ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাব এর অবদান ও অর্জন

চাঁদপুর খবর রির্পোট: চাঁদপুরে কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারীতে ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাব এর অবদান ও অর্জন এবং চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে চাঁদপুর শহরের কদমতলাস্থ ডাঃ দীপু মনি এমপির বাসভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন
করা হয়।

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি।
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদের সভাপতিত্বে ও কলেজের প্রভাষক ডাঃ আওলাদুজ্জামানের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তেলোয়াত, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর উপস্থিত সকলের সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান ,জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মিলন মাহমুদ বিপিএম-বার, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, ঢাকা বারডেম হাসপাতালের বিশিষ্ট সার্জন ও ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ট্রাস্টি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু,চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েল।
এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান,সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেন,বিএমএ ও স্বাচিপ জেলা সভাপতি ডাঃ মোঃ সৈয়দ মোঃ নুরুল হুদা টিপু ও বিএমএ চাঁদপুর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুননবী মাসুম।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (কমিউনিটি মেডিসিন) ডাঃ নারায়ন চন্দ্র দাশ।
বক্তব্য রাখেন ভাষাবীর এমএ ওয়াদুদ ইনচার্জ ও চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ মোঃ খালেদ মোশাররফ হোসেন।

ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাবের সেবা কার্যক্রম বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন কনসালট্যান্ট মোঃ মেহেদী হাসান রুমী।

শিক্ষকদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক (চক্ষু) ডাঃ মোঃ আব্দুল মোতালেব ও সহকারী অধ্যাপক(মেডিসিন) ডাঃ মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম পাটওয়ারী।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, তাহসিন রহমান, রুবাইয়া তাসনিম উর্বী,সাইদুল ইসলাম, আরদিন জাহান মিতুয়া,লামিয়া নওরীন,মাহিমা বিনতে মালেক,মোঃ নোম্ন শরীফ ও সৌরভ হাসান। প্রধান অতিথির উদ্দেশ্যে পাঠ করেন তাসনিম তাবাসুম আদিবা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। আলোচনা শেষে ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাবের মাধ্যমে সংকট ময় মুহূর্তে যারা কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা প্রদান করা হয় ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ মেমোরিয়াল ট্রাস্টের চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজ হবে এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চাঁদপুর এসেছিলেন এপ্রিলের ১ তারিখে আর নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। রাজনীতিতে যা হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসবেন তার আগমনে আমরা চাঁদপুরেকে সাজিয়েছি খুব সুন্দর করে। চাঁদপুর স্টেডিয়ামের জনসভায় লোকে লোকারণ্য। তার মধ্যে একটু বক্তব্য রাখতে হলো। প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তব্য দিবেন তখন আমার কাগজ রেডি ধরিয়ে দিতে হবে।

ওনি জানেন কাগজ নিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি। অন্য দাবির সাথে মেডিকেল কলেজের দাবিও দিয়ে দিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আপনাদের সংসদ সদস্য একজন ডাক্তার। ও যখন দাবি করেছে আমি চাঁদপুরে মেডিকেল কলেজ দিয়ে গেলাম। শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি মেডিকেল কলেজ হবে এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিল। আমি বলে বুঝাতে পারব না। ওই বছরই ৫০জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের। এখন ২’শজন শিক্ষার্থী এবং ৩০ জন শিক্ষক রয়েছে। এই কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে। সেই অবকাঠামো গড়ে তোলার জন্য মনোরম পরিবেশের জায়গা অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।

শিক্ষা মন্ত্রী আরো বলেন, করোনাকালীন সেই সময় সত্যিই আমরা একটা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ছিলাম। বাংলাদেশে সবচাইতে বেশি আক্রান্ত জেলার মধ্যে চাঁদপুর ছিলো। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে একটা টেস্টিং এর ব্যবস্থা করা হলো। প্রফেসর ডাক্তার বুদ্ধদেব দা বললেন আপা আমি সাহায্য করবো। আনুষঙ্গিক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে আমরা চাঁদপুরে ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ আরটি-পিসিআর ল্যাব স্থাপন করি। এই ল্যাবের মাধ্যমে শুধু চাঁদপুর নয় এ জেলার আশেপাশে অসংখ্য মানুষকে আমরা করোনার সংকটে এই সেবাটি দিতে পারলাম সেজন্য আমরা নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করি।

ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, আমরা যে মানুষের পাশে দাঁড়াবার অসীম ভালবাসা পেয়েছি। দীর্ঘদিন চাঁদপুরের জনগণ ভালোবাসা দিয়ে তাদের প্রতিনিধি হবার আমাকে সম্মান দিয়েছে কাজ করবার সুযোগ দিয়েছে। সেই মানুষের পাশে সংকটের মুহূর্তে দাঁড়াতে পেরেছি আমার জন্য পরম সৌভাগ্যের। আমার বাবা ভাষা বীর এমএ ওয়াদুদ সারা জীবন মানুষের দেশের সেবা করেছেন। তিনি বলতেন রাজনীতি মানে হচ্ছে মানুষের সেবা, দেশের সেবা। আমি সেই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। আমি এবং আমার বড় ভাই ডাক্তার জেআর ওয়াদুদ টিপু দু’জনই আমাদের কাছে রাজনীতি মানে একদম তাই এর বাহিরে আর কিছু নেই। করোনার সময় আল্লাহর রহমতে সেই কাজটি আমরা করতে পেরেছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ এই ল্যাব করার সময় প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরের জন্য ৩০ বেডের সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট এখানে দিয়েছে। তা না হলে অক্সিজেনের অভাবে রোগী মারা যাবে এবং মারা যাচ্ছে। তখন প্রধানমন্ত্রীর সাহস পেয়ে আমি আমার নির্বচানী এলাকার মানুষের জন্য করোনার আরটি-পিসিআর ল্যাব ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট করে ফেললাম। এটি করার কারণে গভীর সংকটকালে আমি আমার চাঁদপুরবাসীর এমনকি আশেপাশের জেলার মানুষকে সেবা দিতে পেরেছি। এজন্য আমি চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সকল চিকিৎসক স্টাফদের এবং জেলা স্বাস্থ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট যত মানুষ ছিলেন যারা অসম্ভব পরিশ্রম করেছেন সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আমাদের সহায়তা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই।

তিনি মেডিকেল কলেজের সকল শিক্ষার্থীদের শুভ কামনা করেন। সবশেষে উপস্থিত সবাইকে নিয়ে রাতের খাবার খান মন্ত্রী।

সম্পর্কিত খবর