সাইদ হোসেন অপু চৌধুরী : দেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র বড়স্টেশন মোলহেড বেড়াতে গিয়ে লাইসেন্স বিহীন ছবিয়ালদের দৌড়াত্মে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন পর্যটকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিনোদন স্থানটিতে অবৈধ ফটোগ্রাফারদের সংখ্যা প্রায় ৩০জন। এরা অরজিনিয়াল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফটোগ্রাফার নয়। তারা একটি ডিএসএলআর পুঁজি করে বিভিন্ন অপরাধ করে ফেলে। কেননা তারা লাইসেন্স বিহীন এবং তাদের ডাটাবেজও নেই। স্থানীয় এক ছাত্রলীগ নেতার ছত্রছায়ায় তারা এই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছেন।
পর্যটকদের এ চাহিদাকে পুঁজি করে চাঁদপুর বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র ও মিনি কক্সবাজারে দিনদিন বাড়ছে ছবিয়ালদের সংখ্যা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ছিন্নমূল ও অনভিজ্ঞ কিছু কিশোর স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় সৈকতে ফটোগ্রাফি করছে। এরমধ্যে অনেকেরই ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতাতো নেই বরং আদব-কায়দারও কোন বালাই নেই।
অভিযোগ রয়েছে পর্যটকদের দেখে ফটোগ্রাফাররা ছুটে আসেন ছবি তুলে দেওয়ার জন্য। পর্যটক না করে দিলেও তাঁরা কিছু ছবি তুলে দেওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন। প্রতিটি ছবির বিনিময়ে তাঁরা পাঁচ টাকাকে অনেক সামান্য বলে উপস্থাপন করেন।
পর্যটকেরা ভাবেন, পাঁচ টাকাই তো, এ তেমন কিছুই নয়। এভাবেই পা দেন ফটোগ্রাফারদের ফাঁদে। ছবি তোলার সুযোগ পেয়ে একের পর এক ছবি তুলতে থাকেন ফটোগ্রাফার। ছবি তোলা শেষে যখন জানতে চাওয়া হয় ছবির সংখ্যা, সেই সংখ্যা শুনে যেন রীতিমতো চোখ কপালে উঠে যায় পর্যটকদের। আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁরা তুলে ফেলেন ৫০০ থেকে ৬০০ ছবি, যার মূল্য দাঁড়ায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।
ফটোগ্রাফাররা সব ছবি নেওয়ার জন্য পর্যটকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। পর্যটকেরা সব ছবি নিতে না চাইলে তাঁরা ধমক দেন। একই ছবি একাধিকবার থাকায় বেছে বেছে ছবি নিতে চাইলে ফটোগ্রাফাররা জুড়ে দেন আরেক শর্ত। বেছে বেছে ছবি নিলে প্রতিটি ছবির বিনিময়ে পরিশোধ করতে হবে দশ টাকা করে। এতে পর্যটক পড়েন আরেক ফাঁদে। ছবি বাছাই করল কি করল না, দু-চারটি ছবি ডিলিট করে তাঁরা তখন দাবি করেন তার থেকে আরও বেশি টাকা। পর্যটক এত টাকা দিতে রাজি না হলে তখন রীতিমতো তাঁদের সঙ্গে পর্যটকদের কথা-কাটাকাটি হয়। এই হলো বর্তমান পর্যটনকেন্দ্রের চিত্র।
সাম্প্রতিক ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কবিতা আক্তার বলেন, চাঁদপুরের এই পর্যটন কেন্দ্রের নাম অনেক শুনেছি। কলেজ থেকে বন্ধুরা মিলে এখানে আসলাম। ঘুরতে ঘুরতে দেখলাম ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে অনেক ফটোগ্রাফার পর্যটকদের ছবি তুলছে দিচ্ছেন। আমরাও ছবি তুলিয়ে নিলাম। সেই ফটোগ্রাফার নির্দিষ্ট ছবির চেয়ে বেশি ছবি তুলে আমাদের কাছে দুই হাজার টাকা দাবি করছে। আমরা আত্মসম্মানের ভয়ে ফটোগ্রাফার আনোয়ারকে ২’ হাজার টাকা দিয়ে সেখান থেকে সটকে পরি।
এবিষয়ে ব্র্যান্ডিং জেলা ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের একমাত্র পর্যটক কেন্দ্র বড় স্টেশন মূলহেডে পর্যটকরা যাতে হয়রানি না হয় সেই লক্ষ্যে পেশাদার ফটোগ্রাফার চিহ্নিতকরণ ও পর্যটক হয়রানি রোধে ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নিতে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, পৌর মেয়র, স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন পর্যটকর ও স্থানীয় সচেতন মহল।