শাহমাহমুদপুরে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো

মাসুদ হোসেন : চাঁদপুর সদর উপজেলার ৪নং শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের দাসেরগাঁও গ্রাম। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে জমজমিয়া খাল।

তার ওপর কাঠ বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকোটি এখন এক আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকাবাসীর কাছে। স্বাধীনতার পর থেকে একটি সেতু নির্মাণের বিষয়ে বারবার প্রতিশ্রুতি মিললেও এর বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি ৫০ বছরেও।

তাই দুর্ভোগ সঙ্গী করে ভাঙা কাঠ বাঁশের সাঁকোতেই দিন পার করছেন এই গ্রামসহ আশপাশের মানুষ। শিক্ষার্থীদের জন্য মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে এ সাঁকো।

সাঁকোটি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পারাপার করা গেলেও বর্ষাকালে ভরা খালে এটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিকল্প উপায় না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাঠ বাঁশের এই ভাঙা সাঁকো দিয়েই পারাপারে বাধ্য হন শিশু থেকে বৃদ্ধরা। এই সাঁকো থেকে পানিতে পড়ে মৃত্যু হওয়ারও ঘটনা ঘটেছে অনেক। আহত হয়েছেন অসংখ্য শিশু বৃদ্ধরা। খুইয়েছেন লাখ লাখ টাকা।

মরণ ফাঁদ নামে পরিচিত এ বাঁশের সাঁকোটি শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের পূর্ব লোধেরগাঁও ও দাসেরগাঁও গ্রামের সীমান্তবর্তী জমজমিয়া খালের ওপর। খালটির উত্তর পাড়ে পূর্ব লোধেরগাঁও ও দক্ষিণ পাড়ে দাসেরগাঁও গ্রামের বেপারী বাড়ি। এই বাড়িতে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫ শতাধিক জনসংখ্যার বসবাস। এছাড়াও আশপাশের লোকজনও এই সাঁকো দিয়ে চলাচল করে আসছে প্রতিনিয়ত।

জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে এখানে কোনো সেতু নির্মাণ করা হয়নি। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। কিন্তু তারপরও টনক নড়েনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। সেতু নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব ডা. দীপু মনি এ বাড়ির বাসিন্দাদের আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস এখনো পূরণ হয়নি এ গ্রামের মানুষের। বেপারী বাড়ির অধিকাংশ মানুষই দিনমজুর। তাদের তোলা চাঁদা দিয়ে প্রতি বছর নড়বড়ে এই সাঁকোটি মেরামত করে যাচ্ছেন।

এ সাঁকো দিয়ে পার হওয়ার সময় কথা হয় এ বাড়ির কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, আমাদের এ বাড়িতে প্রায় পাঁচ শতাদিক মানুষের বসবাস। এই সাঁকো থেকে পড়ে অনেকেই মারা গেছেন।

আহতও হয়েচেন বহু সংখ্যক মানুষ। এই বাড়িতে কোন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে একটি ফায়ার সার্ভিস আসতে পারে না। মুমূর্ষু রোগীদের জরুরী হাসপাতালে নিতে একটি এ্যাম্বুলেন্স আসতে পারে না। লাশবাসী খাট নিয়ে এপাড় ওপাড় যাওয়া না।

শিশু শিক্ষার্থী কিংবা বৃদ্ধরা চলাচল করতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। তারপরও আমরা আমাদের এমপি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সেই ২০১৮ সালের নির্বাচনী আশ্বাসে এখনো আছি। তাই ওনার কাছে এখানে একটি সেতু নির্মাণ করে দিতে সর্বাত্মক সহযোগিতা কামণা করছি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির হোসেন রনি বলেন, শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের দাসেরগাঁও বেপারী বাড়ির এই সাঁকোটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

এখানে একটি সেতু নির্মাণে বেপারী বাড়িসহ এ এলাকার মানুষের প্রাণের দাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের কাছে আমি এলাকাবাসীর হয়ে অনুরোধ করবো, এখানে একটি সেতু নির্মাণ করে তাদের প্রাণের দাবীটুকু বাস্তবায়ন করা হোক।

শাহমাহমুদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান নান্টু পাটওয়ারী বলেন, এই বাড়ির লোকজন আসলেই অবহেলিত। তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে সেতুটি নির্মাণ হওয়া খুবই প্রয়োজন। এর আগে একবার হওয়ার কথা ছিল।

পরে কেন হয়নি তা আমার জানা নেই। তবে এই সেতুটি আমাদের কাছে তালিকাভুক্ত। সেতুটি নির্মাণে চলতি পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, সাঁকোটির এ স্থানে একটি সেতু নির্মাণ করার জন্য ২০২০ সালে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ১৫ মিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের এখতিয়ার না থাকায় সেটি আর হয়নি।

সম্পর্কিত খবর