকে পদ থেকে অবিলম্বে বহিস্কারের দাবী উঠছে । এ ব্যাপারে সদর উপজেলা আওয়ামীলীগ ও জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের নিকট এই দাবী জানায় এলাকাবাসী ।

জানা গেছে, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী ক্ষমতা অপব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদে নানা সুবিধা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে । ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান নান্টুকে নানা সুবিধা দিতে চাপ প্রয়োগ করতেন ।

জানা গেছে,মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) বিধবা নারীকে ধর্ষণ মামলায় চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী গাজীপুর আদালত থেকে মামলার জামিন চাইতে গেলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জয়নারায়পুর এলাকার মৃত আজিজ শেখের স্ত্রী সাহাব বানু মিতু (৪২) বাদী হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের আলুমুড়া এলাকার আঃ বারী পাটওয়ারীর ছেলে ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে গাজীপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। সি আর মামলা নং- ১২৮০/২২।

মামলায় তিনি উল্লেখ করে বলেন, গত বছরের পহেলা এপ্রিল বাদী সাহার বানু মিতু তার পিতার বাড়ি হইতে লঞ্চ যোগে ঢাকায় যাওয়ার পথে আসামী আখতারুজ্জামান পাটওয়ারীর সাথে পরিচয় হয়। আলাপ আলোচনার এক পর্যায়ে আসামীর এক প্রশ্নের জবাবে বাদী সাহার বানু মিতু জানায় তার স্বামী মারা গিয়েছে।

এবং শ্রীপুর থানার রাজবাড়ী ইউনিয়নের জয়নারায়পুর গ্রামে টিনশেড ঘর করিয়া ৩ মেয়েকে নিয়ে বসবাস করেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর সে কিভাবে চলে এবং দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ কিনা জানতে চান আসামী আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী।

সাহার বানু মিতুর এক প্রশ্নের জবাবে আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী জানায়, এক সন্তান রেখে তার স্ত্রী মারা যায়। এমন সময় আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী ঐ নারীর নিকট হইতে মোবাইল নম্বর নিয়ে দু’জনের মধ্যে কথোপকথনের এক পর্যায়ে ৫ এপ্রিল সাহার বানুর গ্রামের বাড়ি জয়নারায়পুরে বেড়াতে যান তিনি। এবং ১০ এপ্রিল তাদের বিবাহের তারিখ নির্ধারণ করে চলে আসেন।

নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী কয়েকজন মেহমান ও হাবিজ উদ্দিন হুজুর নামে এক মাওলানাকে নিয়ে বিকাল ৩টায় সাহার বানুর বাড়িতে যান এবং সাহার বানু মিতুর বান্ধবী ও তার বন্ধবীর জামাই কামাল হোসেন ও তার স্ত্রীসহ আশেপাশের লোকজনের উপস্থিতিতে সামাজিকভাবে বিবাহ পড়ানো হয়। এবং সবাই চলে গেলে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত তারা দুজনে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে সংসার করে আখতারুজ্জামান নিজ বাড়ি চাঁদপুরে চলে আসেন।

এর কয়েকদিন পর ২০ এপ্রিল আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী তার স্ত্রী সাহার বানু মিতুর বাবার বাড়ি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে যান এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ স্ত্রীর অন্যান্য আত্মীয়স্বজনের সাথে পরিচয় হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী জানায়, এই বিয়েতে ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে ২ লক্ষ টাকা উসুল দিয়া বিবাহ করা হয়েছে। তবে এখনো কাবিন রেজিস্ট্রি হয় নাই।

এদিকে তাদের দাম্পত্য জীবনে সাহার বানু মিতুর ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেলে ৩০ জুন তার স্বামী ঔষধ সেবন করিয়ে ঋতুস্রাব পূণরায় নিয়মিত করেন। পরে ১০ জুলাই রাতে তারা আবার গাজীপুরের শ্রীপুরে চলে যায়। সাহার বানু মিতু আরো জানায়, তার স্বামী তাকে ঘুমের ঘোরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা চেষ্টা করলে বিষয়টি বুঝতে পেরে তার ডাক চিৎকারে ২ সন্তানসহ জোড়াজুড়ি করলে সাহার বানুকে মারধর করেন আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী।

খবর পেয়ে সাহার বানুর ভাই তাকে চাঁদপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা নেন। তিনি আরো জানায়, এর মাঝে আসামী আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী তার নিজ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ৩ লক্ষ টাকা ঋণের কথা বলে তার স্ত্রী সাহার বানুর কাছ থেকে ১০ মে ৩ লক্ষ টাকা নিয়ে ৩০ জুলাই উক্ত টাকার বিষয়টি অস্বীকার করে সাহার বানু মিতুকে মোবাইল ফোনে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।

এ ঘটনায় শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারীসহ তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের অবগত করেও কোন উপায় না পেয়ে গাজীপুর বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করলে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের জন্য দিলে পিবিআই উক্ত মামলার তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর। গত ২ জানুয়ারি শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও শুনানি হয়েছে ৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার।

এদিন ইঞ্জিনিয়ার আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী জামিন চাইতে গেলে আদালত তা না-মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় আখতারুজ্জামান পাটওয়ারীর নিজ ইউনিয়নসহ চাঁদপুরের প্রতিটি ইউনিয়ন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার জড় বইতে শোনা গেছে।

এদিকে আখতারুজ্জামান পাটওয়ারী এর পূর্বে চাঁদপুর সদর উপজেলার এম এম নুরুল হক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মিজি বাড়িতে বিয়ে করেন এবং দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ও সন্তানরাসহ চাঁদখার বাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন।

সম্পর্কিত খবর