হাইমচরে কলা পাকাতে দেয়া হচ্ছে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ

বিশেষ প্রতিনিধি : হাইমচর উপজেলার সবকটি বাজারে কলা পাকাতে দেয়া হচ্ছে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ। ফলে কলার বাহ্যিক রং ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হলুদ ও আকর্ষণীয় আকার ধারণ করে। বিষাক্ত যেসব কেমিক্যাল মিশানো হচ্ছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

উত্তর আলগী ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড চৌধুরী বাজারের কলার ব্যাবসায়ী হানিফ ছৈয়াল, আলী হোসেন রাড়ি, সিদ্দিক বেপারী সহ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ক্যালসিয়াম কাবার্ইট দিয়ে কলা পাকানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আলগী বাজারে ৩ টি আড়তের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায়৫ লক্ষ টাকার কলা আমদানি করা হয়।

এসব কাচা কলা টাঙ্গাইল, যশোর, খাগড়াছরি ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয় বলে জানা গেছে।এ সব কলা বালতির পানিতে ভিটামিনের নামে কার্বাইট সহ বিভিন্ন রাসায়নিক পর্দাথ মিশিয়ে ঐ পানিতে আস্ত কলার ছড়ি ডুবানো হয়। পরে কলার রং পরিবর্তন হওয়ার পর ঝলম, আড্ডা, গাজীর বাজার, রায়ের বাজার, আলগী বাজার, তেলিমোড়, জনতা বাজার, চরভৈরবী, আমতলী, শাহেবগঞ্জ, বাংলা বাজার ও চাঁদপুর সদরের মদিনা মার্কেট, সহ বিভিন্ন গ্রামে গঞ্জের বাজারের দোকানী ও হকারদেরমাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হয়।

বাজারগুলো ছাড়াও এলাকা ভিক্তিক কলার দোকান রয়েছে উপজেলাজুড়ে। এসব কলার দোকানে প্রতিদিন কলা পাকানো এবং কলার রং আকর্ষণীয় করার জন্য কার্বাইড বা কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ মেশানো হচ্ছে। এসব বাজারে যেসব কলা বিক্রি করা হচ্ছে তার শতভাগ কলাই বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। খুব তাড়াতাড়ি যাতে এসব কলা পেকে যায় তাই ব্যবসায়ীরা এই কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকে।

সূত্র জানায়, ক্যালসিয়াম কার্বাইড এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থ। এটি এক ধরণের যৌগ যা বাতাসে বা জলীয় সংস্পর্শে এলেই উৎপন্ন করে এসিটিলিন গ্যাস। যা ফলে প্রয়োগ করলে এসিটিলিন ইথানল নামক বিষাক্ত পদার্থে রূপান্তরিত হয়।
বড় সমস্যা হচ্ছে, কার্বাইড বিক্রিয়ায় কলাকে কাঁচা থেকে পাকা অবস্থায় নিয়ে আসে। কলা কাঁচা, কিংবা আধাপাকা অবস্থায় থাকুক না কেন কিছু কিছু কলার বাইরে এবং ভেতরে কেমিক্যালের প্রভাব এতটাই ঘটে যে, ভেতরে বাইরে ফলটির রঙে ও স্বাদে স্বাভাবিকভাবে পাকা কলার মতো হয়ে যায়। কোনো কোনো কলার বেলায় কেবল তার বাহ্যিক বর্ণ আকর্ষণীয় হয়ে পড়ে।

স্বাভাবিক পাকা কলার মতো দৃষ্টি নন্দন টকটকে হলুদ বর্ণ দেখে মানুষ আগ্রহ করে এসব কৃত্রিমভাবে পাকানো কলার পছন্দ করে কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো তিনি হয়তো জানেন না যে, তিনি টাকা দিয়ে বিষ কিনলেন। এতে একদিকে যেমন কলার পুষ্টি গুণাগুণ নষ্ট হয় অপরদিকে কলা খেতে বিস্বাদ, পানসা, শক্ত ও তেতো স্বাদযুক্ত মনে হয়।কৃত্রিমভাবে পাকানো ফল চেনার উপায়, কলার ফলত্বক হলুদ বর্ণের থাকলেও কান্ডের অংশ গাঢ় সবুজ রঙের থাকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভোক্তা অধিকার রক্ষায় ভোক্তা আইন আরও কঠিনভাবে প্রয়োগের নিমিত্তে বিভিন্ন সংবাদপত্র, রেডিও, টিভিতে ব্যাপক প্রচার করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুধু কলা নয়, ফল, শাকসবজি ও খাদ্যদ্রব্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ রোধের ব্যবস্থা নিতে হবে। সার্বিকভাবে ভোক্তা, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সচেতনতার মাধ্যমেই আমরা ভেজালমুক্ত ফলমূল খেতে পারবো এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে।

এ বিষয়ে একাধিক আড়ৎদারের সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা কলায় ভিটামিন দেই। এতে কলার রং সুন্দর হয় এবং কলা দ্রুত পাকে।

এ ব্যাপারে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা অফিসার,ডাঃ একেএম আব্দুল্লা আল মামুন তিনি
বলেন, কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা অথবা যে কোন ফল খেলে মানুষ দীর্ঘমেয়াদি নানা রকম রোগে বিশেষ করে বদহজম, পেটেরপীড়া, পাতলা পায়খানা, জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট অ্যাজমা, লিভার ও কিডনি নষ্ট হওয়াসহ ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়।

এছাড়া মহিলারা এর প্রভাবে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে। শিশুরা বিষাক্ত পদার্থের বিষক্রিয়ার ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অসাধু কলার ব্যাবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন হাইমচর উপজেলাবাসী।

একই রকম খবর